সরকারি বাংলো বাঁচাতে আদিত্যনাথের সঙ্গে গোপন বৈঠক মুলায়মের
দলের সহকর্মীদের আবাস রক্ষা করতে মুলায়মের পরমার্শ বিবেচনা করতে পারেন যোগী
- Total Shares
পুরোনো অভ্যাস সহজে বদলে ফেলা যায় না। রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের ক্ষেত্রে এই কথা সব চেয়ে বেশি প্রযোজ্য। উত্তরপ্রদেশের ছ'জন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মন্ত্রিত্ব না থাকলে সরকারি আবাসও তাঁদের ত্যাগ করবার কথা। কিন্তু এখনও আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘনের মরিয়া চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই ছ'জন।
১৭ মে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের পক্ষ থেকে নোটিস জারি করে বলা হয়েছে এই ছ'জন যেন ১৫ দিনের মধ্যে সরকারি আবাসন ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই ছয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদব, অখিলেশ যাদব, রাজনাথ সিং, কল্যাণ সিং, মায়াবতী ও নারায়ন দত্ত তিওয়ারি - লখনৌর অভিজাত এলাকায় অবস্থিত বিলাসবহুল বাড়িগুলোর দখল ছাড়েননি।
কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়ে এক সমাজবাদী দলের নেতা মুলায়ম ও মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের মধ্যে একটি গোপন বৈঠকের কথা প্রাকাশ্যে এসেছে।
শোনা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে এক অদ্ভুত প্রস্তাব দিয়েছেন মুলায়ম। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নাকি বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছেন যে তাঁর ও তাঁর ছেলে অখিলেশের নামে যে দুটি বাড়ি বরাদ্দ করা হয়েছিল তা তাঁর দলের নেতা তথা বিধানসভার মুখ্য বিরোধী নেতা রামগোবিন্দ চৌধুরী ও বিধান পরিষদের মুখ্য বিরোধী নেতা আহমেদ হাসানকে বরাদ্দ করে দেওয়া হয়।
সমাজবাদী দলের নেতা মুলায়ম ও মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের মধ্যে একটি গোপন বৈঠকের কথা প্রাকাশ্যে এসেছে
সরকারি ভাবে বাড়ি ওই দু'জনের নামে বরাদ্দ হলেও হাসান ও চৌধুরী তাঁদের বর্তমান বাসস্থানেই থাকবেন। সে ক্ষেত্রে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করা হল না আবার মুলায়ম ও অখিলেশের ওই দুই বাড়িতে থাকাও হল। অর্থাৎ, সাপও মরল, আবার লাঠি ও ভাঙল না।
খবরের প্রকাশ, আদিত্যনাথ এখনও কোনও পাকা কথা দেননি মুলায়মকে। তিনি শুধুমাত্র 'বিবেচনা করে দেখব' বলে জানিয়েছেন। হাজার হোক সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পরে তাঁর দলের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকেও (কল্যাণ সিং ও রাজনাথ সিং) সরকারি বাসভবন ছাড়তে হবে।
এই ছয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে রাজনাথ সিং একমাত্র জানিয়েছেন যে তিনি খুব শীঘ্রই তাঁর জন্য বরাদ্দ সরকারি বাসভবন সরকারের হাতে তুলে দেবেন। অন্যদিকে রাজস্থানের বর্তমান রাজ্যপাল কল্যাণ সিং নাকি সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন যে তাঁর জন্য বরাদ্দ বাসভবনটি যেন তাঁর নাতির জন্য বরাদ্দ করা হয়। কল্যাণ সিংয়ের নাতি বর্তমানে যোগীর মন্ত্রিসভার সদস্য। সরকারি বাসভবন আগলে রাখবার এর চাইতে ভালো কোনও উপায় হতে পারে না।
যোগী মুলায়ম বৈঠক এখন সংবাদমাধমের সৌজন্যে উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে বেশ চর্চিত বিষয়। আর এই খবর প্রকাশ হতেই মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সংবাদমাধমের কাছে খবর পৌছিয়ে দেওয়ার সম্ভাব্য সূত্র খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বিজেপি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং ও রাজনাথ সিংকেও সরকারি বাংলো ছাড়তে হবে
শুরুতেই দু'জনকে বলির পাঁঠা করে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দু'জনকে শাস্তি দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বার্তা পাঠানো হয়েছে যে এই খবর প্রকাশ্যে আসায় যোগী যারপরনাই ক্রুদ্ধ।
মুলায়মের সঙ্গে বৈঠক করে শুধুমাত্র তাঁর পূর্বসূরির জন্য নয় নিজের দলের সহকর্মীদের শীর্ষ আদালতের নির্দেশ থেকে রক্ষা করবার উপায় বের করছিলেন আদিত্যনাথ। কিন্তু এই খবর প্রকাশ্যে আসায় এখন এই পরিকল্পনা ফলপ্রসূ করা তাঁর পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে। প্রাক্তন ডাকাবুকো আইএএস অফিসার এসএন শুক্লা সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার আবেদনকারী। তিনি কিন্তু পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন।
এই ছ'জনের মধ্যে তিন জন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী - মুলায়ম, অখিলেশ ও মায়াবতী কিন্তু রাজার হালে রয়েছেন। লখনৌর অভিজাত বিক্রমাদিত্য মার্গ এলাকায় প্রায় ২৫,০০০ স্কোয়ার ফিট কম্পাউন্ড সমেত একটি বাড়িতে থাকেন মুলায়ম। তাঁর পুত্র অখিলেশ ঠিক তাঁর পাশের ৫০,০০০ স্কোয়ার ফিট কম্পাউন্ডের বাড়িতে থাকেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সাধ অনুযায়ী এই বাড়ি সংস্কার করতে প্রায় ৬০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে।
দুই একর জমির উপরে অবস্থিত একটি বাংলোতে থাকেন মায়াবতী। এই বাড়ি তৈরি করতে প্রায় ১০৩ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছিল। শুধু তাই নয় এই গৃহ নির্মাণের সময় পাশের জমিতে অবস্থিত এক বিলাসবহুল সরকারি বাড়ি ভেঙ্গে ফেলতে হয়।
এই নাটকে একটাই মোরাল পাওয়া যাচ্ছে। বিপদে পড়লে রাজনৈতিক নেতা নেত্রীরা শত্রু শিবিরের সঙ্গেও হাত মেলাতে পিছপা হন না। এখন প্রশ্ন হলো এই নেতা নেত্রীদের এর পরের পদক্ষেপ কী হতে চলেছে। এটা ঘটনা যে সরকারি বাসভবন ধরে রাখতে এই নেতা নেত্রীরা দিন রাত এক করে দেবেন।