রাজীবের আমল থেকেই ভোটের মুখে প্রতিরক্ষাচুক্তি নিয়ে জলঘোলা হয় কেন
দাবি উঠেছে সম্পূর্ণ বিষয়টি যৌথ সংসদীয় কমিটি দেখুক
- Total Shares
লোকসভা নির্বাচন যখনই এগিয়ে আসে তখনই বিদেশ থেকে অস্ত্র কেনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ শোনা যায়। যেমন সম্প্রতি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। এমনই বিতর্ক লক্ষ্য করা গিয়েছিল রাজীব গান্ধীর আমলে বফর্স কামান, বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহের আমলে হাউইৎজার কামান এবং ইউপিএ ১ এবং ২-এর সময় ভিভিআইপি চপার (অগস্টাওয়েস্টল্যান্ড)।
বফর্স কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর (ফাইল চিত্র)
নিন্দুকেরা বলেন, যে দল যখন ক্ষমতায় আসে তারাই প্রতিরক্ষা ডিলের মাধ্যমে নির্বাচনের তহবিল জোগাড় করে। এমন অভিযোগ মিথ্যা নাও হতে পারে। কিন্তু আশ্বর্যের বিষয়, মামলা-মোকদ্দমা হয়, সংসদে হইচই হয়, দু’-চারজন গ্রেপ্তারও হয় – কিন্তু তারপর কোনও মামলারই নিষ্পত্তি হয় না, যেমন হয়নি বফর্স মামলার।
এবার ফ্রান্সের সঙ্গে রাফাল বিমান কেনার চুক্তি নিয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ উঠেছে। যেমন,
(১) ইউপিএ সরকারের আমলে যে দামে কেনার কথা ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি দামে চুক্তি করা হয়েছে, (২)প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে অনভিজ্ঞ একটি বেসরকারি সংস্থাকে যন্ত্রাংশ তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছে, (৩) এই আনুষঙ্গিক কাজগুলি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিন্দুস্তান এরোনটিক্স লিমিটেড অথবা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) সুচারু ভাবে করতে পারত।
পাশাপাশি, সরকারের বক্তব্য, ইউপিএ আমলের চেয়ে কম দামে চুক্তি হয়েছে, বিরোধীরা অকারণ হইচই করছেন, কারণ তাঁরা রাজনৈতিক ফায়দা কুলতে চান। গোপনীয়তার শর্ত আছে বলে সরকার এর বেশি কিছু বলতে চায় না।
ইউপিএ সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি (রয়টার্স)
স্বাভাবিক ভাবে দাবি উঠেছে সম্পূর্ণ বিষয়টি যৌথ সংসদীয় কমিটি দেখুক। সরকার এই দাবি সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে, যদিও অতীতে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে এমন দাবি বিজেপি ও তার সহযোগীরা বারবার তুলেছে এমনকি সংসদের অধিবেশন দফায় দফায় বানচাল করেছে। অতীতে বিভিন্ন দুর্নীতির তদন্তে অন্তত ৬ বার যৌথ সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। বফর্স, হর্ষদ মেহতা ও শেয়ার কেলেঙ্কারি, চেতন পারেখ ও শেয়ার কেলেঙ্কারি, দুই ঠান্ডাপানীয় প্রস্তুতকারী সংস্থার কেলেঙ্কারি, টুজি কেলেঙ্কারি এবং ভিআইপি কপ্টার দুর্নীতি।
এই ছয়টি ক্ষেত্রে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ যাই হোক না কেন, বিজেপি ও তার সহযোগী দলগুলি এই ইস্যুগুলি পূর্ণমাত্রায় সদ্ব্যবহার করেছে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে। তা হলে এখনও বা যৌথ সংসদীয় কমিটি নিয়োগ করা হবে না কেন? সরকার যে গোপনীয়তা শর্তের কথা বলছে তা খতিয়ে দেখার সুযোগ আসবে যদি যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়।
কোন কোন শর্তে এই চুক্তি করা হয়েছে এবং আদৌ কমদামে নাকি বেশি দামে কেনা হচ্ছে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে যদি যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়।
তা না করে সরকার শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাইছে না তো?
বিবৃতি দিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ (রয়টার্স)
এখন দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ অথচ এই ধরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লাগাতার বিবৃতি দিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী কিংবা বিজেপির দলীয় মুখপত্র। সরকারের এমন হাস্যকর অবস্থান আগে কখনও দেখা যায়নি।
যাঁরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন, আজ তাঁরা স্বচ্ছতার কথা ভুলে গেলেন? তাই সন্দেহ দানা বাঁধছে। আগামী শীতকালীন অধিবেশনে সংসদে এই বিষয়টির ফয়সলা হওয়া অত্যন্ত জরুরি।