ক্রিকেট তো ভদ্রলোকের খেলা, কিন্তু ভদ্রলোক ক্রিকেটাররা কোথায়?
ভদ্রলোকের খেলায় তাবড় তাবড় ক্রিকেটাররা রয়েছেন, শুধুই ভদ্রলোকেরা নেই
- Total Shares
ভারত কোনও টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হলে আর পাঁচজন ভারতীয়র মতো আমার মধ্যেও দেশাত্মবোধ জেগে ওঠে। আমিও আগেবপ্রবণ হয়ে পড়ি, ভারতীয় ক্রিকেটারদের সমর্থন করি এবং যদি ভারত হেরে যায় তা হলে ক্রিকেটারদের খারাপ পারফর্ম্যান্স নিয়ে আফশোসও করি।
আজ আমি সাহস করে আমার প্রিয় খেলাটি এবং নীলরঙের জার্সি পরিহিত ভারতীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে কয়েকটি কথা বলব।
করণ জোহরের অনুষ্ঠান 'কফি উইথ করণ'-এ ভারতীয় অলরাউন্ডার হার্দিক পাণ্ডির ব্যবহার নিয়ে চারিদিকে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। তাঁর এক অদ্ভুত রকম বক্তব্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে হাসি ঠাট্টা শুরু হয়ে গিয়েছে। তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করলেও সেই ক্ষমা অবজ্ঞার চোখে দেখা হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, "অনুষ্ঠান চলাকালীন অনুষ্ঠানের ধরণ দেখে তিনি কিছুক্ষণের জন্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন'। শুধু সোশ্যাল মিডিয়া নয়, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এই আচরণে ক্ষিপ্ত হার্দিক এবং কেএল রাহুলকে ভারত অস্ট্রেলিয়া একদিনের সিরিজ থেকে সাসপেন্ড করেছে।
এক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের কাছে এধরণের আচরণ শোভা পায় না। এমন একজন ক্রিকেটার যিনি ব্যাট এমনকি বল হাতেও অসাধারণ পারফর্ম করেছেন, তাঁর কাছ থেকে আমরা মাঠের বাইরেও 'ভদ্রলোক সুলভ' আচরণ প্রত্যাশা করে থাকি।
কিন্তু, হার্দিক পাণ্ডিয়াই কি একমাত্র ক্রিকেটার যিনি এরকম অভব্য আচরণ করে থাকেন? একদমই নয়।
তাঁর অদ্ভুতুড়ে মন্তব্যের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে হাসির খোরাক হয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া [স্ক্রিনশট]
আমাদের দলের সেই 'আক্রমণাত্মক' অধিনায়ক, যিনি বুক ফুলিয়ে জানিয়েছে যে পান্ডিয়া ও রাহুলের বক্তব্য সমর্থন করেন না, নিজেও মাঠের মধ্যে খারাপ আচরণ করেছেন। অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক টিম পেনের সঙ্গে মাঠের ভিতরে বিবাদে জড়িয়ে পড়ার পর তাঁকে নিয়েও হাসি ঠাট্টা কম হয়নি। অস্ট্রেলীয়দের ক্রমাগত স্লেজ করে যাওয়া কি 'স্বাস্থ্যকর কথোপকথন' বলা চলে?
তাঁর ব্যাট তাঁর হয়ে কথা বলে। তিনিই প্রথম ভারতীয় অধিনায়ক যাঁর নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজ সিরিজ জিতেছে ভারত, তিনিই একদিনের ক্রিকেটে দ্রুততম ১০,০০০ রান করেছেন, ২১৩টি ম্যাচে ২০৫টি ইনিংস খেলে, তিনিই প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার এবং বিশ্বের প্রথম অধিনায়ক যিনি পরপর তিনটি ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। এর পরেও অনভিপ্রেত কর্মকাণ্ডের প্রয়োজনটা কী?
২০০৮ সালে প্রাক্তন ভারতেরই ক্রিকেটার হরভজন সিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল তিনি নাকি সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসকে বাঁদর বলে সম্বোধন করেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্য কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। কিন্তু বিশ্বের অন্য দেশে এমন অনেক ক্রিকেটার রয়েছেন যাঁদেরকে মাঠে খারাপ আচরণের জন্য শাস্তিভোগ করতে হয়েছে।
তাঁর ব্যাট কথা বলে, তা হলে আগ্রাসনের প্রয়োজন কী [ছবি: এপি]
দক্ষিণ আফ্রিকার পেস বোলার রাবাদাকে যেমন দুটি টেস্টের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। পোর্ট এলিজাবেথে হওয়া সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট চলাকালীন অতিথি দলের অধিনায়ক স্টিভ স্মিথের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ার জন্য। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটাররা একই দোষে দোষী। ডেভিড ওয়ার্নার একবার এবিডিকে আউট করার পরে উচ্ছ্বসিত হয়ে উল্টো প্রান্তের ব্যাটসম্যান এইডেন মারক্রমকে উত্যক্ত করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন।
শ্রীলঙ্কার অলরাউন্ডার দনুস্কা গুণতিলককেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বহিস্কার করে দেওয়া হয়েছে। তিনি ও তাঁর এক বন্ধু দুই নরওয়ের এক মহিলাকে নিয়ে কলম্বোর টিম হোটেলে ঢুকেছিলেন। এই দুই মহিলার একজন ক্রিকেটারের সেই বন্ধুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন।
আরও কয়েকজন ক্রিকেটার রয়েছেন যাঁরা তাঁদের খারাপ ব্যবহারের জন্য কুখ্যাত। যেমন ডেভিড ওয়ার্নার। আক্রমণাত্মক ক্রিকেটার হিসেবে বেশ পরিচিত মিচেল জনসন। কিন্তু সময় বিশেষে তাঁর আগ্রাসন দেখলে বেশ দৃষ্টিকটু বলেই মনে হয়। কেরেন পোলার্ড যেমন মাঝে মধ্যেই ক্রিকেট ছাড়া অন্য ব্যাপারে খবরের শিরোনামে চলে আসেন। 'অভদ্র' ইংরেজ ক্রিকেটারদের তালিকার উপরেই রয়েছে জেমস অ্যান্ডার্সনের নাম। বিশেষ করে, স্লেজিঙের ক্ষেত্রে। এই তালিকা শেষ করা দায়...
ভদ্রলোকের খেলায় এই ক্রিকেটারদের নাম জগৎজোড়া। কিন্তু এঁরা নিজেরা কিন্তু অতটা ভদ্র নন।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে