পাকিস্তানে বিমান আক্রমণ অন্য ভারতকে দেখাল, যারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠিন ও কঠোর

এর আগে ২৬/১১-র বদলা পর্যন্ত নেওয়া হয়নি, এবার ভারত দেখাল তারা বদলেছে

 |  5-minute read |   26-02-2019
  • Total Shares

উদ্বেগের পাশাপাশি উত্তেজিত হয়ে নানা রকম সম্ভাবনা নিয়ে বেশ কয়েকদিন অপেক্ষা করার পর ভারত ঠিক সেই কাজটাই করল যে কাজটি করার জন্য আমরা অনেকেই সওয়াল করেছি। তবে বিমান হামলায় জৈশ-ই-মহম্মদের প্রশিক্ষণ শিবির উড়িয়ে দিয়ে আমরা নাটকীয় ভাবে জয়যুক্ত হব, তা আমরা মোটেই চাইনি। মৌলানা মাসুদ আজহারকে এখনও দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়নি এবং তার প্রধান কার্যালয়টিও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়নি।

তবে বিমান-হামলা, তা যে পর্যায়েরই হোক না কেন, সব সময়ই বড় সাফল্য হিসাবে গণ্য করা হয়।

কেন তা করা হয়, সে কথাই বলছি।

এখনও পর্যন্ত, ভারত যে কথা বলে এসেছে তা হল আমরা শুধুমাত্র পাক অধিকৃত কাশ্মীরেই কোনও আঘাত হানতে পারি এবং আমাদের সেনা যে অঞ্চলে এই আক্রমণ করছে সেই এলাকা আসলে ভারতেরই বলে আমরা দাবি করে থাকি। যদি আগের সব ইঙ্গিতগুলো সঠিক হয়ে থাকে, তা হলে এই হামলার গভীরতা অনেক বেশি – ভারতীয় সেনা পাকিস্তানের মধ্যে প্রবেশ করেছে, শুধুমাত্র অন্যায় ভাবে পাকিস্তানের দখল করে থাকা কাশ্মীরে (পাক অধিকৃত কাশ্মীর) নয়।

শত্রুশিবিরের একেবারে ভিতরে প্রবেশ করায় বার্তাটাও স্পষ্ট হয়ে গেছে। সীমান্তের উভয় পারে কাশ্মীরী জঙ্গিদের ব্যাপারে ও সন্ত্রাসবাদী হামলার জন্য আমরা আর কাউকে দোষ দিই না – আমরা দোষ দিই পাকিস্তান রাষ্ট্রকে, যারা অন্য সন্ত্রাসবাদীদের মদত দেওয়ার পাশাপাশি পাশাপাশি তাদের স্থায়ী ভাবে অস্ত্রের জোগানও দিয়ে আসছে। যদি পাকিস্তান তাদের উঠোনে সাপ পুষে রাখে তা হলে যে কোনও দিন সেই উঠোন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।

imran-bajwa_02261902_022619083529.jpgএ বার আর কাশ্মীরী জঙ্গি নয়, এবার পাকিস্তানের একেবারে অভ্যন্তরে। (সূত্র: টুইটার)

বিমান বাহিনী কাজে লাগানোর ব্যাপারে ভারত সরকার দীর্ঘদিন ধরেই বাধা দিয়ে এসেছে, তার কারণ হল: (ক) এ থেকে মনে করা হতে পারে যে রীতিমতো সেনা নামিয়ে পরিপূর্ণ যুদ্ধ শুরু করা হচ্ছে এবং (খ) সীমান্ত পার করে বায়ুসেনার বিমান পাকিস্তানে প্রবেশ করবে কিন্তু পাকিস্তান তা জানতে পারবে না – ব্যাপারটা খুবই কঠিন এবং তারা আমাদের বায়ুসেনার বিমান দেখলেই গুলি করে নামিয়ে দিতে পারে।

এই সব বাধা অতিক্রম করেই আমরা ঝুঁকি নিয়ে এগিয়েছি এবং থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে দেশ হিসাবে ভারত অনেক বেশি সাহসী হয়েছে।

এখন আমাদের বিমান পাকিস্তানের বায়ুসীমার মধ্যে প্রবেশ করেছে এবং বেরিয়েও এসেছে যা থেকে আমরা আরও একবার দেখিয়ে দিতে পেরেছি যে সহজ কথায় আমরা তাদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী।

যে সময় ভারতীয় গণমাধ্যমের একাংশ পাকিস্তানের নীতি-নির্ধারণকারীদের জিহাদি-রূপে তুলে ধরার ব্যাপারে চেষ্টা করেছে, সেই কয়েক দশক সময় ধরে আসলে তারা ভুলভাল নীতি নিয়ে ভাবনাচিন্তা কয়েছে এবং দেশের ভাবনাকে ধর্তব্যের মধ্যে আনেনি। তাদের হিসাবটা খুব সরল ছিল – যদি পরিপূর্ণ ভাবে যুদ্ধ হয় তা হলে তাতে ভারতই জিতবে। আর দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে কোনও মতেই যুদ্ধ হতে দেবে না পুরো বিশ্ব। সুতরাং পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় আশার জায়গা ছিল তারা উপমহাদেশে যুদ্ধ করার বদলে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালিয়েই যাবে।

আর এই সব হামলার জবাবও ভারত দেবে সেই চিরকালীণ প্রথা মেনেই, আর আমাদের দেশের মনে একটা ভয় রয়েই গিয়েছিল যে – কোনও ভাবে পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরু হলে পরমাণু হামলা করে তার জবাব দেওয়া হতেই পারে। তাই ভারত চিরকাল পিছনের আসনে বসে থেকে ঘ্যানঘ্যান করতে থাকবে এবং কোনও দিনই উচিতমতো অস্ত্র দিয়ে এর জবাব দেবে না – এটাই নিয়মে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।

পুলওয়ামায় হামলার যে জবাব দেওয়া হয়েছে তাতে একটা কথা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে নতুন দিল্লির সেই তথাকথিত গয়ংগচ্ছ ভাবে ইতি টেনেছে, কূটনৈতিক মোকাবিলার ভাবভঙ্গি ও আন্তর্জাতিক মহলে অনুনয়-বিনয়ের দিন পিছনে ফেলে দিয়েছে। তার বদলে আমরা আমাদের শক্তি প্রয়োগ করেছি – ভারতীয় বায়ুসেনা, এ ক্ষেত্রে আক্রমণ করেছে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে।

download_2_022619083709.jpgআমরা আমাদের সহজাত বিদ্যা প্রয়োগ করেছি, আকাশ পথে হামলা করেছি। (সূত্র: রয়টার্স)

এই ভাবে জবাব দেওয়ার কৌশল যে দ্রুত অপারেশন সমাপ্ত করে ফেলার জন্যই, সে কথা আমি আগেও লিখেছি – বিশ্ব তা বুঝে ওঠার আগেই। যখন এই কাজটি করা সম্পূর্ণ হয়ে যাবে তখন আমরা কূটনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারি। তবে আজকের এই আক্রমণে একটা ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, আমরা খুব স্বাভাবিক একটা পন্থাই আমরা অনুসরণ করেছি।

যে মার্কিনিরা কাশ্মীরকে “বিশ্বের ভয়ঙ্করতম স্থান” বলে বর্ণনা করে এসেছে, তাদের সুরে সুর মিলিয়েই ভারতীয রাজনীতিকরা বলে এসেছেন পাকিস্তানকে কোনও ভাবে আক্রমণ করলেই পরিস্থিতি পরমাণু যুদ্ধের দিকে চলে যেতে পারে। এখনও পর্যন্ত আমরা অন্তত একটা ব্যাপার বুঝে গিয়েছি যে – এটা ছিল কিছু না করার একটা অজুহাত।

অদ্ভুত ব্যাপার হল, পাকিস্তান কোনও দিনও এ কথা ভাবেনি যে ভারতের অভ্যন্তরে কোনও হামলা করলেও – ধরা যাক মুম্বাই অবরুদ্ধ করে রাখা – তা পরমাণু যুদ্ধের দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। ইসলামাবাদও বুঝে গিয়েছিল নীতিজ্ঞানমূলক বুলি আওড়ানো ছাড়া দিল্লিও আর কিছুই করবে না।

image3_022619083733.jpg ২৬/১১-র মতো ভয়াবহ হামলার পরেও কোনও প্রতিশোধ নেওয়া হয়নি। (সূত্র: রয়টার্স)

এর ফলে (ভারতের নিজের তৈরি) একটি বেদনাদায়ক অসাম্য তৈরি হয়েছিল যার অর্থ হয়ে দাঁড়িয়েছিল – পাকিস্তানিরা যে কোনও ধরনের চোরাগোপ্তা হামলা করে যাবে আর ভয়ঙ্কর পরমাণু যুদ্ধের কথা বলে পিছিয়ে যাওয়ার আগে গরম গরম বুলি আওড়াবে নতুন দিল্লি।

আমি গত সপ্তাহেই বলেছিলাম যে এই ধারনাটা ভাঙতে হলে ভারতকে কৌশল বদলাতে হবে, একই সঙ্গে যুদ্ধের কৌশলও বদল করতে হবে যাতে কোনও রকম সংজ্ঞায়িত যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়ে সেনার দক্ষতা কাজে লাগিয়ে অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে কোনও আক্রমণ করে ভারত।

হ্যাঁ, পাকিস্তান প্রত্যাঘাত করবেই – কিন্তু না, ওরা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে না। কারণ মাসুদ আজহারে প্রশিক্ষণ শিবির গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে হেস্তনেস্ত করতে পরমাণু যুদ্ধকে কোনও পাকিস্তানিই সমর্থন করবে না।

masood4_022619083805.jpgতাঁর সময় হয়ে এসেছে, সব পাকিস্তানিই এ কথা জানেন। (উৎস: রয়টার্স)

আমরা কি পাব – আমরা উরির পরে যা পেয়েছি – আরও আত্মঘাতী হামলা।

এটা ঠিক আছে। এই ধরনের হামলা আমাদের উপরে হতই। কিন্তু মাসুদ আজহার যাদের পছন্দ করে তারা যখন বুঝবে যে তারা আমাদের লক্ষ্যে রয়েছে তখন তারা হামলা চালাতে ভয়ঙ্কর বেপরোয়া হয়ে উঠবে।

এই বিমান আক্রমণকে আপনি দু-ভাবে দেখতে পারেন। আপনি মনে ভাবতে পারেন যে এটা হল মোদী সরকারের ভোটে জেতার কৌশল – অনেকেই এখন বিষয়টিকে সেই ভাবেই দেখবে।

inside-modi_5_022619083830.jpgএই পদক্ষেপ একটি নতুন বার্তা বহন করবে – সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নরম মনোভাব নয়। (সূত্র: রয়টার্স)

এটাকে ঠিক যা, এটাকে সেই ভাবেও দেখতে পারেন; একটা নতুন যুগের সূচনা যেখানে বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে ভারত নরমপন্থী দেশ নয়। তুমি আমার সেনাকে হত্যা করার সাহস দেখাতে পার। ঈশ্বরের নামে দিব্বি করে বলছি, আমরা জবাব দেব।

যদি দেশ হিসাবে একেবারে হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকেও প্রত্যাঘাত আসে তা হলেও।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

VIR SANGHVI VIR SANGHVI @virsanghvi

The writer is a senior journalist, columnist, and talk show host.

Comment