বিশ্বকাপ ২০১৯: যে ৫টি কারণের জন্য অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সিরিজ ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ
ইংল্যান্ডের পরিবেশ পরিস্থিতি ভারতের থেকে অনেকটা ভিন্ন, তাই বিশ্বকাপের প্রস্তুতি এই দুই দেশে সেরে ফেলুক বিরাটরা
- Total Shares
এ বছরের ৫ জুন ইংল্যান্ডের সাউথাম্পটনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলবে বিরাট কোহলির ভারত। তার আগে ভারত আর মোট ১১টি একদিনের ম্যাচ ও দুটি টি-২০ ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে।
এই ১১টি একদিনের ম্যাচের একটি অস্ট্রেলিয়ায়, চলতি একদিনের সিরিজের শেষ ম্যাচটি। ৫টি নিউজিল্যান্ডের মাঠে। বাকি পাঁচটি একদিনের ম্যাচ ও দুটি টি-২০ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতে খেলবেন বিরাট কোহলিরা।
সব মিলিয়ে, এই অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সফরের বাকি ছটি ম্যাচ ভারতীয় দলের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচ হিসেবেই গণ্য হবে।
আসুন, দেখে নেওয়া যাক, কোন পাঁচটি কারণের জন্য এই দুটি সিরিজ বিরাটদের কাছে অতন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিদেশের পরিবেশ
বিশ্বকাপের আসর বসছে ইংল্যান্ডে। সেখানকার পিচের অবস্থা, আবহাওয়া ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ভারতের তুলনায় অনেকটাই ভিন্ন। বরঞ্চ, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে কিছুটা হলেও তুলনা চলে। তাই, পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারগুলো এই সিরিজেই সেরে ফেলতে হবে বিরাটদের।
ফেব্রুয়ারীর শেষ লগ্নে অস্ট্রেলিয়া ভারতে আসছে। পাঁচটি একদিনের ম্যাচ ও দুটি টি-২০ ম্যাচ খেলতে। সেই সিরিজের শেষ ম্যাচ ১৩ মার্চ। অর্থাৎ, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের আগে প্রায় মাস তিনেক প্রস্তুতির সুযোগ পাবে ভারত। প্রস্তুতি পর্বের কিছুটা সময় ভারত অবশ্য ইংল্যান্ডে কাটাবে। সেখানে বেশ কিছু প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে। কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচ আর একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের মধ্যে তফাৎ অনেক, প্রত্বিদ্বন্ধিতাও ওয়ান বেশি।
তাই এই দুটি সিরিজই যে আসন্ন বিশ্বকাপের জন্য ভারতের সেরা প্রস্তুতি সিরিজ হতে চলেছে, তা বলাইবাহুল্য।
ধোনি কি প্রস্তুত?
মহেন্দ্র সিং ধোনির জন্য এই দুটি সিরিজের গুরুত্ব অপরিসীম। একটা কথা হলফ করেই বলা যায় যে বিশ্বকাপের পর একদিনের ম্যাচে ধোনির সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা নিতান্তই কম। এখনই বিশ্বকাপ দলে ধোনির ঠাঁই পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়ে গিয়েছে।
সমালোচকদের অভিযোগ ধোনির আর সেই রিফ্লেক্স নেই। স্লগওভারে আট কী নয় রান তারা করে ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা নেই। ধোনির অনুগামীদের দাবি, ধোনির এখনও ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা রয়েছে। তার চাইতেও বড় ফ্যাক্টর, ধোনি দলে থাকলে বিরাট কোহলি বাড়তি বল পান। বিপদের সময় গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শটা তো এই দলে একমাত্র তিনিই দিতে পারেন।
শেষ বিশ্বকাপ খেলতে চলেছেন ধোনি। বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক বিলক্ষন জানেন, শেষ বিশ্বকাপ তিনি শুধুমাত্র 'পরামর্শদাতা' হিসেবে প্রথম একাদশে সুযোগ পেলে অপমানের আর শেষ থাকবে না। উইকেটরক্ষার পাশাপাশি, তাঁকেও রান করতে হবে। তাঁকেও ম্যাচ জেতানোর ইনিংস খেলতে হবে।
অর্থাৎ, তাঁকে বিশ্বকাপের জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হবে। আর, প্রস্তুতির জন্য অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মাঠে বাকি ছ'টি একদিনের ম্যাচের থেকে সেরা আর কীই বা হতে পারে।
বিপক্ষে যখন অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড
এই বিশ্বকাপের ফরম্যাটটা একটু অন্যরকম। অনেকটা ৯২ সালের অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের ধাঁচের। কোনও গ্রূপের বালাই নেই। মোট দশটি দেশ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করছে। লিগ পর্যায়ে প্রতিটি দেশ একে ওপরের বিরুদ্ধে ন'টি করে ম্যাচ খেলবে। এই পর্যায়ের সেরা চারটি দল সেমিফাইনাল খেলবে। আর, সেমিফাইনালের দুই বিজয়ী দল ফাইনালে মুখোমুখি হবে।
এই দশটি দেশের মধ্যে অপেক্ষাকৃত নতুন দুটি দল হল বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। এই দুটি দেশ যে কোনও সময় যে কোনও দেশকে হারাতে পারে। সুতারং আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। এই বিশ্বকাপে প্রতিটি দলের কাছে প্রতিটি ম্যাচই খুব গুরুত্বপূর্ণ।
বিরাটদের কাছে এই অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সিরিজের গুরত্ব অনেকটাই [ছবি: রয়টার্স]
সুতারং, ভারতের কাছে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ দু'টি অতন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিশ্বকাপের আগে এই দুটি দেশের বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজ দুটি নিঃসন্দেহে প্রস্তুতির জন্য বিরাটদের কাছে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
পান্ডিয়া-রাহুলের পরিবর্তে
টিভি শো'তে বিতর্কিত মন্তব্য করে যে কোনও ধরণের ক্রিকেট থেকে বাদ পড়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া ও কে এল রাহুল। তাঁদের জায়গায় অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো হয়েছে বিজয় শংকর ও শুভম গিলকে। বিশ্বকাপের আগে এই দুই ক্রিকেটারের নির্বাসন উঠবে কিনা কিংবা উঠলেও তাঁরা বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাবেন কিনা সে বিষয় কেউই নিশ্চিত নন।
সুতারং, বিশ্বকাপের জন্য একটি শক্তিশালী রিজার্ভ বেঞ্চ তৈরি রাখতে হলে এই দুটি সিরিজেই শংকর ও গিলকে পরখ করে নিতে হবে বিরাটদের। এই দুই ক্রিকেটারদের কাছেও এই দুটি সিরিজ অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। সুযোগ পেলে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বিশ্বকাপ দলে সুযোগ করে নিতে হবে।
পেসারদের পরীক্ষা
ইংল্যান্ডের মাঠে একেবারে গ্রীষ্মের শুরুতেই বিশ্বকাপের আসর বসছে। সুতারং, ওই পরিস্থিতিতে পেসার ও সুইং বোলারররা বাড়তি সুবিধা পাবেন।
এই ধরণের পিচের সঙ্গে পেসারদেরও একটা মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার থাকে। সেই সুবিধা ভারতীয় পেসাররা ভারতের মাটিতে পাবেন না। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কিছুটা হলেও পাবেন।
সুতারং, ভারতীয় পেসারদের কাছে বিশ্বকাপের শেষ সুযোগ হতে চলেছে এই দুটি সিরিজ।