পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা নয়: জাতীয়তা ও সেনাহত্যা বনাম ক্রিকেটের মধ্যে কোনও একটা বাছতে হবে
ভারত জানিয়ে দিক যে পাকিস্তান এই বিশ্বকাপে খেললে ভারত নাম প্রত্যাহার করবে
- Total Shares
যে প্রতিবেশী সম্প্রতি একটি হামলায় আমাদের আত্মীয়দের হত্যা করছে এবং নিয়মিত ভাবে এ নিয়ে ভেবে চলেছে ও পরিকল্পনা করে চলেছে – তাদের জন্য আমাদের ছাপোষা জীবনে কতটা পরিসর রয়েছে? আর মানবতা ও খেলোয়াড়ি মনোভাব দেখানোর জন্য এমন প্রতিবেশীর সঙ্গে কি আমি আমার সন্তানদের খেলতে দেব? খুব সহজ ভাবে বলতে গেলে, আমরা আমাদের পরিবারের ব্যাপারে যে ভাবে ভাবনা-চিন্তা করি ঠিক এক ভাবে আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও সেই কথাই প্রযোজ্য – যদি না আরও বেশি করে প্রযোজ্য হয়। আজকের বিতর্কটা হল – আমরা কি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলব নাকি খেলব না; আমরা না খেলে কি তাদের হাতে দুটো পয়েন্ট তুলে দেব; যদি সেমিফাইনাল তাদের বিরুদ্ধে খেলতে হয় তখন কী হবে – এগুলো এখন স্রেফ তুচ্ছ কয়েকটা ব্যাপার।
এই ব্যাপারটা আইসিসির সামনে তুলে ধরতে হবে এবং কথাটা হবে, পাকিস্তান হল একটি জঙ্গি দেশ, ত্রমাগত ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদত দিয়ে চলেছে, এবং আইসিসি-কে স্থির করতে হবে যে তারা বিশ্বকাপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব চায় নাকি পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব চায়।
-
পাকিস্তানকে নিষিদ্ধ কর – অথবা ভারত সেখান থেকে সরে যাচ্ছে।
যে কোনও ক্ষেত্রে দক্ষতার বিচার করলে একমাত্র ক্রিকেটেই পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে নিজের তুলনা করতে পারে, এই জায়গা থেকে ওদের ছেঁটে ফেলতে হবে। (ছবি: রয়টার্স)
যদি পাকিস্তানকে খেলার সুযোগ দেওয়া হয় তা হলে ভারতের সরে যাওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আর আমরা ভারত বলতে ভারতীয় ক্রিকেট দলকে বলছি না, আমরা খানে ভারত বলতে বোঝাচ্ছি ভারতীয় স্পনসর, ভারতীয় প্রচারমাধ্যম ও ভারতীয় ক্রিকেট-ভক্তদের। এর জন্য আমাদের বাণিজ্যিক মূল্য চোকাতে হবে তবে এটা জাতীয়তা বোধ ও নীতির মূল্যের তুলনায় তিলার্ধের মতো। সারা দুনিয়া যখন বিশ্বকাপের দিকে তাকিয়ে ঠিক এই সময়টাই পাকিস্তানের প্রকৃত রূপটা তুলে ধরার সময়, যাকে ইংরেজিতে বলে নেম শেম অ্যান্ড গেম।
অনেকে বলছেন যে আমরা যদি সরে আসি তা হলে লোকে ভাবতে পারে যে আমরা বড়লোকে আদুরে ও বখে যাওয়া ছেলের মতো ঠিক তখন রাগ দেখিয়ে ময়দান ছেড়ে পালাচ্ছি যখন পরিস্থিতি আমাদের অনুকূলে নয়।
একাবারেই তা নয়।
আগে আমাদের নিজেদেরকে বুঝতে হবে এবং তারপরে বিশ্বকে বোঝাতে হবে যে কোন আদর্শের ভিত্তিতে আমরা এই লড়াইটা লড়ছি। আমদের কাছে মূল বিষয়টি হল সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন – যেটা এখন সঙ্কটাপন্ন এবং বছরের পর বছর ধরে তা আক্রান্ত হয়ে চলেছে। এই হামলায় আমাদের দেশের সেনা-সহ হাজার হাজার নাগরিকের প্রাণ গিয়েছে। এক জাতি হিসাবে এটা আমাদের লড়াই – এটাই আমাদের ক্রোধের কারণ – এটাই আমাদের নীতি।
আইসিসি ও তার দুনিয়াও স্থির করে নিক তারা নিজেদের কোন শ্রেণীতে ফেলতে চাইছে – কিন্তু তাদের একজনকেই বেছে নিতে হবে।
খেলার দুনিয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে নির্বাসিত করে রাখার বিপুল প্রভাব পড়েছিল তাদের দেশে জাতিবিদ্বেষের উপরে। সন্ত্রাসবাদও সেই একই ব্যাপার – এটা হল তার চেয়েও ভয়াবহ এক দানব। আইসিসি থেকে পাকিস্তানকে নির্বাসিত করে দিতে পারলে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তা এক দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ হবে।
“তাদের সঙ্গে খেলে তাদের হারিয়ে দেব” (আমরা যে ভাবেই হোক তা করতে পারব বলে বিশ্বাস করি এবং সাম্প্রতিক ইতিহাস ও বইপত্রও সেই কথাই বলছে) – আমরা অতীতে যতবার মুখোমুখি হযেছি ততবারই তাদের হারিয়েছি – এমন ধারণার তেমন স্পষ্ট ভিত্তি নেই এবং আর তেমন হলে এটা যে শুধুমাত্র ক্রিকেটের মাঠে মুখ পুড়বে তা নয়, দেশের অভ্যন্তরে তো বটেই, সীমান্তেও এর তীব্র বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
না, এই ক্রিকেটীয় উত্তেজনা কখনোই পুলওয়ামায় জঙ্গিহামলার ক্ষতে প্রলেপ দিতে পারবে না। (ছবি: ডেইলিও)
তাদের বিরুদ্ধে খেলব এবং খেলে হারাব – এই তত্ত্বে অতীতে কোনও সুবিধা হয়নি এবং ভবিষ্যতেও কোনও সুবিধা হবে না।
এই মুহূর্তে বিশ্বে সম্ভবত আমরাই সেরা ক্রিকেট শক্তি এ কথা প্রমাণ করার জন্য বা মর্যাদা বাড়ানোর জন্য এই মুহূর্তে আমাদের কোনও বিশ্বকাপ প্রয়োজন নেই। যখন বিশ্বের সেরা বিশেষজ্ঞরা কোনও একটি ক্রিকেট-দলের প্রশংসা করে বলছেন যে এ বারের বিশ্বকাপ জয়ের সবচেয়ে বেশি সুযোগ তাদেরই রয়েছে তখন জাতীয় গর্বকে রক্ষা করার জন্য ও জাতীয় নীতির স্বার্থে তাকে কাজে লাগানোর একটা ঝুঁকি নেওয়া যেতেই পারে।
বিশ্বে কোনও একটি ক্ষেত্রে যদি ভারতের মুখোমুখি পাকিস্তান দাঁড়াতে পারে তা হলে সেই একমাত্র ক্ষেত্রটি হল ক্রিকেট। আর যে সব ব্যাপারগুলি ধর্তব্যের মধ্যে আসে, যেমন – অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মর্যাদা, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, গণতন্ত্র, বৈচিত্র্য, কৃতিত্ব (জনতা হিসাবে এবং দেশ হিসাবে), কোনও দিনই ভারতের সঙ্গে এক নিঃশ্বাসে পাকিস্তানের নাম উচ্চারিত হবে না।
তারা যখন কোনও একটা ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে একাসনে বসার আশা করছে তখন তাদের অগ্রাহ্য কর। এটাকে কোনও একটা বিচ্ছিন্ন বিষয় বলে বিবেচনা না করে এখন এই ইস্যুতেই আমাদের সকলকে এক হতে হবে, আসলে আমরা তো এক জাতিই।
আজ যে সন্ত্রাস নিয়ে ভারত ভীষণ ভাবে ক্রুদ্ধ, কে বলতে পারে যে আগামী কাল একই ঘটনা ঘটবে না যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা বা অন্য কোনও দেশে? তারাও যদি আমাদের মতো তাদের ভবিষ্যৎকেও অন্য রূপ দিতে চায় তারাও আমাদের মতোই পদক্ষেপ করবে।
যদি আইসিসি ও বিশ্ব ভারতকে বাদ দিয়েই বিশ্বকাপ আয়োজন করার কথা ভাবে, আমাদের নীতি ও একাত্মবোধ একই সঙ্গে অনুরণিত হবে সারা বিশ্বে। যদি পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে বিশ্বকাপ আয়োজন করার কথা ভারত ভাবে এটা হবে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে বিশ্বকাপ করার ভাবনা এবং তা যদি না হয় তা হলে ভারত নিজেকে তুলে নেওয়ার কথা ভাবছে – এমন একটা বিষয় টেলিভিশন চ্যানেলের প্রাইম টাইমে ও সোশ্যাল মিডিয়া আলোচিত হতে পারে এবং আমাদের গণতন্ত্রের স্পন্দন এবং আমাদের দেশের মানুষের বিবেচনার গভীরতাও আলোচিত হতে পারে।
শোকসন্তপ্ত ভারত পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহত সিআরপিএফ জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। (ছবি: রয়টার্স)
আমার অনুরোধ হল আমরা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করি এবং সকলের আগে দেশকে এগিয়ে রাখি।
যদি আমরা জওয়ানদের জীবনকে গুরুত্বই না দিই তা হলে তাঁদের জন্য অশ্রুমোচন করে ও বাতি জ্বালিয়ে কোনও লাভ হবে না – আমাদের জাতীয়তা বোধ ক্রিকেটের অনেক ঊর্ধ্বে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে