রাজ্যে ভালো মানের কোচ থাকতেও আমরা কেন ভিনরাজ্যের কোচ আমদানি করছি
নব্বইয়ের রঞ্জি জয় এসেছিল ৫১ বছরের অপেক্ষায়, ১৯৩৮-৩৯ মরশুমে শেষ রঞ্জি জিতেছিল বাংলা
- Total Shares
দিনটা বুধবার ছিল। ১৯৯০ সালের ২৮শে মার্চ। শুধুমাত্র বাংলা দলের ১২জন সদস্য নয়, বাংলার আপামর ক্রিকেটপ্রেমী দিনটিকে চিরজীবন মনে রাখবেন। দিল্লিকে হারিয়ে বাংলা সেদিন রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
কোনওভাবেই হেলাফেলা করা যাবে না দিল্লির সেই দলটিকে। সেই দিল্লির দলটিতে তৎকালীন জাতীয় দলের ছ'জন সদস্য প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। আরও একটি কারণে বাংলার ক্রিকেটের (ভারতীয় ক্রিকেট বললেই বোধহয় ভালো হত) কাছে উল্লেখযোগ্য সেই রঞ্জি ফাইনাল। সেই ম্যাচে বছর ষোলোর মহারাজের প্রথম শ্রেণীর অভিষেক ঘটেছিল। পরের দেড় দশক বিশ্ব ক্রিকেট শাসন করেছিলেন সেই মহারাজ, আমার আপনার অতি প্রিয় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
১৯৯০ সালের ২৮শে মার্চ, দিল্লিকে হারিয়ে রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলা
সেই রঞ্জি জয় এসেছিল প্রায় ৫১ বছরের অপেক্ষার পরে। তাঁর আগে পরাধীন ভারতে ১৯৩৮-৩৯ মরসুমে দক্ষিণ পঞ্জাবকে পরাজিত করে শেষ বার রঞ্জি ট্রফি ঘরে তুলেছিল বাংলা। তাই তো নব্বইয়ের রঞ্জি জয়ের স্বাদটাই ছিল অন্যরকম।
কিন্তু তার পর আরও ১৮টা বছর কেটে গিয়েছে। বাংলা আর রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। তিন তিনবার - ১৯৯৩-৯৪, ২০০৫-০৬ ও ২০০৬-০৭ - ফাইনালে উঠেও রঞ্জি জয় করতে পারেনি বাংলা। কিন্তু কেন?
টুর্নামেন্ট জেতাটা একটা অভ্যাস। তাই চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা স্বভাবে পরিণত করতে হয়। আর এই স্বভাবটাই আমারা আয়ত্ত করতে পারিনি। প্রতিভার অভাব কোনওদিনও ছিল না। কিন্তু সেই প্রতিভাকে ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারাটাও একটা শিল্প। আর, সেই শিল্পীটাকেই এখনও আমরা খুঁজে চলেছি।
আমরা কেন মনোজদের জন্য ভিনরাজ্যে থেকে কোচ আনছি
ক্রিকেট মূলত অধিনায়ক নির্ভর খেলা। কিন্তু আধুনিক ক্রিকেটে কোচেরাও বেশ বড় ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না কার সিদ্ধান্তে প্রতি বছরই আমরা ভিনরাজ্যে থেকে কোচ আমদানি করে আনছি। আমাদের রাজ্যে অনেক ভালো মানের কোচ রয়েছেন। অথচ তাঁদের ব্যবহার করা হচ্ছে না। আর বাইরে থেকে যদি আনতেই হয়, তাহলে চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত কেন নয়? বিদর্ভ ক্রিকেটের খোলনলচে পাল্টে দিয়ে বিদর্ভকে গত বার রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন তিনি। এর পর একজন ভালো মানের অধিনায়ক প্রয়োজন। 'ক্যাপ্টেন্সি মেটিরিয়াল' ক্রিকেটারের অভাব রয়েছে বাংলায়।
গুণমানগত দিক দিয়ে বর্তমান বাংলা দল যথেষ্ট শক্তিশালী। কিন্তু এই দলে সঠিক কম্পোজিশনে অভাব রয়েছে। স্পিন বিভাগকে ঢেলে সাজতে হবে। এ ছাড়াও ব্যাটসম্যান, স্পিনার, পেসার ও অলরাউন্ডারের মধ্যে সঠিক সামঞ্জস্যের অভাব রয়েছে।
বাংলার আবার রঞ্জি জয় সম্ভব
আরও একটি বিষয়ের উপর নজর দিতে হবে মনোজ তিওয়ারিদের, চাপের ম্যাচে তাঁরা যেন ভেঙে না পড়েন। আমরা রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন জিতেছিলাম কারণ আমরা সেই চাপটাকে জয় করতে পেরেছিলাম। সবচেয়ে বড় কথা আমরা সিনিয়ররা ছোটদের উপর ছাপের কোনও আঁচ লাগতে দিইনি। অরুণ (অরুণ লাল), শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়, অশোক (মালহোত্রা), মহারাজ (সৌরভ), প্রণব রয় ও ডেভিডের (উৎপল চট্টোপাধ্যায়ের) মতো অভিজ্ঞ ও নতুন নতুন প্রতিভা ছিল সেই দলে।
আমি কিন্তু আশাবাদী। কয়েকটি সামান্য রদবদল ও ছোট ছোট পদক্ষেপ করতে পারলেই বাংলা কিন্তু আবার ভারত সভায় শ্রেষ্ঠ আসনটা ছিনিয়ে নিতে পারবে।