টিভির পর্দার বিতর্ক সভাগুলোর বাইরেও সম্বিৎ পাত্র কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এবার আর শুধু বিজেপির মুখপাত্র নন, তিনি এখন ওড়িশার পুরী আসনের প্রার্থী
- Total Shares
২০১৮ সালের ডিসেম্বরের এক সাংবাদিক বৈঠকে জনৈক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, "উত্তরটা সন্দীপজি দেবেন ...... সন্দীপ পাত্রজি।"
সম্বিৎ পাত্রকে দলের সভাপতি হয়ত 'সন্দীপ' বলে ভুল করেছিলেন। কিন্তু একটি বিষয় উপেক্ষা করার কোনও সুযোগ নেই - বিগত কয়েক মাসে ৪৪ বছরের সম্বিৎ পাত্র বিজেপির অন্যতম পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন।
তিনি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন যে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি তাঁকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ওড়িশার পুরী কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই সম্বিৎ পাত্র লোকটি আসলে কে? টেলিভিশনের বিতর্ক সভাগুলোয় আলোড়ন সৃষ্টি করার পাশাপাশি তাঁর গুরুত্ব কোথায়?
আসলে, সম্বিৎ পাত্র 'সম্বিৎ পাত্র'র চেযেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি দলীয় স্তরে বেশ কযেকটি পরিবর্তনের রূপকার। পাশাপাশি, দেশের রাজনীতিতেও।
সম্বিৎ পাত্রের গুরুত্বটা ঠিক কোথায়? [ছবি: ইন্ডিয়াটুডে]
দিল্লির হিন্দু রাও হাসপাতলে সম্বিৎ পাত্রের প্রাক্তন সহকর্মীদের জিজ্ঞাসা করে দেখুন, প্রত্যেকেই এক বাক্যে স্বীকার করে নেবেন, সহকর্মীদের মাঝে সম্বিৎ কতটা জনপ্রিয় ছিলেন আর তিনি কী ভাবে ভগবদগীতার শ্লোক গড়গড় করে মুখস্ত বলতে পারতেন। বুদ্ধিমান একই সঙ্গে নির্লিপ্ত, সম্বিৎ দিল্লির চাঁদনী চক ও মলকাগঞ্জ অঞ্চল থেকে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন এবং অচিরেই বিজয় গোয়েল ও হর্ষ বর্ধনের মতো দিল্লির বিজেপি নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। পরবর্তীকালে তাঁকেই দিল্লি বিজেপির মুখপাত্র হতে দেখা যায়।
২০১২ সালে পুরনির্বাচনে তিনি বিজেপির টিকিট পান। তখন অবশ্য জনতার নাড়ি থেকে রাস্তার নালা সবকিছু মেরামতি করে দেওয়ার জন্য সম্বিৎ পাত্রের বেশ নামডাক ছিল। অথচ এখন তিনিই কথায় কথায় মসজিদের নাম পরিবর্তন করতে বলেন কিংবা রাহুল গান্ধীকে 'জোকার রাজপুত্র' বলে সম্বোধন করতে বেশি অভ্যস্থ।
সম্বিৎ পাত্র কিন্তু কোনও রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে আসেননি। তিনি সম্বলপুর জেলার বুড়লা শহরের ভিএসএস মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করেন। কটকের উৎকল বিশ্ববিদ্যালয়ের এসসিবি মেডিক্যাল কলেজ থেকে সার্জারিতে স্নাতকোত্তর করেন।
বিরোধীরা তাঁকে ভয় পায়, অর্থাৎ তিনি তাঁর কাজে সফল [ছবি: ইন্ডিয়াটুডে]
তবে, রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই বেশ প্রতিশ্রুতিমান ছিলেন সম্বিৎ পাত্র। যাঁরা টিভির পর্দায় 'শুরুর দিনগুলো'র সম্বিৎ পাত্রকে দেখেছিলেন তাঁদের নিশ্চয়ই একজন শান্ত স্বভাবের সম্বিৎ পাত্রের কথা মনে পড়ে, যাঁকে টিভির পর্দায় সর্বদাই হাসি মুখে দেখা যেত।
২০০৭ সালে বিজেপির আইটি সেলের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ছিলেন প্রদ্যোৎ ভোরা। যিনি ২০১৫ সালে, বিজেপি ত্যাগ করেছিলেন। দ্য প্রিন্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, "উনি (সম্বিৎ) বড়জোর মধ্যযুগীয় মানসিকতার এক উচ্ছৃঙ্খল জনতা ছাড়া আর কিছুই নন। অবশ্য যে দলে তেজিন্দর সিং বগ্গাও মুখপাত্র হতে পারে সেই দলের কাছে আর কী-ই বা আশা করে যেতে পারে।"
কংগ্রেস মুখপাত্র প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী-সহ অনেকেই সম্বিৎকে বিজেপির নীতি আদর্শক ভিন্ন আর কিছুই ভাবতে রাজি নন। সম্বিৎ নিজেও তো তাঁর দলের মতো জাতীয়তাবাদকে গাজোয়ারির পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন।
তাঁর ও আক্রমণাত্মক মনোভাব কি টিভির পর্যায়ে নিজের ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলার জন্য?
নাকি লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে দলীয় স্তরে তাঁর ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলার জন্য এই আক্রমণাত্মক মনোভাব?
নাকি এটাই সম্বিৎ পাত্রের সত্যিকারের মনোভাব যাঁর মধ্যে থেকে একজন চিকিৎসকের ব্যক্তিত্ব অনেকদিন আগেই লোপ পেয়েছে?
২০১২ সালে তিনি আমাদের নাড়ি মেরামত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত, এখন কি তাহলে তিনি সেই সুযোগ পেয়েছেন?
I thank Honourable PM Sh @narendramodi Ji & @BJP4India President Sh @AmitShah ji & All the respected CEC members for reposing faith on a small Karyakarta as me to make me contest from the abode of Lord Jaganath - PURI#PhirEkBaarModiSarkar जय जगन्नाथ???? pic.twitter.com/k22aQNgxmb
— Chowkidar Sambit Patra (@sambitswaraj) March 23, 2019
এখন আমরা যে সম্বিৎ পাত্রকে টিভির পর্দায় দেখে থাকি সেই সম্বিৎ পাত্রকে ঠিক মেনে নেওয়া যায় না। রাজনীতি নয় আলোচনা করতে করতে তিনি ব্যক্তিগত পর্যায়ে আক্রমণ শুরু করে দেন। গান্ধী পরিবারকে তিনি জনসমক্ষে "ঠগস অফ হিন্দুস্তান" বলে সম্বোধন করেন। "রাহুলকে জুতো পেটা করতে হয়" মার্কা উক্তিও করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এই মন্তব্যের জন্য তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন। কিন্তু এই মন্তব্য জনতার মন থেকে মুছে যায়নি। আমার তো সম্বিৎ পাত্রকে মাঝে মাঝে নাটুকেও মনে হয়। একবার তো টিভির পর্দায় তাঁকে দেখা গিয়েছে কংগ্রেসের সঞ্জয় নিরুপমের কাছে গিয়ে থাপ্পড় মারার কথা বলতে।
তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সম্বিৎ পাত্রের এই আচরণের কারণও রয়েছে।
তিনি বিজেপির মুখপাত্র। সুতরাং তাঁকে দল সম্পর্কিত কথা বলতে হবে।
দলকে বাঁচাতে হলে তাঁকে বিরোধীদের আক্রমণ করতে হবে এবং বিরোধীদের মুখ বন্ধ করে দিতে হবে।
আর তাই জন্যই হয়ত তাঁকে এতটা আক্রমণাত্মক হতে হয়, ব্যক্তিগত পর্যায়ে আক্রমণ করতে হয় এবং ডেসিবেলের বিধিনিষেধ না মেনে টিভির পর্দায় চিৎকার জুড়তে হয়।
তবে এখন তিনি শুধু আর মুখপাত্র নন, তিনি দলের প্রার্থীও বটে। তাই তাঁকে আবার সেই ভদ্র স্বভাবটা ফিরিয়ে আনতে হবে। তাঁর মতো কথা বলার ক্ষমতা খুব বেশি বিজেপি নেতানেত্রীর নেই। তিনি যদি বুদ্ধি দিয়ে তাঁর প্রতিভা খরচ করতে পারেন তাহলে টিভি যোদ্ধা সম্বিৎ পাত্র থেকে সহজেই তিনি রাজনৈতিক আশাভরসা সম্বিৎ পাত্র হয়ে উঠতে পারবেন।
আমার মনে হয় তিনি নিজে এই কথাটি বুঝতে পেরে এখন সকলের হয়েই কথা বলতে শুরু করবেন।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে