বিরাটদের মেনু থেকে 'বিফ' বন্ধ ঠিক সিদ্ধান্ত: থাকুক মুরগির মাংস, মাছ, সব্জি ও ফল
ভারত ও অস্ট্রেলিয়ায় গ্রীষ্মকালে রেড মিট খেলে ফিটনেস লেভেল কমার আশঙ্কা
- Total Shares
তিনটি টি-২০ , ৪টি টেস্ট এবং ৩টি ওয়ান ডে - অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এমনই ক্রিকেট মেনু ভারতের। প্রতিবার অস্ট্রেলিয়া সফর নতুন কিছু চমক নিয়ে আসে, এবারটাও তার ব্যতিক্রম নয়। যে বিফ বার্গার বা বিফ কারি এতদিন ক্রিকেটাররা চেটেপুটে খেতেন এই সফরে নাকি তা নিষিদ্ধ! হঠাৎ হলটা কী?
প্রথমে জেনে নেওয়া যাক কেন বিফ বা গবাদি পশুর মাংস সকল খেলোয়াড়দের কাছে প্রিয়। রেড মিট বলতে আমরা ৩ ধরনের মাংস বুঝি- বিফ (গোরু ও মোষের মাংস), মাটন (পাঁঠা, দুম্বা ও খাসির মাংস), ও ল্যাম্ব (ভেড়ার মাংস)। যার মধ্যে বিফ সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার জগতে।
আসুন দেখে নিই ১০০গ্রাম বিফ থেকে আমরা কী কী পুষ্টি উপাদান পেয়ে থাকি:
পরিপোষক পদার্থ |
পুষ্টির মাত্রা ( প্রতি ১০০ গ্রামে) |
ক্যালরি |
২৫০ কিলোক্যালরি |
মোট স্নেহপদার্থ (ফ্যাট) |
১৫ গ্রাম |
সম্পৃক্ত স্নেহপদার্থ (স্যাচুরেটেড ফ্যাট) |
৬ গ্রাম |
পিইউএফএ |
০.৫ গ্রাম |
এমইউএফএ |
৭ গ্রাম |
ট্রান্স ফ্যাট |
১.১ গ্রাম |
কোলেস্টেরল |
৯০ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম |
৭২ গ্রাম |
পটশিয়াম |
৩১৮ গ্রাম |
মোট কার্বোহাইড্রেট |
-- |
প্রোটিন |
২৬ গ্রাম |
হাই বায়োলজিক্যাল ভ্যালু যুক্ত প্রোটিনের উপস্থিতির জন্যই প্রায় প্রত্যেক খেলোয়াড় তাঁর ফিটনেস লেভেল বাড়াতে এতদিন বিফ খেতেন। একটা সময় গ্রিক ম্যারাথন জয়ীকে পুরস্কার স্বরূপ গোরু প্রদান করা হত। বিফে উপস্থিত ১৫% স্নেহপদার্থ যারমধ্যে কিছুটা হলেও ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে যা শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগায়।
হাই বায়োলজিক্যাল ভ্যালুযুক্ত প্রোটিন বাড়ায় দেহে মাংসপেশীর পরিমাণ।। অ্যামাইনো অ্যাসিড হিসাবে উপস্থিত লিওসিন বাড়ায় মাসল- প্রোটিন সিন্থেসিস । এছাড়াও রেড মিটে আছে প্রচুর হিম বা আয়রন যা দেহে অতিরিক্ত শক্তির জন্য প্রয়োজনীয়। রেড মিটে উপস্থিত জিঙ্ক ও ভিটামিন বি১২ মাংসপেশীর কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। এতকিছু উপকারিতা সত্বেও কী হল যে একেবারে বন্ধ হয়ে গেল রেড মিট?
আজ থেকে ৫-৭ বছর আগের তুলনায় এখন ম্যাচের সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বেড়ে গিয়েছে। তাই ক্রিকেটারদেরও তাদের ফিটনেস লেভেল বাড়াতে হচ্ছে। রেডমিট নিয়মিত খেলে তাঁদের ওজন দ্রুত হারে বাড়তে থাকত, সেই বাড়তি ওজন কমাতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছিল এমনিতেই ভারতীয় আবহাওয়া ও অস্ট্রেলিয়ার গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া ওজন বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক তার সঙ্গে রেড মিট গ্রহণ ক্রমশ কমাচ্ছিল তাদের ফিটনেস লেভেল এবং চোট আঘাতের মাত্রাও ছিল ক্রমবর্ধমান।
এ ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে রেড মিট গ্রহণে দেখা যায় অ্যালঝাইমার সংক্রান্ত সমস্যা, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, বৃহদন্ত্রে ক্যান্সার, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর মতো মারণ অসুখও। সে সব কথাও মাথায় রাখতে হয়।
তাই আজ তাঁদের মেনুতে জায়গা করে নিয়েছে লিন মিট যাতে প্রোটিনের পরিমাণ রেড মিটের মতোই কিন্তু ফ্যাটের পরিমাণ অনেক কম এবং তন্তুর পরিমাণও বেশ বেশি। বর্তমান ভারতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা তাঁদের ফিটনেস সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন তাই এতদিন দলের যে জায়গাটা সবচেয়ে দুর্বল ছিল সেই ফিল্ডিং আজ গোটা বিশ্বের কাছে সমাদ্রিত হচ্ছে।
রেড মিটের পরিবর্তে আজ বিরাটদের মেনুতে জায়গা করে নিয়েছে লিন মিট [ছবি: এএফপি]
১০০গ্রাম মুরগির মাংসে আমরা প্রায় ১১৩ কিলো ক্যালোরি শক্তি পাই, যার মধ্যে প্রায় ২৬ গ্রাম প্রোটিন এবং ১গ্রাম ফ্যাট রয়েছে।
প্রত্যেক ক্রিকেটার এখন জোর দেন খাবারের মাইক্রো উপাদানের উপর। মুরগির মাংসে আছে প্রচুর জিঙ্ক, আয়রন, ভিটামিন বি৬ ,বি ১২ , ভিটামিন ডি। ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকায় অতিরিক্ত প্রোটিন শরীরকে করে তোলে পেশিবহুল, নির্মেদ। চিকেন ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বাড়ায়, ফলে হাড়ের শক্তি ও নায়াসিন বাড়ায় এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে।
এরপর আসি মাছের কথায়, যা বর্তমানে সাধারণ মানুষ থেকে ক্রিকেটার সবার কাছেই সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য। মাছের স্নেহপদার্থে থাকে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা, তিন ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড যা হার্ট ভালো রাখে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই ফ্যাটি ফিস যেমন স্যালমন বা হার্দিন, বর্তমানে ক্রিকেটারদের মেনুতে জনপ্রিয়। এ ছাড়াও ডিএইচএ, ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাসের মতো মাইক্রো উপাদানের উপস্থিতি বাড়ায় পেশির কর্মক্ষমতা।
১০০গ্রাম মাছে প্রায় ১৭গ্রাম প্রোটিন থাকে। স্নেহপদার্থের পরিমাণ খুব কম। তাই বিরাটদের মেনুতে বিফের পরিবর্তে মাছ এবং মুরগির মাংস জায়গা করে নিয়েছে। এর সঙ্গে ডিম, প্রচুর পরিমাণে তাজা শাকসবজি ও ফল তাঁদের ফিটনেস অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে।
পালটাচ্ছে সময়, পালটাচ্ছে ক্রিকেটারদের খাদ্যাভ্যাস।
আসছে বছরই তো একদিনের বিশ্বকাপ!