এই বিশ্বকাপে জল্পনার তুঙ্গে ছিল বিশ্বকাপ ফ্যাশনও: সেরা জার্সি নাইজেরিয়ার
প্রযুক্তি, ডিজাইন ও নতুনত্বের ভিত্তিতে এই বিশ্বকাপের সেরা চারটি জার্সির মধ্যে থাকবে জাপানের জার্সিও
- Total Shares
"সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল..." যদিও ফুটবলের বিশ্ব-দরবার, বাঙালির কাছে এখন অধরা। তবুও বাঙালির প্রাণের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ফুটবল। ছোটবেলা থেকে এই গান শুনেই বড় হয়েছি। আমার জন্মের অনেক আগের মান্না দের এই গান বাবার দৌলতে আমার মুখস্ত।
এখনও এই গান কলকাতার অলি-গলিতে বেজে ওঠে প্রত্যেক চার বছর অন্তর, বিশ্বকাপের সময়, যখন কলকাতার প্রত্যেকটা আনাচে কানাচে এক একটা আস্ত দেশে পরিণত হয়ে ওঠে। কোথাও আর্জেন্তিনা, কোথাও ব্রাজিল, কোথাও ফ্রান্স তো কোথাও জার্মানি।
তাইওয়ানের হোটেলে বসে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখতে দেখতে এই সব মনে করছিলাম। এ বছর আবার প্রত্যাশায় ছাই দিয়ে ব্রাজিল, জার্মানি, আর্জেন্তিনার মতো দলগুলো ইতিমধ্যেই বিদায় নিয়েছে। রবিবার ফাইনালে মুখোমুখি হবে ফ্রান্স এবং এই প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে চলা ক্রোয়েশিয়া।
কোন দল জিতবে, কোন দল হারবে কিংবা কে পাবে বিশ্বকাপের সোনার বুট - এই সব আলোচনা ছাড়াও এ বছরের বিশ্বকাপে জল্পনার তুঙ্গে ছিল বিশ্বকাপ ফ্যাশনও। ফুটবলের কিট প্রস্তুতকারক সংস্থা নাইকে যখন নাইজেরিয়া দলের জার্সির ছবি অনলাইনে প্রকাশ করে তখন থেকেই ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয় বিশ্বকাপ ফ্যাশন জায়গা করে নিয়েছে।
শুধু নাইকে কেন এবছরের বিশ্বকাপে পিছিয়ে ছিল না অন্যান্য কিট প্রস্তুতকারীর সংস্থাগুলো। বিখ্যাত ডিজাইনারদের ডিজাইন করা ও আধুনিক প্রযুক্তির সংমিশ্রনে তৈরি জার্সিগুলো তারা পৌছে দিয়েছে বিশ্বকাপের অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর কাছে। আসুন, দেখে নেওয়া যাক প্রযুক্তি, ডিজাইন ও নতুনত্বের ভিত্তিতে এই বিশ্বকাপের সেরা চারটি জার্সি:
৪) জাপান
জাপানের জার্সি প্রস্তুতকারক সংস্থা অ্যাডিডাস। কথিত আছে, দ্বিতীয় বা তৃতীয় খ্রিস্টাব্দে চিনে হান সাম্রাজ্যে ফুটবলের আবিষ্কার হয়। চিন ফুটবলে পিছিয়ে থাকলেও পার্শ্ববর্তী দেশ জাপান এ বারের বিশ্বকাপে চমক দেখিয়েছে। জাপানের জার্সির ডিজাইনটি অনুপ্রাণিত জাপানের সামুরাই বর্ম থেকে। এটির বুননেও প্রাচীন জাপানি সাচিকো সেলাইয়ের প্রভাব দৃশ্যমান। নীল ফ্যাব্রিক বেসের উপর রুক্ষ সাদা সুতোর কাজ পুনর্বিন্যস্ত করা। কাঁধে সাদা লম্বা স্ট্রাইপ আর কলারের ধারে লাল রঙ জাপানের জার্সি এবারের বিশ্বকাপ ফ্যাশনকে এক অন্যান্য মাত্রায় নিয়ে গেছে।
৩) জার্মানি
এবারের বিশ্বকাপে অ্যাডিড্যাস আরও একটি অসাধারণ ডিজাইন করেছে - প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানির জার্সি। যদিও, এবার লজ্জাজনক ভাবে প্রথম রাউন্ডে বিদায় নিয়েছে জার্মানি, কিন্তু জার্মান জার্সিটি ছিল স্টাইল আর প্রযুক্তির অনবদ্য মিলন। একদিকে যেমন প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নত এই জার্সিটি শারীরিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে তেমনই আবার এর অনন্য ডিজাইন ১৯৯০ সালের অপ্রতিরদ্ধ পশ্চিম জার্মানির বিশ্বকাপের জার্সি থেকে অনুপ্রাণিত। সঙ্গে রয়েছে ফ্যাশনেবেল বিরল গ্রে স্কেল লাইন ডিজাইন আর চারটি তারা যা জার্মানির পূর্ব বিশ্বকাপ জয়ের সংখ্যা চিহ্নিত করে। তাদের সবুজ রঙের দ্বিতীয় জার্সিটিও বেশ ফ্রেস আর স্টাইলিশ।
২) ফ্রান্স
বিখ্যাত কিট প্রস্তুতকারক সংস্থা নাইকে ডিজাইন করেছে ফ্রান্সের ক্লাসি এবং স্টাইলিশ জার্সিটি। যে কোনও ফ্যাশন শো-তে এই জার্সি হয়ে উঠতে পারে ক্যাসুয়াল লুকের শো স্টপার। নীল রঙের এই জার্সির কলার পিছনে ঘাড়ের কাছে ফ্রান্সের তেরঙ্গা পতাকা রঙের পট্টি আর তার উপর এম্ব্রস করা দেশের জাতীয় নীতিবাক্য যার মানে স্বাধীনতা, সততা ভাতৃত্ব। ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যাতে এক জার্সির ওজন অন্য যে কোনও জার্সির তুলনায় ৫০ গ্রাম মতো ওজন কমিয়ে ফেলা হয়েছে। এতে শরীর অনেক হালকা থাকে আর বেশি সময় খেলার পরেও ক্লান্তি কম আসে। এর সঙ্গে আরও একটি প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি হয়েছে মাইক্রো লেজার ছিদ্র যা বায়ু চলাচল স্বাভাবিক করে শারীরিক তাপমাত্রা এবং ঘাম নিয়ন্ত্রণ করে। এদের দ্বিতীয জার্সিটি দূর দেখলে সাদা লাগলেও সামনে এলে বোঝা যায় ছোট ছোট নীল ও লাল রঙের আনুভূমিক নকশার কাজ রয়েছে।
১) নাইজেরিয়া
শুরুতেই বলেছিলাম এবারের বিশ্বকাপ শুরু আগেই নাইজেরিয়া টিমের জার্সি ফ্যাশন স্টেটমেন্টের এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে নাইজেরিয়ার এই জার্সির ডিজাইন অনুপ্রেরিত ১৯৯৪ সালের নাইজেরিয়া টিম থেকে যাকে বলা হত সুপার ঈগল। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছিল নাইজেরিয়া আর সেই টিমের ডাকনাম দেওয়া হয়েছিল সুপার ঈগল। সেই ঈগলের ডানার আদলে এবারের নাইজেরিয়া দলের জার্সির ডিজাইন করা হয়েছে। একদিকে গাঢ় সবুজের দ্বিতীয় জার্সি আর অন্যদিকে হালকা সবুজের সঙ্গে এর সাদা কালো দানার মেলবন্ধনের অসাধারণ ফ্রেস ডিজাইন সারা জাগিয়েছে গোটা ফুটবল দুনিয়াতে। এ বারের বিশ্বকাপে এই অন্যরকম নাইজেরীয় জার্সিটি যে সেরা সে নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
এ ছাড়াও এমন কয়েকটি দেশ আছে যাদের জার্সিতে বিশেষ নতুনত্ব না থাকলেও এরা অল-টাইম ক্লাসি। যেমন আর্জেন্তিনা ও ব্রাজিল। সাদা-নীল আর্জেন্তিনা ও ব্রাজিলের হলুদ ফুটবল বিশ্বের অতি প্রিয় রং।