মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন দেখে কেন মনে হচ্ছে তা সিন্ধিয়া বনাম দিগ্বিজয় বনাম কমল নাথ?

নিজের নৌকা যদি নিজেরাই ডোবায় কংগ্রেসের, তাতে বিজেপিরই লাভ হবে

 |  4-minute read |   22-10-2018
  • Total Shares

মধ্যপ্রদেশে যে কোনও নির্বাচনের আগে যদি কোনও একটি ব্যাপারে বিজেপি বেশ নিশ্চিন্তে থাকতে পারে সেই বিষয়টি হল কংগ্রেসের মধ্যে অনৈক্যের গল্প।

বিজেপির কাছে এই বিষয়টি যে পরম তৃপ্তিদায়ক সে কথা কংগ্রেস নেতারা বোঝেন বলেই তারা নির্বাচনের আগের পথসভাগুলিতে অন্তত নিজেদের ঐক্যবদ্ধ দেখানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।

মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস নেতৃত্ব, বা সবচেয়ে প্রধান তিন নেতা – দিগ্বিজয় সিং, কমল নাথ ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া – নিজেদের মধ্যে কৌশলগত সমঝোতা করে নিয়েছেন, তা হল এ বারে অন্তত তাঁরা শিবরাজ সিং চৌহানকে আগের মতো কোনও সুযোগ নিতে দেবেন না, তাঁদের ব্যক্তিগত দূরত্বের জন্য কংগ্রেসকে এ বার যেন ক্ষমতা থেকে দূরে থাকতে না হয়।

তবে এই কৌশলগত বোঝাপড়া এখন শেষ পর্যায়ে চলে গিয়েছে।

mp1_102218081011.jpgমধ্যপ্রদেশে রাহুল গান্ধী একাই দলীয় নেতাদের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করে চলেছেন (ছবি: ইন্ডিয়া টুডে)

এবার দেখা যাচ্ছে যে তারা যথেষ্ট চাপে রয়েছে।

কয়েকদিন আগে দিগ্বিজয় সিংয়ের একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব ঘুপাক খাচ্ছিল, যেখানে তিনি দলের কর্মীদের কাছে আবেদন করছেন  যে “যদি তাঁদের শত্রুও দলের মনোনয়ন পেয়ে যান” তা হলেও যেন তাঁরা ঐক্যবদ্ধ থাকেন।

বিজেপি – যারা এত দিন ধরে কংগ্রেস নেতাদের এই চাপের মধ্যে দেখার জন্য অপেক্ষা করেছিল – তারা এখন এই সুযোগ পেয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

দিগ্বিজয়কে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে এসেছেন শিবরাজ সিং চৌহান, তিনি বলেছেন যে পূর্বতন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীকে যন্ত্রণা দিচ্ছেন তাঁর নিজের দলের লোকেরাই।

প্রধানমন্ত্রী মোদী যখন তাঁর দলের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তখন তিনি নিজেও বলেন যে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের তিনজন মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী রয়েছেন।

mp2_102218081036.jpgরাহুল গান্ধীর মধ্যপ্রদেশ সফরের সময় কংগ্রেস নেতাদের বহু কাটআউট থাকলেও সেখানে ছিল না দিগ্বিজয় সিংয়ের কোনও কাটআউট (ছবি: ইন্ডিয়া টুডে)

মন্ত্রী বিশ্বাস সারং আরও একধাপ এগিয়ে বলেন যে কংগ্রেস কোনও সৌজন্যের দার ধারে না, তারা জানেই না গুরুজনের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হয়।

তাঁর নিজের দল বিজেপি মার্গদর্শক মণ্ডলীর সঙ্গে কী আচরণ করছে সে কথা অবশ্য উল্লেখ করেননি সারং।

একদিন পরে দিগ্বিজয় সিংকে ফোন করে রাহুল গান্ধী বলেন তাঁকে গোয়ালিয়র থেকে তাঁর সঙ্গে দিল্লিতে যেতে। গোয়ালিয়রে জনসভা ও মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। প্রচারের সময় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কোণঠাসা হয়ে পড়া অবশ্য এই প্রথম নয়। রাহুল গান্ধীর ভোপালে প্রচারের সময় কংগ্রেস নেতাদের একের পর এক কাটআউট টাঙানো হয়েছিল তবে সেখানে কোথাও দিগ্বিজয় সিংয়ের কোনও কাটআউট ছিল না। তখন তাঁর প্রতি কংগ্রেসের এমন অবহেলা দেখে বিজেপি ভীষণ ‘বিচলিত’ হয়ে পড়েছিল।

ভোপালে একটা কথা খুব শোনা যাচ্ছে যে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কমল নাথ ও প্রচার কমিটির প্রধান জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার মধ্যে সম্পর্ক খুব একটা মধুর নয়।

রাহু গান্ধী এবং জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া যখন মনোনয়ন বিলির মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং তাঁদের মধ্যেকার বন্ধুত্ব দেখে মানসিক ভাবে চাপে থাকেন কমল নাথ। বিজেপি এসব নিজে জোর প্রচার করছে। মনোনয়ন পর্ব শেষ হওয়ার পরের ব্যাপারটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেটাই বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেবে এবং সেখান থেকে জয়-পরাজয়ের পার্থক্যটা স্পষ্ট হতে শুরু করবে।

দলের মনোনয়ন না পেয়ে কোনও বিজেপি নেতা যদি বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন তখন তাকে দমন করার ক্ষেত্রে বিজেপির রেকর্ড বেশ ভালো, যা দেখে হতাশ হয়ে পড়েন কংগ্রেসকর্মীরা। কারণ সেই নেতা তখন চুপচাপ ঘরে বসে থাকেন।

এর ফলে ওই দলের ভোটারদের একাংশ ভোটকেন্দ্রে যান না ভোট প্রদান করতে, তাতেও লাভই হয় বিজেপির।

ভোপালে এমন কথাও শোনা যাচ্ছে যে নির্বাচনের ঠিক এক সপ্তাহ আগে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে সিন্ধিয়াই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হবেন বলে ঘোষণা করে দেবেন কংগ্রেস সভাপতি – পঞ্জাবেও এই ভাবেই ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংয়ের নাম ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছিল।

mp3_102218081100.jpgজ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ও কমল নাথের রসায়ন যে একেবারে ঠিকঠাক তা আসলে নয় (ছবি: ইন্ডিয়া টুডে)

তবে পঞ্জাবে ভাবী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তুলে ধরার মতো অন্য কোনও নেতাই ছিলেন না। ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং একাই নির্বাচন পরিচালনা করেছিলেন।

মধ্যপ্রদেশে ব্যাপারটা তেমন নয়।

প্রত্যেক নেতাকেই আলাদা আলাদা দায়িত্ব দিয়ে তাঁকে সর্বশক্তি দিয়ে সেই দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।

অর্থাৎ যদি কমল নাথ দলীয় সংগঠন ও অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ের দায়িত্বে থাকেন তা হলে সিন্ধিয়া দেখছেন প্রচারের বিষয়টি এবং দিগ্বিজয় সিং দেখছেন নেপথ্যের ব্যবস্থাপনার দিকটি – কংগ্রেসিদের মধ্যে বিভাজন রুখতেই এই বন্দোবস্ত।

আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, চৌহান এখন অপেক্ষায় রয়েছেন কতক্ষণে কংগ্রেস তাদের ভাবী মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করে, কারণ তার পরেই লড়াইটা হবে চাষির ছেলে বনাম মহারাজা অথবা চাষির ছেলে বনাম উদ্যোগপতির।

mp4_102218081156.jpgরাহুল গান্ধী ও সিন্ধিয়ার মধ্যে সদ্ভাব রয়েছে, তাই তাঁদের মধ্যে সৌজন্যের দৃশ্য দেথা যায়।  (ছবি: ইন্ডিয়া টুডে)

ইন্ডিয়া টুডের পলিটিক্যাল স্টক এক্সচেঞ্জ অনুযায়ী শিবরাজ সিং চৌহানের জনপ্রিয়তা এখনও অটুট রয়েছে ৪৮ শতাংশে যা কংগ্রেসের যে কোনও নেতার চেয়ে বেশি তা সে ৩২ শতাংশ নিয়ে সিন্ধিয়া হোক ৮ শতাংশ নিয়ে কমল নাথ হোক বা ২ শতাংশের কাছে জনপ্রিয় দিগ্বিজয় সিং হোক।

রাহুল গান্ধী ও সিন্ধিয়ার মধ্যে সদ্ভাব রয়েছে, তাই তাঁদের মধ্যে সৌজন্যের ছবি দেথা যায়। রাহুল গান্ধীই একমাত্র যিনি দলীয় নেতাদের মধ্যে বারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।

তবে একটা ভুল পদক্ষেপ করলেই কংগ্রেস নেতাদের ভয়াবহ অহংবোধ প্রকাশ হয়ে পড়বে।

তখনই নির্বাচনটা বিজেপির কাছে সহজ-সরল হয়ে যাবে।

কংগ্রেস কি এ কথা মাথায় রেখেছে?

(সৌজন্য মেল টুডে)

 লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

RAHUL NORONHA RAHUL NORONHA

The writer is Associate Editor, India Today.

Comment