বিরাটের ভারতের ইতিহাস সৃষ্টির জয় কিন্তু বোলারদেরই সৌজন্যে
বিপক্ষের ২০টি উইকেটের মধ্যে ১৪টি নিয়েছেন পেসাররা, ছ'টি উইকেট পেয়েছেন অশ্বিন
- Total Shares
বাঙালির শীতঘুম ভেঙে খেলা দেখার শখ অবশেষে সার্থক হল। শুধু বাঙালির কেন গোটা ভারতের। ভারতবাসীর।
রবিচন্দ্রণ অশ্বিনের বলটা যখন হ্যাজেলউডের ব্যাট ছুঁয়ে কে এল রাহুলের 'নিরাপদ' হাত দুটিতে আশ্রয় নিল তখন বিরাট কোহলিদের আর সামলানো যাচ্ছিল না। হাজার হোক, এই টেস্ট জিতে যে ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেলল বিরাটের ভারত। কয়েক হাজার মাইল দূরে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কলকাতার ক্রীড়াপ্রেমীরা অবশ্য সেই জয় চুটিয়ে উপভোগ করতে পারল না।
কলকাতায় তখন সকাল পেরিয়ে ক্রমশ দুপুর ঘনিয়ে আসছে। সোমবারের সকাল। তাই শহরবাসী তখন এক হয় কর্মস্থলে, না কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ফেলেছে। কিন্তু তাতে কী? আজকের সান্ধ্য আড্ডায় আর মঙ্গলবারের পাঁচ রাজ্যের বিধানসভার ফলাফল নয়, ভারত অস্ট্রেলিয়া টেস্ট ম্যাচ নিয়ে আলোচনা হবে। ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেলেছে বিরাটের ভারত। আর তাই নিয়েই আজ মশগুল থাকবে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। বাংলার থেকে মহারাষ্ট্র।
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে বিশ্বের একটি দেশেই ভারত কোনও দিনও টেস্ট সিরিজ জিততে পারেনি - অস্ট্রেলিয়ায়। এ যাবৎ অস্ট্রেলিয়াতে ভারতের সেরা পারফর্ম্যান্স ২০০৩-০৪ মরসুমে। প্রথম টেস্টে হেরে যাওয়ার বদনাম ঘুচিয়ে অধিনায়কের সৌরভের প্রথম ইনিংসে অনবদ্য শতরানের সৌজন্যে ব্রিসবেনের সবুজ উইকেটে টেস্ট ড্র করেছিল ভারত। দ্বিতীয় টেস্ট ডন ব্র্যাডম্যানের পাড়ায় অ্যাডিলেডে জিতে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাঠে প্রথম কোনও সিরিজে এগিয়ে যায় ভারত। তৃতীয় টেস্ট অস্ট্রেলিয়া জিতে যায়। আর, শেষ টেস্টে, সিডনিতে জয়ের অবস্থায় পৌঁছে গেল স্টিভ ওয়ের অনবদ্য ম্যাচ বাঁচানো ইনিংসের সৌজন্য সে বার কোনওমতে সিরিজ ড্র রাখতে পারে অস্ট্রেলিয়া।
টেস্ট জয় বোলারদের সৌজন্যে [সব ছবি: এপি]
অস্ট্রেলিয়ার মাঠে এ রকম কর্তৃত্ব নিয়ে এর আগে কোনও ভারতীয় দলই খেলতে পারেনি। যা পেরেছিল সৌরভের ভারত।
এই সিরিজের শুরুটাই তো একেবারে অন্যরকম। এই প্রথম অস্ট্রেলিয়ার মাঠে কোনও ভারতীয় দল প্রথম টেস্টেই জয় পেল।
অথচ প্রথম দিনে শুরুটা একেবারেই ভালো করতে পারেনি ভারত। দুই ওপেনার ও অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও পাঁচ নম্বর ব্যাটসম্যান অজিঙ্কে রাহানে দ্রুত বিদায় নিয়েছিল। এই অবস্থায় রোহিত শর্মা, ঋষভ পন্থ ও রবিচন্দ্রণ অশ্বিনকে সঙ্গে করে ভারতীয় ইনিংসের মেরামতি শুরু করেন তিন নম্বর নামা চেতেশ্বর পূজারা। মূলত, তাঁর ১২৩ রানের ইনিংসের উপর ভর করে ভারতের রান ২৫০-এ পৌঁছায়। দ্বিতীয়, ইনিংসের ভারতের ব্যাটিং অবশ্য অনেকটা ভদ্রস্থ। পূজারা ও রাহানের ব্যাটিং ভারতের রান সহজেই ৩০০র গণ্ডী টপকে দেয়।
কিন্তু টেস্ট জিততে হলে বিপক্ষের ২০টি উইকেট প্রয়োজন। আর ঠিক এই কাজটি সফল ভাবে করেছে ভারতীয় পেসাররা। সঙ্গে রবিচন্দ্রণ অশ্বিন। অস্টেলিয়ার ২০টি উইকেটের মধ্যে ১৪টি উইকেট পেসারদের। আর ছ'টি উইকেট অশ্বিনের। নিঃসন্দেহে, ভারতের এই ইতিহাস সৃষ্টি প্রকৃতপক্ষে বোলারদেরই হাত ধরে।
ভারত সমর্থক মাত্রেই এবার আর শীতভোরে বিছানা ছেড়ে উঠতে দ্বিধা বোধ করবেন না। আরও বড় ইতিহাসের হাতছানি যে অপেক্ষা করে রয়েছে। রিকি পন্টিংয়ের দেশ থেকে কি প্রথমবার কোনও টেস্ট সিরিজ জিতে ফিরতে পারবে ভারত?
মহম্মদ সামি, ইশান্ত শর্মা, যশপ্রীত বুমরা ও রবিচন্দ্রণ অশ্বিন ইতিমধ্যেই স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে দিয়েছেন।