টি-২০ যুগে ক্রিকেটাররা বেশি সাহসী, তাই অনেক বেশি টেস্ট ম্যাচের ফয়সালা হচ্ছে
বিদেশে জিততে শেখালেও অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ পাননি সৌরভ, সেই সুযোগ এখন বিরাটের সামনে
- Total Shares
মেলবোর্ন টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে আট উইকেট হারিয়ে ১০৮ রান তুলে ডিক্লেয়ার করেছিল ভারত। অভিষেকে মায়াঙ্ক আগারওয়ালের ৭০-এর ঘরে রান, চেতেশ্বর পূজারার শতরান ও ভারতীয় বোলারদের, বিশেষ করে যসপ্রীত বুমরার, অনবদ্য বোলিং পাফর্ম্যান্সের পাশাপাশি বিরাট কোহলির এই সিদ্ধান্তও ভারতের তৃতীয় টেস্ট জয়ের পিছনে বিশাল ভূমিকা নেয়।
একটু তলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, এই সিদ্ধান্ত যত না বেশি বিরাটের তার চেয়েও অনেক বেশি বিরাট জমানার। টি-২০ যুগে ক্রিকেটাররা সাহসী হয়েছেন, তাঁরা জিততে চান। জয়ের জন্য ঝুঁকি নিতে ভয় পান না। ঝুঁকি নিয়ে যদি হারতে হয় হারব, কিন্তু তাই বলে জয়ের জন্য না ঝাঁপিয়ে রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ব না।
একটু খেয়াল করে দেখবেন। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্তও ভারত হারলে সমর্থকরা রে রে করে উঠতেন। ক্রিকেটারদের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠত কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। কিন্তু ২০১৮ সালে ভারত হারলেও স্বাভাবিক থাকে আসমুদ্রহিমাচল। তার মানে এই নয়, দেশের ক্রিকেট ক্রেজ কমেছে, বরঞ্চ উল্টোটা। কর্পোরেট, স্পনসর ও আইপিএলের যুগে ক্রিকেট ক্রেজ উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। তাও ভারত হারলে এখন আর ভেঙে পড়েন না ভারতীয় সমর্থকরা।
টি-২০ যুগে আরও সাহসী হয়ে উঠেছেন বিরাটরা [ছবি: রয়টার্স]
এর কারণ একটাই। সৌরভ, ধোনি বা বিরাটের ভারত 'পরাজিত হয়'। আজহার বা তাঁর পূর্বসূরিদের যুগে ভারত বিদেশের মাঠে রীতিমতো আত্মসমর্পণ করত। পরাজিত হওয়া আর আত্মসমর্পণ করার মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। এই ফারাকটাই বর্তমান ভারতীয় ক্রিকেট দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি করে চোখে পড়ছে।
শুধু ভারতীয় দল নয়, গোটা ক্রিকেট বিশ্বই এই ভরা টি-২০ যুগে সাহসী হয়ে উঠেছে। আর, এই 'সাহসী' ক্রিকেটারদের প্রভাবটা পড়ছে টেস্ট ক্রিকেটের উপরেও। আগের মতো ম্যাড়ম্যাড়ে ড্র খুব একটা বেশি দেখা যাচ্ছে না। টেস্ট ম্যাচেগুলোতে এখন ফলাফল বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। হয় এই দল জিতছে না হয়, প্রতিপক্ষ দল জিতছে।
তৃতীয় টেস্টের কথায় আসা যাক। ১০৮ রানে যখন ইনিংস ডিক্লেয়ার করল ভারত তখন অস্ট্রেলিয়া ৩৯৯ রান পিছিয়ে। হাতে দেড় দিনের বেশি সময় রয়েছে। চতুর্থ ইনিংসে ৪০০ রান তাড়া করে টেস্ট জেতার নজির নগণ্য হলেও এই নজির রয়েছে তো। তার মানে এই রান তাড়া করে টেস্টে জিততেই পারত অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু বিরাট কোহলির মানসিকতা ইতিবাচক। তিনি তাঁর বোলারদের উপর আস্থা রেখে কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে ফেলে দিলেন বিপক্ষকে। বার্তাটা পরিষ্কার - লড়াই করে জয় আদায় কর। নচেৎ আমার বোলারদের হাতে পরাজয় স্বীকার কর।
বিরাটের এই সিধান্তের পিছনে দুটি কারণ রয়েছে। এক ভারতীয় বোলারদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া গেল যাতে বিপক্ষের দশটি উইকেট তুলে টেস্ট জিতে নেওয়া যায়। দুই দলের দুই ওপেনার বোলারকে ব্যাট করতে পাঠানো হল না। তার মানে তাঁরা একেবারে তরতাজা হয়ে বোলিং আক্রমণ শুরু করতে পারবেন। তৃতীয় পেসার অর্থাৎ মহম্মদ সামি দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেছিলেন। কিন্তু মাত্র কয়েক মিনিটের জন্যে। খেলেছেন মাত্র তিন বল।
বিদেশের মাটিতে টেস্ট জিততে শিখিয়েছিল সৌরভের ভারত [ছবি: রয়টার্স]
মাত্র ৪৩ বলে ঝোড়ো ৩৩ রান করে ফেলছিলেন ঋষভ পন্থ। তিনি আউট হতেই ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দিলেন বিরাট। এই সিদ্ধান্তের ফল পাওয়া গেল রবিবার ভোরে। কাকভোরে টিভি চালিয়ে গোটা ভারত দেখতে পেল ২৬১ রানে শেষ হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। পার্থের দ্বিতীয় টেস্ট হারলেও মেলবোর্নের তৃতীয় টেস্ট জিতে সিরিজ ২-১ এ এগিয়ে রইল ভারত।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বিদেশে টেস্ট জিততে শিখিয়েছেন। সৌরভের ভারতের সবকটি প্রতিপক্ষের মাটিতেই দেশেই টেস্ট জিতেছে। কয়েকটি দেশ (যেমন ইংল্যান্ড বা পাকিস্তান) থেকে তো সিরিজ জিতে ফিরেছে।
এখনও পর্যন্ত অস্টলিয়ায় কোনও ভারতীয় দলই সিরিজ জিততে পারেনি। সেই সুযোগ এখন রয়েছে বিরাট বাহিনীর সামনে। পারবে কি সেই সুযোগের সদ্ব্যববার করতে? কথায় আছে ভাগ্য সর্বদাই সাহসীদের সহায় হয়। আর বিরাট বাহিনীর প্রতিটি খেলোয়াড়ই তো অসম সাহসী।
এখন সিডনি টেস্টের অপেক্ষায় দিন গুণছে ভারতবাসী।
ভারত সিরিজ জিতুক আর সিডনি টেস্ট জিতেই সিরিজ জিতুক - এই প্রার্থনা নিয়েই আবার এই শীতকালের কাকভোরে উঠে টিভির পর্দায় চোখ রাখবে আসমুদ্রহিমাচল।