দাঁড়িভিটে পুলিশের গুলিতে ছাত্রের মৃত্যু কেন তিয়ানানমেন স্কোয়্যারকে মনে করাবে

বিষমদে ও বাস উল্টে মৃত্যু হলে সরকার যতটা তৎপর হয়, এ ক্ষেত্রে তা হয়েছে কি?

 |  3-minute read |   22-09-2018
  • Total Shares

ওই দারুণ উপপ্লবের দিনে আমরা দানি শির। -- কাজি নজরুল ইসলাম

উত্তর দিনাজপুরে দুই ছাত্রের মৃত্যু শুধু রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থাকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়নি, রাজ্যে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ-নীতি এবং সার্বিক প্রশাসন ও পুলিশের ভূমিকাকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে সরকারের মনোভাব নিয়েও। তাই চিনের তিয়ানানমেন স্কোয়ারে ছাত্রদের উপরে ট্যাঙ্ক চালিয়ে দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে এর তুলনা করা না চললেও, দুই সরকারের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।

tiananmen-protest-st_092218071809.jpg১৯৮৯ সালে তিয়ানানমেন স্কোয়্যারে আন্দোলনরত ছাত্ররা (রয়টার্স)

স্কুলের পড়ুয়ারা কী এমন আন্দোলন করল যার জন্য পুলিশকে আসতে হল এবং গুলি চালাতে হল? স্কুলের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীরই সব শিক্ষকদের প্রতি না হোক অন্তত কয়েকজন শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধামিশ্রিত ভীতি কাজ করে। প্রধানশিক্ষক-শিক্ষিকাকেও অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই দূরে থাকে। এই অবস্থায় তাদের পিছনে অন্যকেউ ছিল, এ কথা ধরেই নেওয়া যায়।

তার পরেও সরকারের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।

চিনের ছাত্ররা শান্তিপূর্ণ ভাবে অবস্থান করছিল, তারা দেশে গণতন্ত্রের দাবি করেছিল। তবে ১৯৮৯ সালের জুন মাসে শুধু যে তিয়ানআনমেন স্কোয়্যারে আন্দোলন হয়েছিল এমন নয়, পুরো দেশেই আন্দোলন হয়েছিল এবং অনেক জায়গাতেই মার্শাল ল জারি করা হয়েছিল। ছাত্ররা দেশের ভবিষ্যৎ, তাই ৪ জুন তাদের নির্মম ভাবে দমন করার খবরটাই সারা বিশ্বের খবরের কাগজের শিরোনাম হয়েছিল। সেই দিন তিব্বতের লাসায় কী ঘটেছিল, সাংহাইতে কী ঘটেছিল সেই খবর কেউ রাখেনি, রাখে না। ছাত্রদের উপরে আঘাতটাই সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল।

যে কারণে প্রথম থেকে লাসা ও সাংহাই নয়, তিয়ানআনমেন নিয়ে সকলের মাথাব্যথা ছিল, সেই একই কারণে প্রশ্ন উঠতে পারে বর্তমান সরকারের মানসিকতা নিয়ে। প্রশ্ন উঠতে পারে আরও বেশ কয়েকটি।

s_embed_092218071953.jpgহাসপাতালের পথে আহত ছাত্রকে নিয়ে (নিজস্ব চিত্র)

রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা কোন পথে তা বোঝা গিয়েছিল ছাত্রভর্তিতে টাকা নেওয়া নিয়ে। অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে পথে নামেতে হয়েছিল তা সামাল দিতে। মুখ্যমন্ত্রী কেন পথে নামবেন? তিনি কেন প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে এই অরাজক অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না? তিনি যে দলের প্রধান সেই দলের বিরুদ্ধে কেন তাঁকে পথে নামতে হবে? তা হলে দলে কি তাঁর নিয়ন্ত্রণ নেই?

সরকারি চাকরিতে নিয়োগ নিয়েও এখন অস্বচ্ছতার অভিযোগ হচ্ছে। স্কুলে অন্য বিষয়ের শিক্ষক নেই, সে সবের বন্দোবস্ত না করে উর্দু ভাষার দু’জন শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও আরও একজন উর্দু শিক্ষককে কেন নিয়োগ করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

২০১১ সালে রাজ্যে প্রচুর অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। তার পরেও রাজ্যে ২০১৪ সালে খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ ঘটেছে, তার সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠী যোগ পাওয়া গিয়েছিল, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যোগসাজসেরও অভিযোগ উঠেছিল।

বৃহস্পতিবার ২০ সেপ্টেম্বর উত্তর দিনাজপুরের দাঁড়িভিটে বহিরাগতরা ছিল। কারা এই বহিরাগত? রাজ্যের পুলিশদপ্তর হাতে রাখা মুখ্যমন্ত্রী বিদেশ থেকে জানিয়েছেন যে ওই দুই ছাত্রকে থুন করেছে বিজেপি ও আরএসএস। যদি তা করেও থাকে তা হলে রাজেশ সরকার ও তাপস বর্মন নামে দাঁড়িভিট হাইস্কুলের প্রাক্তন ছাত্রদের খুনি কারা তা কেন পুলিশ খুঁজে বার করছে না?

২০১১ সালের আগে পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনায় সিবিআই তদন্ত দাবি করতেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সিপিএমের পুলিশের উপরে তাঁর আস্থা ছিল না। ক্ষমতায় আসার পরে তিনি বলেন সিবিআই-ও যা, সিআইডি-ও তাই। এখন তিনি সিবিআই-কে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতের পুতুল বলছেন। আর দাঁড়িভিটের মানুষ এই ঘটনায় সিবিআই চাইছেন, তাই তাঁরা দেহ সৎকার করতে না দিয়ে তা কফিনবন্দি করে মাটিতে পুঁতে পাহারার ব্যবস্থা করেছেন।

s_embed1_092218073734.jpgনিহত রাজেশের শোকার্ত পরিমাণ (পিটিআই)

সরকারের প্রতি কি তা হলে ধীরে ধীরে আস্থা হারাচ্ছেন রাজ্যের মানুষ? তাঁরা কি পুলিশের উপরেও আস্থা হারিয়েছেন? ইসলামপুরের ঘটনা সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

বদল ছাত্ররাই করে। তাই নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন ওই দারুণ উপপ্লবের দিনে আমরা দানি শির। রাজ্যে কি তা হলে উপপ্লবের পরিস্থিতি? সেটা হয়তো বলার সময় এখনও আসেনি, কবে প্রশাসন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য, প্রশাসনে থাকা রাজনৈতিক দল নিয়েও প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।

ইতিমধ্যেই এই মৃত্যু নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। কিন্তু একটি প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে, বিষমদ খেয়ে মৃত্যু হলে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করা হয়, বাস উল্টে মৃত্যু হলেও তাই, পৌঁছে যান রাজ্যের মন্ত্রী। তা হলে ছাত্রমৃত্যুতে সরকারের সেই মনোভাব দেখা যায় না কেন? ছাত্র সম্ভবত বিরোধী দলের বলে? নাকি শিক্ষাক্ষেত্রে সরকার ততটা গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে? কোনটা ঠিক সেটি রাজনৈতিক দলের নেতারাই বলুন।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUMITRO BANDYOPADHYAY
Comment