প্রণব মুখোপাধ্যায়কে কেন ভারতরত্ন সম্মান দিল বিজেপি?
অন্তত তাঁকে পিভি নরসিমহা রাও বা সীতারাম কেশরী হতে দিতে চায় না বিজেপি
- Total Shares
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ওয়াধরা এবং প্রণব মুখোপাধ্যায় – এই দুইয়ের মধ্যে মিল কোথায়, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এই প্রশ্ন উঠতেই পারে। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ। লেখার প্রথমেই এ কথা সহজ ভাবে বলে দেওয়া যায়, দুই ব্যক্তিত্বের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে, যে তাঁরা দুই মরিয়া রাজনৈতিক দলের বোড়ে মাত্র।
ভারতরত্ন দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা একজন দেশবাসী হিসাবে চূড়ান্ত ধৃষ্টতা। এই প্রশ্ন তোলার মধ্য দিয়ে কোনও ভারতরত্ন প্রাপকের সম্মানহানির কোনও রকম মানসিকতা এই লেখার কারণ নয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত কাটাছেঁড়া করা যেতেই পারে।
ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। (ছবি: পিটিআই/ফাইল)
২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপির পক্ষে সরকারে ফিরে আসা যতটা জরুরি, কংগ্রেসর পক্ষে নিজর অস্তিত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাও ঠিক ততটাই জরুরি।
এক গৃহবধূ, বছরের পর বছর যিনি পরিবারের প্রয়োজন ছাড়া আর কোনও অবস্থাতেই নিজেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রাখেননি, শেষ পর্যন্ত তাঁরই দলের এক শীর্ষপদ স্বীকার করে নেওয়া -- এ এক মরিয়া চেষ্টা। প্রশ্ন উঠতে পারে এটা দল বাঁচাতে নাকি পরিবার বাঁচাতে? সেটা আলাদা ব্যাপার। তবে মরিয়া চেষ্টা – এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই।
অন্যদিকে আশা করা যায়, ভারতরত্ন প্রাপক হিসাবে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। কিন্তু কেন প্রণব মুখোপাধ্যায়?
It is with a deep sense of humility and gratitude to the people of India that I accept this great honour #BharatRatna bestowed upon me. I have always said and I repeat, that I have got more from the people of our great country than I have given to them.#CitizenMukherjee
— Pranab Mukherjee (@CitiznMukherjee) January 25, 2019
Pranab Da is an outstanding statesman of our times. He has served the nation selflessly and tirelessly for decades, leaving a strong imprint on the nation's growth trajectory. His wisdom and intellect have few parallels. Delighted that he has been conferred the Bharat Ratna.
— Narendra Modi (@narendramodi) January 25, 2019
ভারতরত্ন যদি কোনও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে তা হলে এক ঢিলে বেশ কয়েকটা পাখি মারতে চেয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। বর্তমান কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একটি মতবাদ আছেই যে তারা পরিবারতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা রাখতে দলের দিগগজ নেতাদের ইতিহাস থেকে বিস্মৃত করে দিয়েছে। অভিযোগ আছে যে প্রণব মুখোপাধ্যায় নিজেও তথাকথিত সেই নোংরা খেলার সর্বশেষ শিকার।
মাননীয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের প্রতি অশ্রদ্ধা না দেখিয়েও একটি বিষয়ে দেশবাসী মোটামুটি ভাবে একমত যে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ব্যক্তিত্ব অন্তত অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার হওয়ার মতো নয় এবং খুব সচেতন ভাবেই কংগ্রেসের সর্বোচ্চ পরিবার থেকে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে শীর্ষপদটি না দিয়ে সেই পদের জন্য মনমোহন সিংকে মনোনীত করা হয়েছিল।
একজন বিশ্বস্ত সৈনিক হিসাবে প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁর মনঃস্তত্ত্ব কাউকে বুঝতে দেননি এটা বাস্তব। পরবর্তী কালেও রাষ্ট্রপতি পদে তাঁকে নির্বাসিত করার সিদ্ধান্তেরও কোনও বিরোধিতা করেননি। আজ বিজেপি সরকার তাঁকে ভারতরত্ন হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে অন্তত পিভি নরসিমহা রাও বা সীতারাম কেশরী হতে দেয়নি।
প্রণব মুখোপাধ্যায়কে বিস্মৃত হতে দেবে না বিজেপি। (ছবি: রযটার্স/ফাইল)
অবশ্যই সেই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মতো এইবারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে কিছুটা হলেও মানুষের আবেগকে উস্কে দিতে সক্ষম হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার, ঠিক যেমনটা জগদ্বিখ্যাত গায়ক ভূপেন হাজারিকার ভারতরত্নের মধ্য দিয়ে অসমকেও স্বীকৃতি দিতে ও সম্মানিত করতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
অন্তত ২০১৯-এর নির্বাচন একটা বিষয়ে নিশ্চিত করেছে যে যদি এভ্রিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ অ্যান্ড ওয়ার হতে পারে তা হলে এভ্রিথিং ইজ ফেয়ার ইন পলিটিক্সও বটে।
সচিন তেণ্ডুলকরকে ভারতরত্ন দিয়ে যদি ইউপিএ সরকার রাজনীতি করে থাকে, তা হলে এনডিএ-র রাজনীতির মধ্যেও কোনও অপরধের কারণ আছে বলে মনে হয় না। রাজনীতি করাটা রাজনৈতিক দলের কাজের মধ্যেই পড়ে।