গভীর সমস্যায় অকালি দল: ২০১৫ সালে গুরমিত রাম রহিমকে ক্ষমা করল কে?
প্রাক্তন এসজিপিসি প্রধান মক্কর জানিয়েছেন বাদলের নির্দেশেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল
- Total Shares
গত মাসে বিচারক রঞ্জিত সিং কমিশনের পাঞ্জাব বিধানসভায় যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে সেই রিপোর্টকে কেন্দ্র করে অকালি দলের মধ্যে ফাটল লক্ষ করা গিয়েছে।
আকালি দলের নেতৃত্ব কেন বিধাসভায় এই রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা অধিবেশন বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়ে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ দলেরই কয়েকজন বর্ষীয়ান নেতা।এই তালিকায় বাদল পরিবারের ঘনিষ্ট ও প্রাক্তন মন্ত্রী টোটা সিং ও শিরোমণি গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটির প্রাক্তন সভাপতি অবতার সিং মক্করও রয়েছেন।
২০১৫ সালে অক্টোবর মাসে বেহবাল কালানে ও বড়গড়িতে পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনা নিয়ে তদন্ত করছিল এই কমিশন।
বিধাসভায় যেদিন এই রিপোর্ট পেশ করা হয় সেদিন অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন না পাঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদল। দলের বাকি বিধায়করা প্রাক্তন উপ মুখ্যমন্ত্রী সুখবির সিং বাদলের নেতৃত্বের বিধাসভা থেকে ওয়াক আউট করেন।
বিধাসভায় এই ৬০০ পাতার রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ না করে আকালি দলের বিধায়করা বিধানসভার বাইরে প্রতিবাদ সভা করে দাবি করেন যে বিচারক রঞ্জিত সিং কমিশনের রিপোর্ট "রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত"।
কমিশনের রিপোর্ট পেশের দিন বিধাসভায় উপস্থিত ছিলেন না প্রকাশ সিং বাদল (ডানদিকে) ও পুত্র সুখবির [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
এর ফলে আকালি দলের নেতৃত্বকে সরাসরি আক্রমণ করবার সুযোগ পেয়ে যায় কংগ্রেস। তাও আবার এমন একটা দিনে, যেদিন গোটা পাঞ্জাব জুড়েই বিধানসভা অধিবেশনের সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছিল। কংগ্রেস বিধায়করা সেদিন বারংবার দাবি করছিলেন যে সেদিনের সমস্ত ঘটনা সম্পর্কেই রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আগে থেকেই ওয়াকিবহাল ছিলেন। সেদিন পুলিশের গুলিতে বেহবাল কালান গ্রামে দু'জন শিখ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছিলেন। কিছুটা অবাক করেই, সে দিন বিধানসভায় আম আদমি পার্টিও (আপ) কংগ্রেসকে সমর্থন করেছে। আপের এইচএস ফুলকা সহ আরও বেশ কিছু বক্তা বাদল ও তৎকালীন ডিজিপি সুমেধ সিং সাইনির বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু করার দাবি তোলেন।
১৪ই অক্টোবর ভোরে যে পুলিশ গুলি চালাবে সেই ব্যাপারে আগের দিন গভীর রাত অবধি তাঁর কাছে কোনও খবর ছিল না - বাদল এমনটা দাবি করলেও, কংগ্রেস যে ভাবে বিধানসভায় আকালি দলকে আক্রমণ করেছে তাতে আকালি দলের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন যে দলের তরফ থেকে কেন অধিবেশন বয়কট করা হল।
সুখবির বাদলের নির্দেশেই নাকি রাম রহিমকে ক্ষমা করা হয়েছে [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
এই অধিবেশনের একদন পর প্রাক্তন মন্ত্রী টোটা সিং জানিয়েছেন যে অধিবেশন বয়কট করে ভুল করেছে নেতৃত্ব, বিধায়কদের উচিৎ ছিল বিধানসভায় উপস্থিত থেকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সম্মান রক্ষা করা। টোটা সিংকে কিন্তু এর আগে কোনও দিনও বাদল পরিবারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে দেখা যায়নি।
এর চাইতেও অবাক করে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে সেপ্টম্বরের তিন তারিখে যেদিন প্রাক্তন এসজিপিসি প্রধান মক্কর দাবি করেছেন যে ২০১৫ সালে ডেরা সাচ্চা সৌদার প্রধানকে ক্ষমা করে দেওয়ার পিছনে তাঁর কোনও ভূমিকা নেই। অকাল তখতের জ্যাঠেদার জ্ঞানী গুরবচন সিং ২০০১৫ সালের ২৪ শে সেপ্টেম্বর একটি ফরমান জারি করে গুরমিত রাম রহিমকে ২০০৭ সালের একটি হুকুমনামা থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। ২০০৭ সালের সেই হুকুমনামায় গুরমিতকে সামাজিক ভাবে বয়কটের ঘোষণা করেছিলেন কারণ গুরমিত নাকি দশম শিখ গুরুর অবমাননা করেছিলেন।
মক্কর জনসমক্ষে জানিয়েছেন যে রাম রহিমের ক্ষমা পাওয়ার বিষয় তিনি জড়িত নন [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
মক্কর জানিয়েছেন যে গুরমিতকে সুখবির বাদলের কথায় ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় এসপিজিসির উপর বাদলের পূর্ন কতৃত্ব ছিল।
৮ই সেপ্টম্বরে অমৃতসরে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে বেশ কিছু এসপিজিসি সদস্য ও প্রাক্তন জ্যাঠেদাররা জ্ঞানী গুরবচন সিংকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে। মক্কর নিজেও এই দাবি তুলেছেন। উল্টোদিকে, প্রাক্তন এসজিপিসি সদস্য তথা শ্রদ্ধেয় অকালি নেতা মাষ্টার তারা সিংয়ের কন্যা কিরণজিৎ কৌর অবশ্য সরাসরি অকালি প্রধান হিসেবে বাদলের অপসারণ দাবি করেছেন।
পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে অকালি দলের ভিতরে ভাঙন ধরতে শুরু করে দিয়েছে। এবং এটা আরও বেশি করে পরিষ্কার হচ্ছে কারণ এর আগে কেউই বাদল পরিবারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস দেখাননি। দেখা যাক জাত খেলোয়াড় সুখবির এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি কী ভাবে করেন।
(সৌজন্যে: মেল টুডে)
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে