তেলঙ্গানা নির্বাচন: কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট কি পারবে কেসিআর-কে হারাতে?
কংগ্রেসের প্রজা কুটমি রাজ্যে প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে টিআরএস-কে হারাতে বদ্ধপরিকর
- Total Shares
রাজ্যের শাসকদল তেলঙ্গানা রাষ্ট্রসমিতি ও তার প্রধান কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের (কেসিআর) এখনও ধীরে চলছেন তবে কংগ্রেস উদ্ভাবিত প্রজা কুটামি (জনতার জোট) রাজ্যের প্রথম বিধানসভা নির্বাচনেই রাজ্য থেকে টিআরএস-কে ক্ষমতাচ্যুত করার ব্যপারে আশাবাদী। ২০১৪ সালের ২ জুন এই রাজ্য গঠিত হওয়ার পরে এই প্রথম নির্বাচন। ১১৯টি বিধানসভা আসন বিশিষ্ট এই রাজ্যে ভোট ৭ ডিসেম্বর, মানে মেরেকেট আর চার সপ্তাহ বাকি।
এখনও পর্যন্ত যারা জোটে রয়েছে তারা সকলেই বলছে যে তারা একযোগে লড়াই করবে। ১ নভেম্বর যখন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এবং তেলুগুদেশম পার্টির প্রধান এন চন্দ্রবাবু নাইডু তাঁদের ছবির জন্য পোজ দিলেন তখন তাঁরা এই জোট গড়ার কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
জোটসঙ্গী কংগ্রেস, তেলুগুদেশম পার্টি, তেলঙ্গানা জন সমিতি এবং ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির কে কটা করে আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। নির্বাচনে লড়ার ব্যাপারে আগ্রহীদের সংখ্যা প্রচুর, এমন বহু বিধানসভা আসন রয়েছে যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন তিন থেকে চার জন করে প্রভাবশালী ব্যক্তি আর প্রতি চারটি আসনের মধ্যে তিনটিতেই অন্য জোটসঙ্গীর তুলনায় কংগ্রেসই বেশি প্রভাবশালী।
আগে কে কোন আসন পাচ্ছে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে, সেটা হয়ে গেলে তবেই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে। জোটসঙ্গীরা কেউই চাইছিলেন না যে প্রার্থী হবেন বলে আশা করে যাঁরা বসে আছেন তাঁদের কারও দীপাবলির আনন্দটা মাটি হয়ে যাক, তাই ৯ নভেম্বরের পরে তাঁরা বিস্তারিত ঘোষণা করার ব্যাপারে প্রস্তুত হচ্ছেন।
এই অতিরিক্ত দেরির একটা কারণ হল বহু আগে, ৬ সেপ্টেম্বর যে দিন কেসিআর বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন, সেই দিনই ১০৫ জন প্রার্থীর নামও ঘোষণা করে দিয়েছিলেন – কারণ কৌশলগত ভাবেই তিনি আগেভাগে নির্বাচন চাইছিলেন। তিনি যেটা ধর্তব্যের মধ্যেই আনেননি তা হল ভোট হবে আরও অন্তত ৯০ দিন পরে।
এই দীর্ঘ সময় ধরে নাগাড়ে প্রচার চালিয়ে যাওয়া টিআরএরে পক্ষে খুব সমস্যা হয়ে গিয়েছে তা প্রমাণিত। কয়েকজন টিআরএস প্রার্থী দেখছেন যে ভোটাররা একেবারে আগ্রহ তাঁদের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। যেমন বিনাপয়সায় দাড়ি কামানো, জনসমাবেশে বয়স্কদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করা, পাড়ায় খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা, কারও বাড়িতে জয় বয়ে দিয়ে আসা এমনকি বাচ্চাকে খাইয়ে দেওয়া পর্যন্ত।
দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালিয়ে যাওয়াটাই এখন কেসিআর ও তাঁর দলের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ (ছবি: পিটিআই)
কংগ্রেস এবং তাদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা প্রজা কুটমি জোট এখন তাদের কাছে আচমকাই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আকস্মিক ভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় টিআরএসের বিরুদ্ধে বিদ্বেষও যেন ক্রমেই মাথাচাড়া দিচ্ছে। জোটসঙ্গীরা তাদের প্রার্থী ঘোষণা পিছিয়ে দিয়ে সম্ভাব্য সমস্যা ও ক্ষতি কমাতে চাইছে যাতে যাঁরা প্রার্থী হতে পারবে না তাঁরা নির্দল হিসাবে অথবা টিআরএস বা বিজেপির (যারা সবকটি আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা করেছে) প্রার্থী হয়ে খুব একটা সুবিধা করতে না পারেন।
যদি প্রার্থীদের এক আসন থেকে অন্য আসনেও পাঠিয়ে দেওয়া হয় আবার কোনও প্রভাবশালী যদি জোটের প্রার্থী হতে না পারেন তা হলে তিনি যদি দলবল নিয়ে সরে যান তা হলেও জোটের ভোটে ব্যাপক ভাবে ধস নামতে পারে।
কংগ্রেস বড় শরিক হলেও জোটে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল কাউকে সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তুলে না ধরতে পারা। উল্টোদিকে তাদের সুবিধা হল রাজ্যে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া এবং সেখানে জনতাকে উদ্ধার করতে আসছে এমন একটা ভাবমূর্তি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে বহু গ্রামেই টিআরএস প্রার্থীদের বিরুদ্ধে জমা থাকা ক্রোধ ও শাসকদলের বিরুদ্ধে চোরা স্রোত বিরোধীদের সুবিধা করে দেবে।
ঠিক কোন কোন ব্যাপারগুলো তাঁর বিরুদ্ধে যাচ্ছে সে ব্যাপারে খুব ভালো ভাবে অবগত রয়েছেন কেসিআর তবে তিনি অকারণ ভীতও হচ্ছেন না। তিনি এখন চূড়ান্ত ভাবে সুবিধা দেওয়ার রাজনীতি করছেন – তাঁর সরকার যে সব প্রকল্প চালু করেছে রাজ্যের প্রায় প্রতিটি সংশ্লিষ্ট পরিবারই তার থেকে কোনও না কোনও সুবিধা পাচ্ছে। এই ধরনের সুযোগসুবিধা দিয়েই কংগ্রেসের ওয়াইএস রাজশেখর রেড্ডি বহু আসনে জয়ী হয়ে ২০০৯ সালে দ্বিতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন।
প্রবীণ কংগ্রেস নেতা ও তেলঙ্গানার অন্যতম প্রধান রাজনীতিক এস জয়পাল রেড্ডি বলেন, “আমার মনে হয় কেসিআর একটু ভয় পেয়ে গিয়েছেন। আমার মনে হয় যে রাজ্যে ভোট এগিয়ে আনা নিয়ে তাঁর নিজের যে সিদ্ধান্ত, সেই সিদ্ধান্তে তিনি নিজেই খুশি নন। নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে লোকে ততই স্পষ্ট ভাবে তাঁদের হতাশার কথা প্রকাশ করছেন এবং তাঁর দেওয়া যে সব দারুণ দারুণ প্রতিশ্রুতি এখন পূরণ হয়নি সে কথা বলছেন। আমার বাস্তব ভাবনা বলছে যে কংগ্রেস এখানে চমক দেবে।” তবে তিনি কতটা ঠিক বছলেন সেই উত্তর পাওয়ার জন্য ১১ ডিসেম্বরল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
(সৌজন্য: মেল টুডে)
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে