ইতিহাস হোক বা নাই হোক, এই সফরে ভারতের প্রাপ্তি হয়েছে অনেকটাই

ওপেনার সমস্যা মিটেছে, বিদেশের মাঠে ফের স্বমহিমায় বিরাট কোহলির টিম ইন্ডিয়া

 |  3-minute read |   03-01-2019
  • Total Shares

অস্ট্রেলিয়ার সেই রামও নেই, সেই অযোধ্যাও নেই। স্টিভ ওয়ের অস্ট্রেলিয়াকে দেখুন। যে কোনও দলের আট নম্বর ব্যাটসম্যান যখন ব্যাট হাতে প্যাভিলিয়ন থেকে নেমে ২২ গজের দিকে হেঁটে যান বিপক্ষ দল স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে - 'যাক, বাবা এবার ব্যাটিং টেল শুরু হল'। কিন্তু স্টিভ ওয়ের সেই দলের ছ'নম্বর উইকেট পতনের পর ব্যাট করতে নামতেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। তৎকালীন ক্রিকেট দুনিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান।

তুলনায় অস্ট্রেলিয়ার এই টিমটা অত্যন্ত সাদামাটা। তাই বলে নিজেদের দেশে অস্ট্রেলিয়াকে তুচ্ছ করার কোনও মানে হয় না। যে কোনও টেস্ট দলের কাছে এখনও অস্ট্রেলিয়ায়ে সিরিজ খেলতে যাওয়া মাানে... যাকে বলে 'অ্যাসিড টেস্ট'। বিশ্বের তাবড় তাবড় দলকে যতই হারাও না কেন, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সাফল্য না পেলে সেই দলের যেন কোনও জাতই নেই যেন।

ভারতীয় দলের কাছে অস্ট্রেলিয়া সফরের গুরুত্ব আরও অনেক বেশি। হাজার হোক ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের দেশ থেকে এখনও অবধি কোনও দিনও সিরিজ জিতে ফিরতে পারেনি ভারত। সেরা পারফর্ম্যান্স বলতে ২০০৪ সালে সিরিজ ড্র করে ফিরতে পারা। সে বছর, একটা সময়ে সিরিজ জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল সৌরভের ভারত। কিন্তু শেষ টেস্টের শেষ দিনে সিডনিতে ক্রিকেট জীবনের শেষ ম্যাচে স্টিভ ওয় একটি অবিস্মরণীয় ইনিংস খেলে ভারতের জয়ের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ালেন। সিরিজ শেষ হল ১-১ ব্যবধানে।

তাই তো এবার বিরাট কোহলির ভারতের উপর দৃষ্টি রয়েছে আসমুদ্রহিমাচলের। এই সিরিজের শেষ টেস্টের আসর সেই সিডনিতেই বসেছে। ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন বিরাটরা। সিরিজের তৃতীয় টেস্টে রীতিমতো প্রতিপক্ষকে দুরমুশ করেছেন। সব মিলিয়ে মানসিক ভাবে বিপক্ষদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা বেশ ভালোই হয়েছে। আসমুদ্রহিমাচলের ধারনা, জিততে না পারলেও নিদেনপক্ষে এই টেস্ট ড্র হবে। আর ড্র মানেই ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়ে ফেলবে বিরাট কোহলির ভারত।

কিন্তু শুধু ইতিহাস সৃষ্টি বা ইতিহাসের হাতছানি নয়, এই অস্ট্রেলিয়া সফরটি থেকে ভারতীয় দলের আরও বেশ কিছু প্রাপ্তি ঘটেছে। আর, এই প্রাপ্তিগুলো স্বল্পকালীন নয়, বরঞ্চ দীর্ঘকালীন।

body_010319013036.jpgমায়াঙ্ক পৃথ্বীর ওপেনিং জুটি দেখতে অপেক্ষারত আসমুদ্রহিমাচল [ছবি: পিটিআই]

অনেকদিন ধরেই একটি ওপেনিং জুটি খুঁজছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল। একজন ওপেনার পাওয়া গিয়েছিল, অসম্ভব প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটার মুম্বাইয়ের পৃথ্বী সাউ। দুর্ভাগ্য, এই সফরের শুরুতে তিনি ছোট পেয়ে দেশে ফিরে আসেন। তবে চোট সারিয়ে দলে ফিরে তিনি আবার নিজের জায়গা পাকা করে নেবেন এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তিনি যে লম্বা রেসের ঘোড়া সে বিষয়ে সকলেই একমত।

প্রশ্নটা ছিল, পৃথ্বীর সঙ্গে ওপেনিং জুটি বাঁধবেন কে? উত্তর মিলল। মায়াঙ্ক আগারওয়াল। প্রথম দু'টি টেস্টেই অনবদ্য মায়াঙ্ক। বেঙ্গালুরুর এই ক্রিকেটারটিকেও লম্বা রেসের ঘোড়া বলে মনে করা হচ্ছে। অসম্ভব প্রতিভাবান। পৃথ্বীর সঙ্গে জুনিয়র ও বিভিন্ন পর্যায়ে খেলেছেন তিনি। তাই পৃথ্বীর প্রত্যাবর্তন আর মায়াঙ্ক পৃথ্বী জুটিকে দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছেন সবাই।

এই সফরে ভারতের দ্বিতীয় প্রাপ্তি বিদেশের মাটিতে আবার জয়ে ফেরা। ইংল্যান্ড ও বছরের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকায় একেবারে সুবিধা করতে পারেনি ভারতীয় ক্রিকেট দল। দলের পারফর্ম্যান্স নিয়ে বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়াতে বিরাটরা যে মেজাজে খেললেন তাতে সেই বিতর্ক আবার ম্লান হয়ে যেতে বাধ্য। বিদেশের মাটিতে আবার স্বমহিমায় ভারত।

body1_010319013133.jpgরাহুল দ্রাবিড়ের 'তিন নম্বর' আসনটি পূরণ করলেন চেতেশ্বর পূজারা [ছবি: রয়টার্স]

শুধু ওপেনার সমস্যা নয় এই সিরিজে ভারত একজন দীর্ঘকালীন সময়ের জন্য ওয়ান ডাউন ব্যাটসম্যান পেল। মাত্র বছরখানেক আগেই চেতেশ্বর পূজারাকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল 'স্লো ব্যাটিংয়ের' অভিযোগে। কিন্তু খরগোশ আর কচ্ছপের গল্পের মতো এ ক্ষেত্রেও ধৈর্য্যের জয় হল। রাহুল দ্রাবিড়ের যোগ্য উত্তরসূরী হিসাবে এই অস্ট্রেলিয়া সফরে নিজেকে মেলে ধরলেন চেতেশ্বর। বড় ধরণের অঘটন না ঘটলে রাহুল দ্রাবিড়ের মতো আগামী কয়েক বছর ভারতীয় ব্যাটিং অর্ডারের 'ওয়ান ডাউন' পজিশনটা তাঁর দখলেই থাকবে।

সব শেষে ভারতের প্রাপ্তি এক অনবদ্য পেস ব্যাটারি, যে ব্যাটারির তেজ ক্যারিবিয়ান পেস ব্যাটারির থেকেও বেশি বলে মনে হচ্ছে। অন্তত পরিসংখ্যান তো সে কথাই বলছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডে অনবদ্য খেলেছেন ভারতীয় পেসাররা। বলতে গেলে গোটা বছরেই তাঁরা অনবদ্য ছন্দে ছিলেন। কিন্তু বছর শেষের অস্ট্রেলিয়া সফরে যেন নিজেদেরকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন। নিঃসন্দেহে, এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা পেস আক্রমণটি রয়েছে বিরাট কোহলির তূণে। যে কোনও অধিনায়ক যার জন্য ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়তেই পারেন।

ভারতের অবশ্য তাতে কিছু আসে যায় না। ইতিহাস হোক বা নাই হোক, ইতিহাসের হাতছানির সিরিজে ভারতের প্রাপ্তিযোগ রয়েছে অনেকই।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ARPIT BASU ARPIT BASU @virusfound007

Arpit Basu is the Special Correspondent with the India Today Group’s fact check team. With more than one-and-a-half decade's experience in print and digital media, he has reported on aviation, transport, crime, civic and human interests issues. His sting operation on how precious Aviation Turbine Fuel, meant for Kolkata airport, was pilfered and sold in local market as ‘white kerosene’ received widespread acclaim. Arpit has worked with reputed media houses like The Times of India and Hindustan Times and had received letter of appreciation for reporting during the Phalin cyclone in Odisha in 2013.

Comment