ইংল্যান্ডের সহস্রতম টেস্টে ভারতের স্ট্র্যাটেজি কী হবে
বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দলের বিরুদ্ধে সহস্রতম টেস্ট খেলছে ইংল্যান্ড
- Total Shares
ইংল্যান্ড ১০০০ তম টেস্ট ম্যাচটি খেলতে নামছে বুধবার। এজবাস্টন ক্রিকেট গ্রাউন্ড, বার্মিংহামে। প্রতিপক্ষ - আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে পয়লা নম্বরে থাকা ভারতের বিপক্ষে। ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, প্রথম টেস্টের প্রথম দু'দিন নাকি ১০ হাজার আসন ফাঁকা পড়ে থাকবে! ক্রিকেট বোদ্ধা বলে যে দেশে সবচেয়ে বড় দাবিদার, সেই দেশের এক শহরে বিশ্বের পয়লা নম্বর তকমা পেতে চলেছে দেশের ক্রিকেট দল, তাও কিনা প্রায় ফাঁকা গ্যালারিতে।
নেতা রাহুল দ্রাবিড়ের দল ২০০৭ সালে সিরিজ জিতেছিল
বিরাট কোহলি এই সিরিজটার জন্য মুখিয়ে। ওয়ান ডে সিরিজটা হাতছাড়া হয়েছে। আগামী এক মাসের ২৫ দিন ভালো ক্রিকেটটা খেলাই তাঁর মূল লক্ষ্য। টেস্ট ম্যাচের আগে আরও জমাট অনুশীলন করবেন বলে, প্রস্তুতির ম্যাচের সময় কমিয়ে এসেক্স ছেড়ে আগেভাগে বার্মিংহামে চলে এসেছিলেন। আর প্রস্তুতি ম্যাচ খেললেও নিজেদের মানিয়ে নিতে, দিনের শুরুতে আর শেষে নেট সেশন চালিয়ে গেছেন। আসলে কোহলি জানেন, বিদেশের মাটিতে তাঁকে আর তাঁর দলকে সাফল্য পেতেই হবে। তবেই না টেস্টে পয়লা নম্বর দল! মাঠে অভিজ্ঞ ধোনিকে সারাক্ষণ পাশে আর পাচ্ছেন না। মাঠের বাইরে আছেন বটে রবি শাস্ত্রী। কিন্তু ম্যাচ রিডিং কি অভিজ্ঞতা দিয়ে সামলানো যায়! তাই আমার ধারণা, প্রথম টেস্টে অভিজ্ঞরাই প্রথম একাদশে থাকার দৌড়ে প্রাধান্য পাবে। অজিঙ্কা রাহানে, রবিচন্দ্রণ অশ্বিন, ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব, মহম্মদ শামি, দীনেশ কার্তিক, মুরলী বিজয়রা আগে জায়গা পাবেন। ভারতীয় দলের সহকারী কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই দলে ছিলেন, যে দল লিডসে টেস্ট জিতেছিল। জয়ের স্বাদ তিনি জানেন। রাস্তাটাও জানা। নেতা রাহুল দ্রাবিড়ের দল ২০০৭ সালে সিরিজ জিতেছিল। সেই দলে ছিলেন দীনেশ কার্তিক।
ধোনির পরামর্শ পাবেন না কোহলি
এই দলের অধিনায়ক কোহলি আর ইশান্ত শর্মা ছিলেন ২০১১ ও ২০১৪ সালের সফরে। দলে এমন ৭ জন ক্রিকেটার আছেন, যাঁরা ইংল্যান্ডের মাটিতে শেষ টেস্ট সিরিজ সফরে দলে ছিলেন। চেতেশ্বর পূজারা এ বারই ইংল্যান্ডে ইয়র্কশায়ারের হয়ে খেলছিলেন। ব্যাটে সফল হয়েছেন, তেমন নয়। ছ’টি ম্যাচে ১২টি ইনিংসে ১৪ রান ছিল গড়। মন্দ ফর্ম বলা ভালো। কিন্তু পরিবেশ আর পরিস্থিতির সঙ্গে সড়গড় হয়ে আছেন। বরঞ্চ ইশান্ত কিন্তু কাউন্টি ক্রিকেটে খেলে সময়টা কাজে লাগিয়েছিলেন। সাসেক্সে খেলছেন এবার। দলের সবচেয়ে সফল বোলার তিনি। আইপিএলে কোনও দল না পেয়ে তিনিও পূজারার মতো ইংল্যান্ডে ম্যাচ ফিটনেস বাড়িয়ে রেখেছেন। ইশান্ত ৪টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ১৫ টি উইকেট পেয়েছেন। ওয়ান ডে ম্যাচে, ৬ টি ম্যাচে ৮ টি উইকেট নেন। এবার ইশান্ত টিম ইন্ডিয়ার বড় ভরসা। বিপক্ষের ২২ টি উইকেট নেওয়ার মতো বোলার কোহলির দলে আছে।
এখনও পর্যন্ত যা খবর, বার্মিংহামে বেজায় গরমের পর গত শনিবার থেকে বেজায় বৃষ্টি হয়েছে। উইকেট ঢাকা ছিল। প্রচণ্ড গরম ছিল বলে তার আগে কয়েকদিন গ্রাউন্ডসম্যানরা আউট ফিল্ডও জলে চুবিয়ে দিয়েছিল। এখন সামান্য কমেছে গরম ভাবটা। রোদ তেজ বাড়ানোয় কতটা উইকেট টানবে তা অজানা। বরঞ্চ ভারতীয় দলের ভালো। গরম মানে উইকেটে ফাটল কিংবা উপরের মাটি আলগাই থাকবে। অনেকটা আমাদের মুম্বই-চেন্নাই লাগবে। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের আর অ্যান্ডারসনের 'চিন মিউজিক' শুনতে হবে না। ২০১৪-র সিরিজে তিনিই ৫ টি টেস্টে ২৫ টি উইকেট নিয়ে ভারতের বিপক্ষে ৩-১ ম্যাচে সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছিলেন।
চোট সামলে ওঠা ৩৫ বছরের জেমস তাই এবার অতটা আতঙ্ক নন। ৩২ বছরের স্টুয়ার্ট ব্রড এবং নানান সমস্যা সামলে মাঠে ফেরা ভারতের মহম্মদ শামির লড়াইয়ে নজর থাকবে। ভুবনেশ্বর কুমার আর বুমরাহ - দু'জনের চোট ভারতের বোলিং শক্তির ধার কিছুটা কমাতে পারে। কিন্তু ভারতের ম্যাচ উইনিং বোলার হয়ে উঠতে পারেন চায়নাম্যান বোলার কুলদীপ যাদব। তিন পেসার ইশান্ত, উমেশ ও শামি। দুই স্পিনার অশ্বিন এবং কুলদীপকে নিয়ে ভারতের প্রথম টেস্টে নামা উচিৎ। আর ৬ ব্যাটসম্যান। ওপেনার শিখর ধাওয়ান ইংল্যান্ড পৌঁছে ছন্দে আসেননি এখনও। তাই মুরলী এবং কে রাহুলকে দিয়েই শুরু করা উচিৎ। তিন নম্বরে পূজারা। চারে কোহলি। পাঁচে আমি ভোট দেব রাহানের জন্য। প্রথমত অভিজ্ঞতা, দ্বিতীয়ত মাথা ঠান্ডা রেখে লম্বা ইনিংস খেলতে পারেন। আবার লুজ বল মাঠের বাইরে পাঠাতে ওস্তাদ। ক্লোজ ইন ফিল্ডিংয়ে স্পিনারদের ভরসা। তাই হার্দিকের আগে রাহানেকে ভাবা উচিৎ। আর ছয়ে, দীনেশ কার্তিক রইলেন। তিনিও ভরসা জোগানোর মতো ব্যাটসম্যান।
এজবাস্টনে ভারতের বিরুদ্ধে তাদের সহস্রতম টেস্ট খেলবে ইংল্যান্ড
শেষ ৫ বছরে ভারত এশিয়ার বাইরে মোট ছ’টি টেস্ট সিরিজ খেলেছে। মাত্র ১টি জিতেছে। তাও বেসামাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা মোট খেলেছি ওদেশে গিয়ে ৫৭ টি টেস্ট। জয় মাত্র ছ’টি! আর এই ছ’টি জয় ভারতকে তিন বার ইংল্যান্ড থেকে সিরিজ জিতিয়েছিল। তা হল : ১৯৭১, ১৯৮৬ এবং ২০০৭। শেষবার সিরিজ জয় রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বে। এ বারের দলনেতা বিরাট কোহলি প্রথম টেস্ট সিরিজ খেলতে গিয়েছিলেন ২০১৪ সালে। ধোনির নেতৃত্বে। ৫ টেস্টের সিরিজে কোহলির মোট সংগ্রহ ছিল ১৩৪ রান। ভারতীয় দল ১-৩ ম্যাচে সিরিজ হেরেছিল। এ বার কোহলি নিজস্ব স্টাইলে, সামনে দাঁড়িয়ে ব্যাট বাগিয়ে লড়াই শুরু করলে বিদেশের মাটিতে টেস্ট আর সিরিজ জয়ের খরা কাটতে বাধ্য। কুক-রুট-বাটলারদের সামি-ইশান্ত-উমেশ-অশ্বিন-কুলদীপরা ঠিক বোকা বানাবে। লম্বা সিরিজে প্রথম টেস্টে যে দল দাদাগিরি দেখাতে পারবে, এই যুদ্ধে তারাই কলার তুলে ঘুরবে পরের চারটি টেস্টে।