কার্যক্ষেত্রে ধনতান্ত্রিক হলেও কার্ল মার্ক্সের দ্বিশতবার্ষিকী ঘটা করে উদযাপন করছে চিন

২০১২ তে ক্ষমতায় আসা ইস্তক জিনপিং দলীয় নীতি আদর্শের প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন

 |  2-minute read |   09-05-2018
  • Total Shares

'মার্ক্স ওয়াজ রাইট' নামের একটি নতুন টেলিভিশন অনুষ্ঠান সমগ্র চিন জুড়েই বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে ফেলেছে। সে দেশের 'দূরদর্শন' সিসিটিভিও কার্ল মার্ক্সকে নিয়ে সপ্তাহব্যাপী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। আর এ সব কিছুর কারণ একটাই --কার্ল মার্ক্সের দ্বিশতবার্ষিকী উদযাপন। ৫ মে, ১৮১৮ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই কিমউনিস্ট নেতা।

চিনের শাসকদল কমুনিস্ট পার্টির (সিপিসি) সঙ্গে মার্ক্স ও মার্ক্সবাদের এক অদ্ভুত সম্পর্ক রয়েছে। গত চার দশক ধরে পুঁজিবাদকে আঁকড়ে ধরবার চেষ্টা করে চলেছে চিন এবং এক নতুন ধরণের পুঁজিবাদ নিয়ন্ত্রিত মডেলের সূচনা হয়েছে সেই দেশে। আপনি যদি শ্রমিক সংগঠন বা শ্রমিকদের অধিকারের প্রতি চিনের সহনশীলতার কথা মাথায় রাখেন তাহলে একটা জিনিস মানতে শুরু করে দেবেন - ভারত চিনের থেকে অনেক বেশি সমাজতান্ত্রিক।

এই অবস্থাতেও সিপিসি কিন্তু সগর্বে নিজেদের মার্ক্সবাদী বা লেনিনপন্থী দল হিসেবে ঘোষণা করে। যদিও তা শুধু ‘নাম কা ওয়াস্তে’। চিনের সমাজে এখন পশ্চিমী ধ্যানধারণা যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। দেশের প্রেসিডেন্ট জাই জিনপিং অবশ্য এই ধারাকে ঠিক সমর্থন করেন না।

২০১২ সালে ক্ষমতায় আসা ইস্তক জিনপিং চেষ্টা করে চলেছেন যাতে সংবাদমাধ্যম থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার দেওয়ালের মাঝে দলীয় নীতিআদর্শের প্রভাব বিস্তার করা যায়। তিনি ইতিমধ্যেই সাবধান করে দিয়েছেন যে পশ্চিমী প্রভাব সাধারণ মানুষের উপর দলের নিয়ন্ত্রণ শিথিল করে দিচ্ছে।

body_050918072345.jpgসিপিসি কিন্তু সগর্বে নিজেদের মার্ক্সবাদী বা লেনিনপন্থী দল হিসেবে ঘোষণা করে

এর মানে কিন্তু এই নন যে তিনি চিনকে ফের মাওয়ের চিনে নিয়ে যেতে চান। তিনি শুধু একটি মাধ্যম প্রতিষ্ঠা করতে চান যার মধ্য দিয়ে তাঁর দলের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত হবে। সিপিসির মুখপত্রের প্রাক্তন সম্পাদক দেং ইউয়েন সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বলেছেন, "যাঁরা মার্ক্সবাদ নিয়ে সামান্য পড়াশোনা করেছেন তাঁদের দলীয় ইস্তাহার সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিৎ। কিন্তু দলের অধিকাংশ সদস্যই মার্সক্সবাদ পড়েননি।"

তাই তো দলীয় নীতিকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য মার্ক্সের দ্বিশতবার্ষিকীকে হাতিয়ার করা হয়েছে। জি স্বয়ং পেকিং বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে সেখানকার পড়ুয়াদের মার্ক্সকে সর্বদা মনে রাখার আহ্বান জানিয়ে এসেছেন। এছাড়াও একটি পলিটব্যুরো সংক্রান্ত আলোচনাসভায় যোগ দিয়ে মার্ক্স ও এঙ্গেলসের নীতি নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। চিনের গ্রেট হল অফ দ্য পিপল-এ উপস্থিত হয়ে জনসমক্ষে মার্ক্সের চিন্তাধারা নিয়ে বক্তৃতাও তিনি করেছেন যা সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছিল।

মার্ক্সের বিশাল ছবির সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছেন, "মার্ক্সবাদ বিশ্বকে পরিবর্তন করেছে একই সঙ্গে চিনকেও পরিবর্তিত করেছে।" দেশের পুঁজিবাদের বাড়বাড়ন্তের সামনে দাঁড়িয়েও জাই বলেছেন, "ইতিহাস ও জনগণ মার্ক্সকে বেছে নিয়ে একদম ঠিক কাজটাই করেছে। সিপিসিও নিজেদের দলীয় পতাকায় মার্ক্সের নাম লিখে একদম ঠিক কাজ করছে।"

মনে করা হচ্ছে, আগামী কয়েক সপ্তাহ ধরে কমিউনিস্ট বিষয়ক প্রচার ব্যাপক গুরুত্ব পাবে চিনে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দলের দপ্তরে কমুনিস্ট ম্যানিফেস্টো আবশ্যিক পাঠ্য হয়ে উঠবে।

জি জানিয়েছেন যে দেশের ৮ কোটি দলের সদস্যদের দলের সংবিধানে লেখা দলীয় দর্শন পড়তে হবে। এই দর্শনে মার্ক্স ও লেনিন সহ চিনের বামপন্থী নেতাদের পাঁচ প্রজন্মের কথা উল্লেখ করা আছে, যার মধ্যে শেষ প্রজন্মতি স্বয়ং জাই জিনপিং।

(সৌজন্যে: মেল টুডে)

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ANANTH KRISHNAN ANANTH KRISHNAN @ananthkrishnan

The writer is China correspondent for India Today.

Comment