কেন্দ্রে বিজেপির সুবিধা করে দিতেই রাজ্যে কংগ্রেসকে দুর্বল করার চেষ্টা করছেন মমতা
এনডিএ-ইউপিএ ছাড়া কেন্দ্রে সরকার গড়ার ক্ষমতা অন্য কারও নেই তা তৃণমূল জানে
- Total Shares
বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস যে ভিতরে ভিতরে জোট গড়ছে, গোপনে সমঝোতা করে চলছে তা চোখ খোলা রাখলেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির বিরুদ্ধে জোট গড়ার জন্য জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে কথা বলছেন, আবার দিল্লি থেকে রাজ্যে ফিরে এসেই তিনি সেই জাতীয় কংগ্রেসের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভাঙানোর চেষ্টা করছেন। জাতীয় স্তরে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে শুধুমাত্র কংগ্রেসই লড়াই করছে। তাই কংগ্রেসকে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিজেপির সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমঝোতা তৈরি হয়েছে, আর ঠিক এই কারণেই বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গে এসে নারদ ও সারদা নিয়ে কোনও কথা খরচ করছেন না। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে হবে কুস্তি আর দিল্লিতে হবে দোস্তি। এই সমঝোতা আছে বলেই তৃণমূলের কোনও অভিযুক্তকে ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা দুর্নীতিদমন শাখা) কোনও দিন গ্রেপ্তার করবে না, সিবিআই-ও কোনও দিন গ্রেপ্তার করবে না, কারণ এই দুই প্রতিষ্ঠানই এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। আয়করও তাদের কেশাগ্র স্পর্শ করবে না, কারণ তারাও এখন অমিত শাহদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
এ রাজ্যের কথা ভাবুন, বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ কী ধরনের কথা বলছেন। উনি তো এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট হয়ে উঠেছেন। বারে বারে তিনি এনকাউন্টার করার হুমকি দিচ্ছেন। লাশ ফেলে শ্মশানে পাঠাবেন বলছেন। এই ধরনের কথা বলার পরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে বা বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একটিও এফআইআর দায়ের করলেন না। মুখ্যমন্ত্রী একবারও বললেন না যে “দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে, আমি তাঁকে গ্রেপ্তার করব। তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হবে।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, কংগ্রেসে ভাঙন ধরানোর পিছনে বিজেপির ভূমিকা রয়েছে। জাতীয় কংগ্রেসকে যত দুর্বল করে দেওয়া যাবে, কেন্দ্রীয় ভাবে বিজেপির তত লাভ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে বিজেপি তাঁর স্বাভাবিক জোটসঙ্গী, স্বাভাবিক মিত্র। অতএব এর থেকে প্রমাণ করা যায় যে আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ফেডেরাল ফ্রন্ট বা তৃতীয় ফ্রন্ট তৈরি করতে যাচ্ছেন, তার মাধ্যমে আসলে উনি বিজেপির হাতকেই শক্ত করতে যাচ্ছেন। তাতে জাতীয় কংগ্রেস যে ধর্মনিরপেক্ষ ও সৌভাতৃত্বের রাজনীতি করে সারা ভারত জুড়ে, তার বিরুদ্ধে যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে অক্সিজেন জোগান, যদি কংগ্রেসকে ভাঙিয়ে তাদের দুর্বল করে দেন তাতে তাঁর নিজের যত না লাভ হবে তার চেয়ে অনেক বেশি লাভ হবে হবে বিজেপির।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব ভালো ভাবেই জানেন যে জাতীয় স্তরে হয় ইউপিএ (ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স) পরিচালিত সরকার তৈরি হবে, না হয় এনডিএ (ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স) পরিচালিত সরকার তৈরি হবে। লড়াইও হবে মূলত এই দুই শক্তির মধ্যেই। যে কোনও একটি দল ক্ষমতায় আসবে, অন্য কোনও রাজনৈতিক দল বা জোট দিল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার গড়তে পারবে না।
বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে বোঝাপড়া আছে, তা পরিস্কার করে দিতেই জাতীয় কংগ্রেস রাস্তায় নেমেছে, এই শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় কংগ্রেস লড়াই করবে।