বিজেপিতে কোনও ভবিষ্যৎ নেই সঞ্জয়পুত্র বরুণ গান্ধীর, তাই তিনি কংগ্রেসে যোগদান করুন
গান্ধী পরিবারের ঐক্যের ছবি তুলে ধরতে বরুণকে কংগ্রেসে ডাকতে পারেন তাঁর জ্যাঠতুতো দাদা-দিদিরা
- Total Shares
তাঁর বয়স এখন মাত্র ৩৮। কিন্তু, এরই মধ্যে দু'দুবার লোকসভা নির্বাচন জিতে ফেলেছেন বরুণ গান্ধী। এর মধ্যে একটি ইউপিএর আমলে অন্যটি এনডিএর আমলে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মানেকা গান্ধী ও প্রয়াত কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় গান্ধীর পুত্র বরুণ অবশ্য এখন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বক্তৃতা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। এছাড়া তিনি তাঁর স্বলিখিত বইটিরও প্রচার করে চলেছেন।
বিজেপি কী ভাবে বরুণের মতো একজন তরুণ ও প্রগতিশীল নেতার কণ্ঠরোধ করে রেখেছে তা ভাবতে সত্যিই অবাক লাগে। বিভিন্ন ধরণের বিষয়ের উপর অগাধ জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও বিজেপি বরুণকে দলীয় মুখপাত্রদের তালিকায় রাখেনি।
বরুণ গান্ধীকে কেন্দ্র করে বেশ ক'য়েকটি বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল, তিনি নিজেকে শুধরে নিয়েছেন [ছবি: রয়টার্স]
এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও ব্লগে নিজের চিন্তাভাবনা ব্যক্ত করে চলেছেন বরুণ।
বর্তমানে বরুণ উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুর আসনটির নির্বাচিত সাংসদ। এই আসনটি পূর্ব উত্তরপ্রদেশে অবস্থিত যেখানে সম্প্রতি কংগ্রেসের দায়িত্ব পেয়েছেন তাঁর জ্যাঠতুতো দিদি প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
সে ক্ষেত্রে এখন বরুণের কি বিজেপি ত্যাগ করে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া উচিত?
বর্তমান পরিস্থিতিতে, বিজেপিতে বরুণের খুব একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। অন্তত বর্তমান বিজেপির নেতৃত্বের অধীনে তো নয়ই।
Always a pleasure to be back in Haryana. Spoke at the Panipat Institute of Engineering and Technology in Haryana, today. pic.twitter.com/Gbdq1hrDWv
— Varun Gandhi (@varungandhi80) January 22, 2019
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে দলের তরফ থেকে বরুণকে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। অর্থাৎ এই তরুণ নেতার দায়িত্ব কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অমিত শাহ বিজেপির সভাপতি হওয়ার পরে দলের কার্যনির্বাহী সভা থেকে বরুণের নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
২০১৭ সালের উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের আগের এক সময়ে বরুণকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু এর পরে দলের প্রথম প্রার্থী তালিকায় বরুণকে জায়গা দেওয়া হয়নি।
বিজেপির অন্দরে যাঁরা বরুণকে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দাবি করেছিলেন তাঁদের লাগানো পোস্টার নরেন্দ্র মোদীর উত্তরপ্রদেশ সফরের আগে রাতারাতি খুলেও ফেলা হয়।
বরুণের রাজনৈতিক জীবনে যে কোনও কলঙ্ক নেই এমনটা অবশ্য নয়। ২০০৯ সালের ৭ মার্চ, একটি প্রচার সভায় সংখ্যালঘুদের উদ্দেশ্য করে উত্তেজক মন্তব্য করেছিলেন তিনি।সেই সময়ে তিনি পিলিভিট আসনের বিজেপি প্রার্থী হয়েছিলেন।
তাঁর বক্তৃতার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করা হয়। ১৯ দিন জেলহাজতে কাটাতে হয়েছিল তাঁকে।
বরুণকে মুখ্যমন্ত্রী করার দাবিতে পোস্টার পড়েছিল, রাতারাতি সেই পোস্টার সরিয়েও ফেলা হয়েছিল [সৌজন্য: টুইটার]
কিন্তু এই ঘটনার পরে আর কোনও দিনও কোনও উত্তেজক মন্তব্য বরুণের মুখ থেকে শোনা যায়নি।
আর এই জিনিসটাই তো একজন তরুণ নেতার সাফল্যের চাবিকাঠি -- ভুল করলেও শুধরে ফেলা, ভুলের পুনরাবৃত্তি না করা।
তরুণ নেতারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রগতিশীল হন। একধিক বার তিনি তা প্রমাণও করেছেন। তিনি পুরোনোপন্থী নেতাদের মতো নিজের বেতন বৃদ্ধি করতে আইন পাসে সহায়তা করেননি। বরঞ্চ তার প্রতিবাদ করেছেন।
এই প্রসঙ্গে বরুণ একবার বলেছিলেন, "বেতন বৃদ্ধি তার উপর আবার নিজেদের সম্পত্তির পরিমাণ ঘোষণা না করার যে স্বভাব সাংসদদের মধ্যে রয়েছে তার ঘোরতর বিরোধী আমি। প্রতিটি পেশাতেই কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার ফলে কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি হয়। কিন্তু গত ১০ বছর ধরে শুধুমাত্র হাত তুলেই বেশকয়েকবার নিজেদের বেতন বৃদ্ধি করেছেন সাংসদরা।"
সাংসদদের বেতন বৃদ্ধি চান না বরুণ গান্ধী [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
এহেন বরুণ গান্ধীকে মুখ্যমন্ত্রী না করে যোগী আদিত্যনাথকে মুখ্যমন্ত্রী করে বিজেপি প্রমাণ করল যে দল মুখে যা বলে কাজে তা করে না। মুখে বললেও বাস্তবে দলের তরুণ ও প্রগতিশীল নেতাদের খুব একটা পাত্তা দেয় না বিজেপি।
তাই এবার বাবার দলে যোগ দেওয়ার সময়ে এসেছে বরুণের।
উত্তরপ্রদেশের যে ভাবে হত্যে দিয়ে কংগ্রেস এখন আসন সংখ্যা বৃদ্ধির চেষ্টা করে চলেছে সেখানে কংগ্রেসে যোগ দিলে তিনি যে 'বড়' দায়িত্ব পেতে পারেন তা হলফ করেই বলা যায়। তাঁর ভাই-বোনেরাও তাঁকে স্বাগত জানিয়ে গান্ধী পরিবারের ঐক্যের ছবি তুলে ধরতে চাইবেন।
বিজেপির যদি বরুণকে প্রয়োজন বলে মনে হয় তা হলে অনতিবিলম্বে তাঁর মন জয় করতে চেষ্টা করুক।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে