গৃহহীনদের বিশ্বকাপ থেকে ভবিষ্যতের সুনীল ছেত্রীরা উঠে আসতেই পারেন
নভেম্বরে মেক্সিকোয় হোমলেস ওয়ার্ল্ড কাপে খেলবে ভারত-সহ ৪৮টি দেশ
- Total Shares
গৃহহীনদের জন্য বিশ্বকাপ। অবাক হওয়া মতো কিছুই নেই। গত ১৬ বছর ধরে হয়ে আসছে এই বিশ্বকাপ। ২০০৩ সালে শুরু হয়েছিল। ২০১৫ সাল থেকে ইউরোপীয় ফুটবলের নিয়মায়ক সংস্থা উয়েফা ও বিশ্ব ফুটবলারদের সংগঠন ফিফরোও এই বিশ্বকাপের সঙ্গে অন্তরঙ্গ ভাবে যুক্ত। 'স্লাম সকার' নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভারতে এই খেলা প্রসারের জন্য দায়িত্বে রয়েছে।
এ বছর এই গৃহহীনদের বিশ্বকাপ আসর বসছে মেক্সিকোতে। গত বছর নরওয়ের ওসলোতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এবছরের বিশ্বকাপের দায়িত্ব পালন করছে মেক্সিকো। এই বিশ্বকাপে ভারত-সহ মোট ৪৮টি দেশ অংশ্রগ্রহণ করবে। এদের মধ্যে রয়েছে ফিফা বিশ্বকাপ খেলা ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রাজিল ও ক্রোয়েশিয়া।
দুটি বিভাগে ভাগ করা থাকে এই - পুরুষ ও মহিলা। খেলাগুলো ফোর-এ-সাইড হয়। প্রতিটি দলে ৮ জন খেলোয়াড় নির্বাচন করা যেতে পারে। ভারতের দুটি দলই তৈরি হয়ে গেছে। ১৬ জন পুরুষ ও মহিলা নিয়ে শিবির বসেছে নাগপুরে। দলের দায়িত্বে রয়েছেন স্কটিশ কোচ অ্যান্ডি হুক।
নাগপুরে শিবির চলছে গৃহহীনদের বিশ্বকাপ ভারতীয় ফুটবল দলের [ ছবি সৈজন্য: লেখক]
এখন প্রশ্ন উঠছে এই ধরণের বিশ্বকাপ থেকে এদেশের মূলস্রোতের ফুটবল কতটা লাভবান হতে পারে? না হওয়া কিছুই নেই বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় ইতিমধ্যেই এই মঞ্চ থেকে উঠে এসে চুটিয়ে মূলস্রোতের ফুটবল খেলেছেন।
গৃহহীনদের জন্য যে বাংলা মহিলা ফুটবল দল রয়েছে সেই দলের তারকা ফুটবলাররা সুস্মিতা বর্ধন। তিনি ইতিমধ্যেই মূলস্রোতের জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৬ দলে খেলে ফেলেছেন। এ বছরের বিশ্বকাপেও তার খেলার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময় জাতীয় দলের সঙ্গে ব্যস্ত থাকবে বলে সুস্মিতা শেষ পর্যন্ত গৃহহীনদের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না।
গৃহহীনদের বাংলা পুরুষ দলের ক্যাপ্টেন রবি মল্লিক এবার বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন। এই মঞ্চ থেকে উঠে এ সেই রবি কিন্তু কলকাতা লিগে বেশ কয়েকটি ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। করণ সুনাম বলে রবির মতো আরেকজন ফুটবলার রয়েছেন। তিনিও মূলস্রোতের ক্লাব ফুটবলে ইতিমধ্যেই খেলতে শুরু করে দিয়েছেন। বর্তমান ভারতীয় দলে এমন কয়েকজন তরুণ প্রতিভা রয়েছে যাঁদের নিয়ে আমরা যথেষ্ট আশাবাদী। ভবিষ্যতে মূলস্রোতের ফুটবলে জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করবার ক্ষমতা রাখেন এরা।
আসলে গৃহহীনদের ফুটবল থেকে ভালো ফুটবলার না আসার কারণ নেই। ২০১৫ সালের আদমসুমারি বলছে দেশের ১৭.৭ লক্ষ লোক এখনও গৃহহীন। আর ভারতে ফুটবল মূলত দরিদ্র পরিবারের ছেলে মেয়েরাই বেশি খেলে। সুস্মিতা বা রবির মতো ফুটবলাররা তৃণমূল স্তরে উপযুক্ত পারিশ্রমিক পান না। তাই তাঁরা চটজলদি পয়সা রোজগারের জন্যে 'খেপ' (পাড়ার টুর্নামেন্ট) খেলতে শুরু করে দেন। এতে খেলার ক্ষতি হয় কারণ খেপ খেলাগুলোতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পাওয়া যায় না। তাই এই খেপ খেলা ফুটবলারদের মধ্যে প্রতিভা খুঁজে বের করে আমরা তাঁদের এই গৃহহীনদের ফুটবলে নিয়ে আসি। এই মঞ্চে খেলার সুযোগ পেলে খাবার দাবারের অভাব হয় না, আবার পাশাপাশি উপযুক্ত প্রশিক্ষণও লাভ করতে পারে।
নভেম্বরে থেকে শুরু হতে চলছে এই গৃহহীনদের বিশ্বকাপ। কে বলতে পারে বিশ্বকাপ খেলতে চলা আট জন ছেলে ও আটজন মেয়ের মধ্যে থেকেই ভবিষ্যতের সুনীল ছেত্রীদের পাওয়া যাবে না?