কলেজে তোলাবাজি রুখতে রাস্তায় মুখ্যমন্ত্রী, এটা প্রশাসনিক ব্যর্থতার পরিচায়ক
ব্যাধির গোড়ায় রয়েছে শাসকদল থেকে সমাজবিরোধীদের মদত দেওয়া
- Total Shares
রাস্তায় নেমেছন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসন পরিচালনা করার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত ইতিবাচক দিক। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যদি রাস্তায় থাকেন, তা হলে প্রশাসন সঠিক পথে চলবে, এটাই বাঞ্ছনীয়।
গত সাত বছরে তাঁর প্রশাসনিক জীবনে মুখ্যমন্ত্রী রাস্তায় নেমেছেন অনেক বারই। কিন্তু এ বার তিনি রাস্তায় নেমেছন কেন? কলেজের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে যাচ্ছেন। একই ভাবে কলেজ সফর করছেন তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরাও। উদ্দেশ্য হল, রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার যে গলদ ইদানীং সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামে এসেছে, তা সমূলে উৎপাটন করা। মুখ্যমন্ত্রী হুমকি দিয়েছেন, পয়সা নিয়ে কলেজে ভর্তি করা চলবে না। এমন ঘটনা ঘটলে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবে।
Any allegation? @MamataOfficial visits college to check the situation pic.twitter.com/WfVwyaZUjQ
— SumitroBandyopadhyay (@sumitrob) July 3, 2018
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা গভীর অতলে তলিয়ে গেছে, এ বিষয়ে বিতর্কের কোনও অবকাশ নেই। বামপন্থী আমলে শিক্ষার রাজনীতিকরণ অত্যন্ত নগ্ন ভাবে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থাকে তলানিতে পৌঁছে দিয়েছে। ২০১১ সাল থেকে প্রতিশ্রুতি ছিল, যে এই শিক্ষা ব্যস্থার মানোন্নয়ন করা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে নতুন সরকারের নেতৃত্বে। পরিণতিতে সাত বছর বাদে পুলিশকে বিজ্ঞপ্তি দিতে হচ্ছে ভর্তির দুর্নীতি রোখবার জন্য। মুখ্যমন্ত্রী সমেত মন্ত্রিসভার সদস্যদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে ভর্তির দুর্নীতি রোখবার জন্য।
The first education minister to visit college? pic.twitter.com/5oair2iINU
— SumitroBandyopadhyay (@sumitrob) July 3, 2018
এটা ঘটনা যে যারা সমাজবিরোধী, তাদের কোনও রাজনৈতিক রং হয় না। কিন্তু এটাও ঘটনা যে কলকাতা শহরের যে সমস্ত কলেজগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সেই প্রত্যেকটি কলেজের তথাকথিত ছাত্র সংসদের নেতৃত্বে রয়েছে শাসকদলের ছাত্রশাখা। তাদের অঙ্গুলিহেলন ছাড়া এবং তাদের পিছনে থাকা স্থানীয় নেতৃত্বের আশীর্বাদপুষ্ট হাত না থাকলে এই চরম অরাজকতা সম্ভব ছিল না। এটা বোঝবার জন্য রাজনীতি বোঝবার প্রয়োজন নেই, এটি বোঝার জন্য বেশি শিক্ষিত হওয়ারও প্রয়োজন নেই।
মুখ্যমন্ত্রী এর আগে রাজ্যের ক্রমবর্ধমান ক্ষয়িষ্ণু স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপরে নিয়ন্ত্রণ আনতে টেলিভিশনে পর্দায় সরাসরি সম্প্রচারিত হওয়া একটি বৈঠক করেছিলেন কলকাতার টাউন হলে। প্রচুর হাততালি কুড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। একই রকম ভাবে সংবাদমাধ্যমকে খবর দিয়ে কলেজের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী। হয়তো কিছুটা বাহবাও কুড়িয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফর করেন প্রশাসনিক বৈঠকের নামে, প্রসাশনকে চাঙ্গা রাখবার জন্য, প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এবং প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য। কিন্তু এ সবের পরিণতি হচ্ছে পয়সা দিয়ে কলেজে ভর্তি। এত লজ্জাজনক অবক্ষয় পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থায় এর আগে কোনও দিন দেখা যায়নি।
কোন অভিভাবক নিজের সন্তানের শিক্ষা জীবনের ভবিষ্যৎকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে এবং স্থানীয় স্তরে নিজের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে পুলিশের কাছে যাবেন শাসকদলের স্থানীয় নেতা বা কলেজের ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর জন্য? এটা বুঝতেও কোনও অতিরিক্ত শিক্ষার প্রয়োজন হয় না। অভিভাবকদের এই তথাকথিত নপুংসকতা হয়তো চিরকালীন, কিন্তু তার সুযোগ নিয়ে শাসকদলের ক্ষমতাশালীরা দাঁত-নখ বার করে তোলাবাজিতে মত্ত হবে, এটা কোনও স্বাভাবিক সামাজিক অবস্থা নয়।
ব্যাধির গোড়ায় রয়েছে শাসকদলের পক্ষ থেকে সমাজবিরোধীদের মদত দেওয়া এবং তার পরিণতিতে দলের উপরে শীর্ষ নেতাদের নিয়ন্ত্রণ হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়া।
নিছক কয়েকজন সমাজবিরোধীকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর রাস্তায় নামা— এটা একেবারেই লজ্জাজনক এবং ব্যর্থতার পরিচায়ক। তিনি চিকিৎসকদের নিগ্রহ বন্ধ করতে রাস্তায় নামবেন, তিনি সিন্ডিকেট বন্ধ করতে রাস্তায় নামবেন, তিনি কলেজের তোলাবাজি বন্ধ করতে রাস্তায় নামবেন, তিনি চিকিৎসার হাল ফেরাতে রাস্তায় নামবেন, তোলাবাজি বন্ধ করতে রাস্তায় নামবেন আবার অভিযুক্তকে ছাড়াতে থানাতে হাজির হয়ে যাবেন-- এটা কোনও প্রশাসনিক দক্ষতার পরিচয় নয়। প্রশাসনিক ব্যর্থতা থেকে যে হতাশা তৈরি হয়, সেই হতাশার পরিচায়ক।
তিনি জেলার প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলায় জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করছেন, সেটাও প্রশাসনিক ব্যর্থতা। আর এই ব্যর্থতার কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতেছেন কলেজে ভর্তি হওয়ার নামে দুর্নীতি রুখতে কলেজের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়ে।