'চ্যাম্পিয়ন' হওয়া তো এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা, বিশ্বকাপকে পাখির চোখ দেখুক সাকিবরা
নিদাহাস বা এশিয়া কাপের পারফর্মেন্স ফ্লুক নয়, যোগ্য দল হিসেবই টুর্নামেন্ট দুটির ফাইনালে পৌছিয়েছে বাংলাদেশ
- Total Shares
২০১৫ সালে শেষ বিশ্বকাপে শেষ আটে পৌছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। গ্রূপ পর্যায়ের শেষ ম্যাচে হাডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ইংল্যান্ডকে হারিয়ে। এই ম্যাচের পর স্বভাবতই আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল বাংলাদেশ জুড়ে।
এক শ্রেণীর ক্রিকেট বিশ্লেষকদের বক্তব্য ছিল, ক্রিকেটীয় কৃতিত্বের জন্যে বিশ্বকাপ নকআউট পর্যায়ে পৌঁছায়নি বাংলাদেশ। শেষ আটে পৌঁছাতে বাংলাদেশকে সাহায্য করেছিল ভাগ্যে। মোট ১৪টি দলকে দুটি গ্রূপে ভাগ করে সে বছর বিশ্বকাপের আসর বসেছিল অস্ট্রেলিয়াতে। বাংলাদেশের গ্রূপে ছিল অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। নিন্দুকদের বক্তব্য ছিল, বাংলাদেশ ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডের মতো দুর্বল দলকে একই গ্রূপে না পেলে ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেস্তে না গেলে পরের রাউন্ডে পৌঁছতে পারত না বাংলাদেশ।
কিন্তু নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে ও এশিয়া কাপের ফাইনালে পৌছিয়ে নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন মুস্তাফিজুররা। এই দুটি টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের পারফর্মেন্স কোনও মতেই ফ্লুক নয়, যোগ্য দল হিসেবেই এই দুটি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। বলা ভালো, এই দুটি টুর্নামেন্টে প্রতিযোগিতার দুই সেরা দল হিসেবেই ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও বাংলাদেশ।
চ্যাম্পিয়ন হওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা [ছবি: এপি]
২০১৮ সালে ক্যারাবিয়ান সফরেত্ত গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই সফরে টেস্ট সিরিজ হারলেও, একদিনের ও টি-২০ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সুতারং, সাদা বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশের শক্তি যে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে তা নিঃসন্দেহে বলে ফেলা যায়।
বৃদ্ধি পাওয়ার কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কারণও রয়েছে।
১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফির আক্রাম খানের বাংলাদেশের সঙ্গে ২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফির সাকিবের বাংলাদেশ বা এশিয়া কাপের মুশফিকুরের বাংলদেশ দলটির গুনগত মানের তফাৎ অনেক। দলে প্রচুর প্রতিভাবান ক্রিকেটার রয়েছেন। সব চাইতে বড় কথা, দলের রিজার্ভ বেঞ্চেও যথেষ্ট শক্তিশালী। তামিম আহমেদ বা সাকিব আল হাসান না থাকলেও, তাঁদের অভাব পূরণ করে দেওয়ার মতো ক্রিকেটার রয়েছে এই দলে। আর যে কোনও খেলাতেই একটি দলের শক্তি বিচারের অন্যতম যোগ্যতা হচ্ছে দলের রিজার্ভ বেঞ্চ কতটা শক্তিশালী।
জাতীয় দলের সাপ্লাই লাইনটা সচল রাখার জন্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কৃতিত্ব দাবি করতেই পারে। সে দেশের ক্রিকেট পরিকাঠামোর প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে। ভারত বা পাকিস্তানের মতো সে দেশেও জাকজমক করে আয়োজন হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ। ক্রিস গেইল থেকে শুরু করে বিশ্বক্রিকেটের প্রচুর নামি দামি ক্রিকেটার এই টুর্নামেন্টে খেলেন। উল্টোদিকে, সাকিব মুস্তাফিজুর বা তামিমরা আইপিএল সহ বিদেশের কয়েকটি উন্নতমানের ঘরোয়া টুর্নামেন্টে খেলেন। বড় মাপের ক্রিকেটারদের সঙ্গে এক দলে খেলা বা এক সঙ্গে সময় কাটানো - এই বিষয়গুলোও কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের যথেষ্ট সাহায্য করেছে।
শুধুমাত্র, উপমহাদেশ ক্রিকেটের 'বড় দাদা' ভারত বা 'মেজ দাদা' পাকিস্তান নয়, বাংলাদেশ কিন্তু 'ছোট দাদা' শ্রীলঙ্কা থেকেও শিক্ষা নিয়েছে। ভারতের ঢের আগে 'শিক্ষিত' বিদেশী কোচ আমদানি করেছিল শ্রীলঙ্কা। সাফল্যও পেয়েছিল। ৯৬ সালে অর্জুন রণতুঙ্গার শ্রীলঙ্কা বিশ্বকাপ জিতেছিল। সেই দলের কোচ ছিলেন ডেভ ওয়াটমোর। গর্ডন গ্রিনিজ থেকে ওয়ালশ - বাংলাদেশের প্রশিক্ষকের দায়িত্বেও তো বেশ কয়েকজন বিদেশিকে দেখা গিয়েছে।
বিশ্বকাপ জেতারও ক্ষমতা রাখে এই বাংলাদেশ [ছবি: এপি]
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এত কিছুর পরেও বড় টুর্নামেন্টে জয় পাচ্ছে না কেন বাংলাদেশ? ফাইনালে উঠেও চ্যাম্পিয়ন হতে পাচ্ছে না কেন বাংলাদেশ?
তাহলে, ফাইনালে ওঠা আর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সংকীর্ণ অথচ 'কঠিন' পথটা পেরোতে বাংলাদেশকে কি 'বাড়তি' কিছু করতে হবে? উত্তর একটাই - না।
নিদাহাস ফাইনালে জয়ের জন্যে শেষ বলে পাঁচ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের। দুর্ভাগ্য, সৌম্য সরকারের সেই বলে ছক্কা হাঁকিয়ে বসলেন দীনেশ কার্তিক। বিশ্ব ক্রিকেটে প্রচুর হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ হওয়া সত্ত্বেও শেষ বলে ছয়ে মেরে জেতার উদাহরণ খুব বেশি নেই। বলা যেতেই পারে, মাত্র একটি বলের জন্যে নিদাহাস ফাইনাল হেরেছে বাংলাদেশ।
এশিয়া কাপ ফাইনালে শুরুটা দুর্দান্ত করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ইনিংস গুটিয়ে গেল ২২২ রানে। জবাবে শেষ বলে ম্যাচ জিতেছিল ভারত। যে ভাবে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা শুরু করেছিলেন তাতে স্কোর ৩০০র কাছাকাছি পৌছিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। ৩০০ রান তাড়া করা তো দুরস্ত, আরও ২০-২৫ রান বেশি করলে ম্যাচ জিতে যেত বাংলাদেশ। সুতারং, এক্ষেত্রেও বলা যেতে পারে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা আর কয়েকটি রান বেশি করতে পারলেই এই মুহূর্তের এশিয়ার সেরা দলের শিরোপা থাকত বাংলাদেশের মাথায়।
বাংলাদেশের কাছে এখন 'বড়' টূর্নামেন্ট জেতা শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। আরও একটি ফাইনাল আর সেই ফাইনালে নিজেদের সেরাটা দিতে পারলেই, কেল্লা ফতে।
আর, হ্যা! প্রস্তুতি ঠিক মতো করতে পারলে আর সকলে নিজের সেরাটা উজাড় করে দিতে পারলে বিশ্বকাপ জয়েরও ক্ষমতা রাখে এই বাংলাদেশ। আসছে বছর ইংল্যান্ডে বসছে ক্রিকেট বিশ্বকাপের আসর। এখন সেই বিশ্বকাপকেই পাখির চোখ দেখুক সাকিবরা।