এ যাবৎ বিশ্বকাপে খেলা ভারতীয় দলগুলোর মধ্যে বিরাট কোহলির ভারতই সবচেয়ে শক্তিশালী

ব্যাটসম্যানরা ফর্মে, বোলাররা ছন্দে, রিজার্ভ বেঞ্চ শক্তিশালী: ভারসাম্য এখন অন্য মাত্রায়

 |  4-minute read |   05-03-2019
  • Total Shares

১৯৮৭ সালের কথা। সেমিফাইনালে গ্রাহাম গুচের রিভার্স সুইপ ভারতকে সে বছরের বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে দিয়েছিল। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সেদিন প্রথমে ব্যাট করতে নেমে গুচের ১১৫ রানের উপর ভর করে ইংল্যান্ড ২৫৪ রান তুলেছিল। জবাবে মাত্র ২১৯ রানে শেষ হয়ে যায় ভারতের ইনিংস। আর, তৎকালীন বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যেতেই অন্ধকার নেমে এসেছিল আসমুদ্রহিমাচল জুড়ে।

ভারত সমর্থকদের সেই বেদনার কারণ নিঃসন্দেহে যুক্তিসঙ্গত। এই হারের বছর চারেক আগে লর্ডসের মাঠে রীতিমতো অঘটন ঘটিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিল কপিলস ডেভিলস। আর, মধ্যিখানের চার বছর জুড়ে একদিনের ক্রিকেটে ধারে-ভারে পুষ্ঠ হয়েছিল ভারতীয় দল। সাতাশির বিশ্বকাপ আসর বসেছিল 'ঘরের মাঠে'। তাই দলের শক্তি, ভারসাম্য ও পরিবেশ পরিস্থিতির কথা বিচার করলে সেই বিশ্বকাপে ভারতকে অন্যতম ফেভারিট বললে কম বলা হত। বরঞ্চ বলা উচিত সেই বিশ্বকাপের সবচেয়ে শক্তিশালী দল ছিল ভারত।

পরের তিনটি বিশ্বকাপ মানে -- ১৯৯২, ১৯৯৬ ও ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ভারত খেলেছে মহম্মদ আজহারউদ্দিনের নেতৃত্বে।

এর মধ্যে ১৯৯২ সালে ভারত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবে - এই ধরণের চিন্তা ভারতের অতিবড় সমর্থকও করেননি। আজহারের ভারতও স্বভাবতই নিজেদের যোগ্যতাকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি। আসলে সেই বিশ্বকাপের সময়ে ভারতীয় দলের 'ট্রানজিশন পিরিয়ড' চলছিল। সেই বিশ্বকাপেই ক্রিকেট জীবনের শেষ একদিনের ম্যাচটি খেলেছিলেন কৃষ্ণমাচারী শ্রীকান্ত। আবার সেই বিশ্বকাপই একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল অজয় জাডেজার।

যে কোনও দেশই বিশ্বকাপ শুরুর বছর খানেক আগে থেকে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। আর, তাই সরাসরি বিশ্বকাপে একজন ক্রিকেটারের অভিষেক ঘটছে সে উদাহরণ কিন্তু বিশ্ব ক্রিকেটে খুব বেশি নেই। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ খেলতে নামার আগে ভারতের যে প্রস্তুতির অভাব ছিল তা বলাইবাহুল্য।

body2_030519045036.jpgতিরাশি সালের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কপিলস ডেভিলস [সৌজন্য: ইন্ডিয়া টুডে]

এবার আসা যাক ১৯৯৬ সালের কথায়। সেই বছর বিশ্বকাপের আসর বসেছিল উপমহাদেশের মাটিতে - ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায়। ঘরের মাঠে খেলা বলে ভারতকে অন্যতম ফেভারিট হিসেবে ধরা হয়েছিল। কিন্তু প্রাক-বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের যা পারফরম্যান্স তাতে এই বিশ্বকাপ জেতার কথা ছিল না ভারতের। জেতেওনি। কোনক্রমে গ্রুপ লিগের গণ্ডী পেরিয়ে বেঙ্গালুরুতে এক স্মরণীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে পরাজিত করেছিল ভারত। কিন্তু সেমিফাইনালে অর্জুন রণতুঙ্গার শ্রীলঙ্কার কাছে পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করেছিল আজহারের ভারত।

এর ঠিক তিন বছরের মধ্যেই ইংল্যান্ডে বসেছিল বিশ্বকাপের আসর। বরঞ্চ মহম্মদ আজহারউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সেই দলটি অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল। সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও রাহুল দ্রাবিড় সমৃদ্ধ ব্যাটিং লাইনআপ যে কোনও বিপক্ষ দলের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। এই বিশ্বকাপে বেশ কয়েকটি স্মরণীয় ম্যাচ খেলছিল ভারত, যেমন কেনিয়া, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যাচ তিনটে এবং দু'দিনে শেষ হওয়া ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচটি। কিন্তু এই বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের ধারাবাহিকতার অভাব ছিল। জিম্বাবোয়ের মতো দুর্বল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও হারতে হয়েছিল ভারতকে।

বরঞ্চ, ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে সৌরভের ভারত অনেক বেশি ধারাবাহিক ছিল। শুরুটা ভালো না হলেও, পরপর টানা সাতটি ম্যাচ জিতে ফাইনালে পৌছেঁছিল সচিনরা। ফাইনালে যোগ্য দলের কাছে হেরেই রানার আপ হতে হয়েছিল ভারতকে। এ যাবৎ বিশ্বকাপে খেলা সেরা ভারতীয় দল ২০০৩ সালের সৌরভের দলটাই।

ভারত মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে ২০১১ সালে দ্বিতীয়বারের জন্য বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু ধোনি-বাহিনীর কৃতিত্ব খাটো না করেই বলতে হচ্ছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ধোনির ভারতের চেয়ে ২০০৩ সালের সৌরভের ভারত ভারসাম্য ও শক্তির দিক থেকে অনেকাংশে এগিয়ে ছিল।

body_030519044541.jpgবিরাট কোহলির ভারতীয় দলের ভারসাম্য অসাধারণ [ছবি: পিটিআই]

অনেকে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞই মনে করেন এখনও অবধি বিশ্বকাপে খেলা সেরা ভারতীয় দল ২০০৩ সালের সৌরভের দলটাই। কিন্তু ২০১৯ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে চলা বিরাট কোহলির ভারত আরও অনেক বেশি শক্তিশালী। ১৯৮৭ সালের কপিলের ভারতের মতোই এই দলটিকে অন্যতম ফেভারিট বলা যাবে না। বলতে হবে, একমাত্র অঘটন ঘটলে বা ভাগ্য সহায় না থাকলে এই বিশ্বকাপ ভারত জিতছে না।

ভারতকে নিয়ে এতটা আত্মবিশ্বাসী হওয়ার কারণ যথেষ্ট রয়েছে।

প্রথমত, এই মুহূর্তে দুর্দান্ত ছন্দে রয়েছে বিরাটের ভারত। ব্যাটসম্যানরা ফর্মে রয়েছেন, বোলাররা ছন্দে রয়েছেন এবং দলের রিজার্ভ বেঞ্চটাও বেশ শক্তিশালী। সব মিলিয়ে দলের ভারসাম্যই একটি অন্য মাত্রায় বিরাজ করছে।

দ্বিতীয়ত, টুর্নামেন্টের ফরম্যাট অঘটনের আশা কমিয়ে দিচ্ছে। এই বিশ্বকাপের ১০টি দল প্রথমে রাউন্ড রবিন ফরম্যাটে একে অপরের বিরুদ্ধে ন'টি করে ম্যাচ খেলবে। এই পর্যায়ের প্রথম চারটি দল এরপর সেমিফাইনালে মিলিত হবে। সুতরাং অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলগুলোর একটি কী দুটি ম্যাচে অঘটন ঘটিয়ে পরবর্তী পর্যায়ে পৌঁছেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। সেমিফাইনালে উঠতে হলে ধারাবাহিক ভাবে ভালো খেলতে হবে।

body1_030519044627.jpgটানা সাতটি ম্যাচ জিতে ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল ভারত [ছবি: রয়টার্স]

তৃতীয়ত, ইংল্যান্ডের পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হবে না ভারতের। গত বছর ইংল্যান্ডের মাঠে একদিনের সিরিজ হারলেও খুব একটা খারাপ খেলেনি ভারত। মনে রাখতে হবে, সেই সিরিজে বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষাগুলো সেরে রাখছিল টিম ম্যানেজমেন্ট।

এর আগে ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসর বসেছিল ইংল্যান্ডে। সেই টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হেরে রানার হলেও পারফর্ম্যান্সের নিরিখে সেরা দল ভারতই ছিল। সেই টুর্নামেন্টে ভারত প্রায় প্রতিটি ম্যাচে বিপক্ষকে দুরমুশ করেছিল।

সব দিক বিচার করলে, নিঃসন্দেহে বলা চলে, এই বিশ্বকাপে সবচেয়ে শক্তিশালী দল নিয়ে নামতে চলেছে বিরাট কোহলির ভারত।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ARPIT BASU ARPIT BASU @virusfound007

Arpit Basu is the Special Correspondent with the India Today Group’s fact check team. With more than one-and-a-half decade's experience in print and digital media, he has reported on aviation, transport, crime, civic and human interests issues. His sting operation on how precious Aviation Turbine Fuel, meant for Kolkata airport, was pilfered and sold in local market as ‘white kerosene’ received widespread acclaim. Arpit has worked with reputed media houses like The Times of India and Hindustan Times and had received letter of appreciation for reporting during the Phalin cyclone in Odisha in 2013.

Comment