আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে এখন এক নম্বরে, তবে বিরাটরা কোনও মতেই এই মুহূর্তের বিশ্বসেরা নয়
১৯৭০-৮০-র ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ১৯৯০-এ অস্ট্রেলিয়া বিশ্বসেরা ছিল, তারা যে কোনও অবস্থায় জিততে পারত
- Total Shares
সম্প্রতি শেষ হওয়া ইংল্যান্ড সফরে, ৪-১ সিরিজ হারের পর, ভারত এখনও আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিং অনুযায়ী এক নম্বর স্থানে থাকার যোগ্য কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
দেশের বাইরে হার ভারতীয় টিমের জন্য নতুন কোনও ব্যাপার নয়। ভারত, ইংল্যান্ডের মাটিতে এখনো অবধি সতেরোটার মধ্যে মাত্র তিনটে টেস্ট সিরিজ জিতেছে — শেষ বার ২০০৭ সালে রাহুল দ্রাবিড়ের অধিনায়কত্বে সিরিজ জিতেছিল ১-০ ব্যাবধানে, তার আগের দু'বার যথাক্রমে: ১৯৭১-৭২ ও ১৯৮৬, অজিত ওয়াদেকার ও দিলীপ বেঙ্গসরকারের অধিনায়কত্বে। ব্যাস, ওই শেষ।
ইংল্যান্ডের মাটিতে, ভারতীয় দলের যদিও বা তিনটে সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাতে সেরকম কোনো নজির এখনও পর্যন্ত নেই। বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন অধিনায়ক, তাদের সেরা দল নিয়ে পাড়ি দিয়েছিল ম্যান্ডেলা ও ব্র্যাডম্যানের দেশে, কিন্তু টেস্ট সিরিজ জয় আজও অধরা।
২০০৭-এর পর ১২ বার ইংল্যান্ডকে(৩ টেস্ট ২০১১, ৪ টেস্ট ২০১৪, ৫ টেস্ট ২০১৮), ওদের ঘরের মাঠে, হারানোর সুযোগ পেয়েছে ভারত, কিন্তু তার মধ্যে মাত্র দুইবার (২০১৪ & ২০১৮) সফল হয়েছে, বাকি নয় বার পরাজয় শিকার করতে হয়েছে।
কথা হলো ভারত কি তাহলে সত্যি এই মুহূর্তে বিশ্বের এক নম্বর দল হওয়ার যোগ্য?
বিরাটের ভারত কোনও মতেই এই মুহূর্তের বিশ্বসেরা টেস্ট দল নয় [ছবি: এএফপি]
সত্তর বা আশির দশকের ওয়েস্ট ইন্ডিজ হোক, বা নব্বইয়ের শেষ থেকে এই শতাব্দীর শুরুর অস্ট্রেলিয়া, এদের নামের সাথে 'ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন' তকমা শুরু থেকেই লেগে গিয়ে ছিল। এই ট্যাগ লাগার পিছনে অনেক গুলি কারণ ছিল - তাদের মধ্যে প্রধান এবং অন্যতম কারণ ছিল ওই টিমগুলি পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে গিয়ে, যে কোনোও পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ জেতার ক্ষমতা রাখত, এবং সেটা তারা বারংবার করেও দেখিয়ে ছিল।
দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ড সফরে ভারতীয় দল ম্যাচে জেতার সুযোগ পেয়েও তা হাতছাড়া করেছে। গত দুই দশকের তুলনায়, বর্তমান দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ড দল অনেকটাই অনভিজ্ঞ। বড় নাম বা ম্যাচ উইনার সেই অর্থে নেই। কিন্তু তা-সত্ত্বেও ভারতকে এক সুচাগ্র জমি না ছেড়ে, সিরিজ ছিনিয়ে নিয়েছে তারা।
দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ড সফরের আগে, ভারত যে যে টেস্ট সিরিজে জয় লাভ করেছে, তার অধিকাংশই ঘরের মাঠে খেলা হয়েছে। ঘরের বাইরে জয় বলতে গেলে শ্রীলঙ্কা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সঙ্গে, যাদের আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিং যথাক্রমে ছয় ও আট।
বিরাট কোহলি-রবি শাস্ত্রীর কথা মানতে হলে, গত দুটো সিরিজে, ন'টা টেস্টে সাতটাতে হারার পরও, পৃথিবীর শ্রেষ্ট টিম এটাই এবং গত ১৫-২০ বছরের ভারতীয় দলগুলোর মধ্যে বর্তমান দলটাই সেরা। এই কথাটা কতটা হাস্যকর, সেটা গত ১৫ বছরের পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়। মুখের কথা দিয়েই যদি টেস্ট সিরিজ জেতা যেত, গত কিছু বছরে সব কটা ট্রফি ভারতের ঝুলিতেই ঢুকত।
সত্তর আশির দশকের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নব্বইয়ের শেষের অস্ট্রেলিয়া প্রকৃত অর্থেই বিশ্বসেরা
ভারতীয় দলের ইংল্যান্ডে ব্যার্থ হওয়ার পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে।
প্রধান কারণ প্লেয়ারদের খারাপ ফর্ম ― টপ অর্ডার পুরোপুরি অসফল ― অধিনায়ক বিরাট কোহলি ছাড়া, ব্যাট হাতে কেউ রান পাইনি। এছাড়া, স্লিপ কর্দনে ক্যাচ ড্রপ এই সিরিজের একটা অন্যতম বড় ইস্যু। দলের অধিকাংশ ক্রিকেটারই সিরিজের বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ ফেলেছে।
দ্বিতীয় কারণ অবশ্যই গোটা সিরিজ জুড়ে টিম মানাজেমেন্টের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত ― বিশেষ করে পিচ ও ম্যাচের পরিবেশ ঠিক মতো অনুধাবন না করতে পারা ― যার জন্য সিরিজে অনেক সময় জেতার পরিস্থিতি তৈরি হলেও সেটা ভারত কাজে লাগাতে পারিনি।
প্রথম টেস্ট, বার্মিংহামে শুকনো উইকেটে, যেখানে বল স্পিন করছে, সেখানে বাড়তি ফাস্ট বোলার নিয়ে মাঠে নামল ভারত। পরের টেস্ট, লর্ডস। ওভেরকাস্ট কন্ডিশন। বাড়তি ফাস্ট বোলারের জায়গায়, দু'জন স্পিনারকে প্রথম একাদশে রাখল ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট।
এক মাত্র মুখ রক্ষা করেছে বোলাররা, প্রত্যেক টেস্টে নিয়ম করে ২০টি করে উইকেট নিয়েছে। শুধু ইংল্যান্ড নয়, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও ব্যাটসম্যানদের থেকে বোলাররা বেশি সফল।
এই টিম ফাস্ট আর বউন্সি পিচে খেলার জন্য যে তৈরি নয়, সেটা এই সফর থেকে প্রমাণিত। দুই মাস পরে অস্ট্রেলিয়া সফর। আমাদের বর্তমান টপ অর্ডার অস্ট্রেলীয় পেসারদের সামলাতে পারবে কিনা সেটা ভবিষ্যৎ বলবে, কিন্তু তার আগে যে দলে একটা বড় রদবদল প্রয়োজন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।