এখনই কেন রাজ্যসভায় ডেপুটি চেয়ারম্যান পদে ভোট চাইছে না বিজেপি
পাটিগণিত কষে নিয়ে তারপরেই ভোট করাতে চায় বিজেপি
- Total Shares
দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে চান তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই আগেভাগেই রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান বা উপাধ্যক্ষ পদে সুখেন্দুশেখর রায়কে বসাতে চাইছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কট্টর সমালোচক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূলের কেউ রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হোক, এটা চাইছে না বিজেপি। রাজ্যসভায় বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হলেও, নিজেদের প্রার্থীকে জেতানোর ক্ষমতা তাদের নেই। তাই সম্ভবত এই পদ শূন্য রেখেই ১৮ জুলাই সংসদে বাদল অধিবেশন শুরু করতে চায় শাসকদল বিজেপি।
পদাধিকার বলে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হন উপরাষ্ট্রপতি। সাধারণ অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, অধিবেশন প্রত্যেক দিন ঘণ্টা দেড়-দুয়ের বেশি তিনি সভা পরিচালনা করেন না বা করতে পারেন না। মূলত ডেপুটি চেয়ারম্যানকেই সভা পরিচালনা করতে দেখা যায়। তাই কট্টর বিরোধী কেউ এই পদে থাকলে সংসদের উচ্চকক্ষে বিপাকে পড়তে হতে পারে সরকারপক্ষকে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ইউপিএ সরকারের রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখন চাইলেই তিনি তাঁর দলের ৪ জনকে পূর্ণ মন্ত্রী করতে পারতেন, কিন্তু তা তিনি করেননি। তাই এখন তাঁর ও তাঁর দলের তৎতপরতা থেকে দুটি ব্যাপার স্পষ্ট— তিনি এখন থেকেই পথ পরিষ্কার করে রাখতে চাইছেন এবং তাঁর প্রতি আঞ্চলিক দলগুলোর মনোভাব বুঝে নিতে চাইছেন।
সংবিধানের ৮৯ ধারায় বলা আছে, রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যানের পদ খালি হলে সেই পদ পূরণ করতে হবে। তবে এ জন্য কোনও সময়সীমা নির্দিষ্ট করা নেই। বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে ডেপুটি চেয়ারম্যানের পদ খালি রেখেই অধিবেশন পরিচালনা করা হয়েছে প্যানেল অফ ডেপুটি চেয়ারমেন দিয়ে। ২০০৬ সাল থেকে অন্তত ২ বার তেমন পরিস্থিতি হয়েছে। তবে রাজনৈতিক কারণে সাম্প্রতিক অতীতে এই পদ ফাঁকা থাকছে সম্ভবত এই প্রথম।
মাত্র তেরোটি আসন থাকলেও, তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন, এই পদে বসুন তাঁর দলের সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। সংবাদমাধ্যমের খবর, কংগ্রেস আগেভাগেই তাঁকে সমর্থন করে দিয়েছে। তাতেও অবশ্য ২৪৫ আসনের রাজ্যসভায় ভোটে জেতা দূর অস্ত। এখন ৫টি আসন ফাঁকা রয়েছে। বিহার থেকে একটি ও মনোনীত ৪টি। সেই হিসাবে ১২১টি ভোট দরকার জেতার জন্য। এই অবস্থায় কংগ্রেস (৫০টি আসন) ও তৃণমূল মিলিয়ে হচ্ছে ৬৩টি আসন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন, এই পদে বসুন তাঁর দলের সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়।
রাজ্যসভায় অবশ্য তৃণমূল সমর্থন পেতে পারে উত্তরপ্রদেশের মুলায়ম সিং যাদব-অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি (১৩টি), মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি (৪টি), অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টি (৬), তেলাঙ্গনার কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের তেলাঙ্গনা রাষ্ট্র সমিতি (৬), দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ (৩), বিহারে লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডি (৫), মহারাষ্ট্রে শরদ পওয়ারের এনসিপি (৪), এবং সিপিএম (৫) ও সিপিআই (২)-এর।এ ছাড়াও সমর্থন পেতে পারে মুসলিম লিগ, জনতাদল সেকুলার প্রভৃতির। তবে এদের সকলেরই একটি করে আসন। ৬ জন নির্দলের মধ্যে কারও সমর্থন যদি জোগাড় করেও ফেলে, তা হলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যা থেকে তারা অনেক দূরে রয়ে যাচ্ছে। চন্দ্রবাবুর সঙ্গে মমতার তেমন ঘনিষ্ঠতা অবশ্য নেই, তবে এক সময়ে ইউপিএ শরিক চন্দ্রবাবুর সঙ্গে এখন বিজেপির সম্পর্ক তলানিতে। তাই তিনি বিজেপি বিরোধী শিবিরে থাকতেই পারেন।
একক ভাবে রাজ্যসভায় বিজেপি এখন সবচেয়ে বড় দল, মনোনীত ৪ জন সদ তাদের সদস্য ৬৯ জন। সহযোগী দল বিহারের নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড (৬) পঞ্জাবের শিরোমণি অকালি দল (৩) ও মহারাষ্ট্রের শিবসেনা (৩) এবং বিভিন্ন রাজ্যে তাদের সহযোগী দলগুলির একটি-দু’টি করে আসন রয়েছে। তাও তারা ইউপিএ জোটের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে। এই অবস্থায় জয়-পরাজন নির্ভর করছে তামিলনাড়ুর দুই দল জয়ললিতার এডিএমকে (১৩), করুণানিধির ডিএমকে (৪), ওড়িশার নবীন পট্টনায়কের বিজেডি (৯), জম্মু-কাশ্মীরের পিডিপি (২), নির্দল ও অন্য ছোট দলদুলি কোনদিকে ভোট দেবে তার উপরে। এক সময়ের সহযোগী দল এডিএমকের সঙ্গে এখন বিজেপির সখ্য নেই। তারা ভোট দেবে কিনা, দিলে কোন দিকে দেবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
এখন বিজেপি চাইছে বাদল অধিবেশন পার করে দিতে। তবে তারা বসে নেই। এই পদে সর্বসম্মত ভাবে কাউকে বসানোর কথা বলেছেন উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু। বিজেপির শীর্ষনেতারা এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। এখনও তারা প্রার্থী খুঁজে পায়নি। রাজ্যসভার সদস্যদের মধ্য থেকেই কাউকে বেছে নিতে হবে। বিজেপি এখন সেই প্রার্থী খুঁজতে ব্যস্ত।
প্রতিভা পাটিলকে রাষ্ট্রপতি পদে দাঁড় করিয়ে চমক দিয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধী
বিজেপি কী পদক্ষেপ করে, সে দিকে তাকিয়ে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস-সহ সবকটি বিরোধী দলই। বিজেপি নিজের দলের কাউকে প্রার্থী না করে অন্য কোনও ছোট দলের কাউকে প্রার্থী করতে পারে তারা। যেমন চন্দ্রবাবু নাইডুর মন গলাতে বিজেপি তাঁর দলের কাউকে প্রার্থী করে বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করতে পারে।
দেশের রাষ্ট্রপতি ভোটে প্রথমবার চমক দিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের মনোনীত প্রার্থীকে বিবেক ভোট দেওয়ার কথা বলে। প্রতিভা পাটিলকে রাষ্ট্রপতি পদে দাঁড় করিয়ে চমক দিয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধী। রাষ্ট্রপতি পদে একই রকম ভাবে রামনাথ কোবিন্দকে প্রার্থী করে চমক দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদীও। এই ধরনের চমক দেওয়া মুশকিল রাজ্যসভায়। কারণ নির্দিষ্ট কয়েকটি নামের বাইরে বার হওয়ার কোনও উপায় নেই। তবে কংগ্রেসের মধ্য থেকে কাউকে যদি বিজেপি প্রার্থী করতে চায় (যে ভাবে রাষ্ট্রপতি পদে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে কংগ্রেস প্রার্থী করলে তাঁকে সমর্থনের কথা আগাম জানিয়ে রেখেছিল বিজেপি) তা হলে বিরোধী শিবিরে তারা ধাক্কা দিতে পারবে। মমতাও খুব একটা সুযোগ পাবেন না বিরোধী ঐক্য ঝালিয়ে নেওয়ার।
কর্নাটকে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েও দু’দিনের বেশি রাজত্ব করতে পারেনিন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদ্যুরাপ্পা। রাজ্যসভায় উপাধ্যক্ষ নির্বাচনের আগে তাই পাটিগণিত কষে নিয়ে তারপরেই মাঠে নামতে চাইছে বিজেপি।