ভারতের পরমাণু অস্ত্র নীতি কেন মানবে বিশ্ব? রাষ্ট্রপুঞ্জে সুখেন্দুশেখর রায়ের বক্তৃতা
রাষ্ট্রপুঞ্জের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে ভারতের অবস্থান
- Total Shares
জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন নিয়ে ইন্দোনেশিয়া যে বিবৃতি দিয়েছে ভারতও সেই বিবৃতির অংশীদার।
পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে ভারত যে অঙ্গীকার করেছে, সেই অঙ্গীকার মেনে চলছে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই লক্ষ্যপূরণের জন্য ভারত চিরকালই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।
ভারতই ছিল প্রথম দেশ যে দেশ ১৯৫৪ সালে পরমাণু পরীক্ষা নিষিদ্ধ করার আহ্বান করেছিল এবং পরমাণু অস্ত্র প্রসার রোধে অবৈষম্যমূলক চুক্তির বিরোধিতা করেছিল যেটি ছিল ১৯৬৫ সালের চেয়ে পৃথক।
অধিবেশনে যোগ দিতে যাচ্ছেন লেখক (ছবি সৌজন্য: লেখক)
১৯৭৮ সালে ভারত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই বিষয়ে কথাবার্তা বলার প্রস্তাব দিয়েছিল যাতে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের হুমকি দেওয়াও নিষিদ্ধ হতে পারে। ১৯৮৮ সালে সাধারণ সভায় রাজীব গান্ধী অ্যাকশন প্ল্যান পেশ করা হয়েছিল যেখানে নির্ধারিত সময়সমীর মধ্যে সামগ্রিক ভাবে ও সম্পূর্ণ রূপে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের রূপরেখা দেখা হয়েছিল।
হয়তো স্মরণে রয়েছে যে ২০০৭ সালে নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত আলোচনাসভায় (কনফারেন্স অন ডিজআর্মামেন্ট বা সিডি) ওয়ার্কিং পেপার অন নিউক্লিয়ার ডিসআর্মামেন্ট (পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত কার্যবিধি) পেশ করেছিল ভারত যা সিডি/১৮১৬ হিসাবে রক্ষিত, তাতে পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়িত করার নানাবিধ প্রস্তাব ছিল যা আজও প্রাসঙ্গিক রয়েছে।
এই কারণে আমরা আমাদের প্রস্তাবগুলি পুনরুত্থাপন করছি:
- i) পরমাণু অস্ত্রধর দেশগুলি নতুন করে দ্ব্যর্থহীন ভাবে অঙ্গীকার করবে যে তারা সমস্ত পরমাণু অস্ত্র সম্পূ্র্ণ ভাবে ত্যাগ করবে
i i) নিরাপত্তার প্রয়োজনে যে সব পরমাণু অস্ত্র থাকছে তাও হ্রাস করতে হবে
i i i) পরমাণু অস্ত্রধারী দেশগুলির মধ্যে বিশ্বব্যাপী একটি চুক্তি করতে হবে যেখানে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার প্রসঙ্গে বলা থাকবে যে “প্রথমে ব্যবহার করবে না”
i v) নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত আলোচনায় (কনফারেন্স অফ ডিজআর্মামেন্ট), যে সব দেশ পরমাণু অস্ত্রধর নয় সেই সব দেশের উপরে যাতে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করা না হয় সে জন্য সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য সামগ্রিক ও বিধিবদ্ধ চুক্তি করতে করতে হবে
- v) নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত আলোচনায় সমস্ত পরমাণু অস্ত্রধর দেশকে যোগ দিতে হবে এবং পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ নিষিদ্ধ করা ও পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের হুমকি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে
v i) নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত আলোচনায় সমস্ত পরমাণু অস্ত্রধর দেশকে যোগ দিতে হবে এবং বৈষম্যহীন ভাবে ও নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে প্রমাণসাপেক্ষে অস্ত্র ধ্বংস করার ব্যাপারে বিশ্বকে পথ দেখাতে সর্বাঙ্গীন ভাবে পরমাণু অস্ত্রের উন্নতিসাধন, উৎপাদন, সঞ্চয় ও ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং পরমাণু অস্ত্র ধ্বংস করতে হবে।
দায়িত্বশীল পরমাণু অস্ত্রধর দেশ হিসাবে ভারতের নীতি হল কোনও ভাবেই ন্যূনতম ভীতিপ্রদর্শন পর্যন্ত করা থেকে বিরত থাকা, প্রথমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করা এবং পরমাণু শক্তিধার নয় এমন কোনও দেশের উপরে সেই অস্ত্র প্রয়োগ না করা। আমরা চাই এই নীতি বহুপাক্ষিক আইনি বন্দোবস্তের মাধ্যমে প্রযুক্ত হোক। শুধু তাই নয়, আমরা স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এবং একাই পরমাণু বিস্ফোরণ সংক্রান্ত পরীক্ষা স্থগিত রেখেছি।
রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী মিশন (ছবি সৌজন্য: লেখক)
অতীতের মতো এই বছরেও এই জোটের মটঞ্চেই সহপ্রস্তাবক হিসাবে ভারত দুটি খসড়া সমাধানসূত্র পেশ করবে।
১৯৮২ সালেই প্রথম পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত সম্মেলনে (কনভেনশন অন দ্য প্রহিবিশন অফ দ্য ইউজ অফ নিউক্লিয়ার ওয়েপনস) প্রথম এই বিষয়টি উত্থাপিত হয় এবং এটিই ছিল ফার্স্ট কমিটির দীর্ঘমেয়াদি সংকল্পসূত্র। নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত আলোচনায় সমস্ত পরমাণু অস্ত্র প্রস্তুতকারী দেশকে একত্রিত করে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ করা ও অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দেওয়া থেকে বিরত করতে আইনি বন্ধনে বেঁধে দেওয়া এবং পর্যায়ক্রমে পরমাণু অস্ত্র অবৈধ বলে আইন করে ঘোষণা করার যে নীতিতে আমরা বিশ্বাসী সেই নীতিই সেখানে প্রতিফলিত হয়েছিল।
দ্বিতীয় খসড়া নীতি পরমাণু বিপদ হ্রাসে (রিডিউসিং নিউক্লিয়ার ডেঞ্জার) জোর দেওয়া হয়েছিল পরমাণু সংক্রান্ত নীতি ও পুনর্বিবেচনা করা এবং অনিচ্ছাকৃত ভাবে বা আকস্মাৎ পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা কমিয়ে আনা যার মধ্যে ছিল পরমাণু অস্ত্রকে লক্ষ্য বা অভিমুখ থেকে সরিয়ে নেওয়া এবং তাকে সঙ্কেতমুক্ত করে দেওয়া।
যেখানে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত আমাদের সকলের সাধারণ উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হচ্ছে, সেই নীতি সমর্থন করার জন্য আমরা সমস্ত সদস্যদেশকে অনুরোধ করছি।