সিবিআই বনাম কলকাতা পুলিশ: সুপ্রিম কোর্টের রায় ও সারদা-সিপি-সিবিআই

বেশ কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট না হলে গ্রেফতারের কোনও প্রশ্নই ওঠে না

 |  3-minute read |   05-02-2019
  • Total Shares

নিছক একটা আইনি লড়াই দিন তিনেকের জন্য ভারতের সংবাদমাধ্যমে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার একটা মরিয়া চেষ্টা হল। সংবাদমাধ্যম অসহায়, কারণ তাকে ঘটনার বিবরণ দিতে হবে এবং সেই বিবরণ দিতে গিয়েই সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্ত -- এই বিষয়টি কতটা আইনি, আর কতটা রাজনৈতিক!

কোনও এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় তদন্তকারী সংস্থা। তাঁর জন্য প্রয়োজনীয় আমন্ত্রণ তাঁকে বহু বার জানানো হয়েছে। তিনি সেই আমন্ত্রণে সাড়া দেননি। অত্যন্ত স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অন্য যে কোনও সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এই রকম একটা পরিস্থিতিতে নিশ্চিত ভাবে সেই তদন্তকারী সংস্থা সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা হাসিল করে নিত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিটি যেহেতু ভিন্ন ধরনের, তাই তদন্তকারী সংস্থা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেই ব্যক্তির বাড়িতে হাজির হয়েছিল।

  • এখন প্রশ্নটা হচ্ছে যে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪০ জনের হাজিরার কী প্রয়োজন?

আমার মনে হয় উত্তরটা পরবর্তী তিন দিনে অত্যন্ত স্পষ্ট।

যে ব্যক্তি তদন্তকারী সংস্থার আমন্ত্রণ অগ্রাহ্য করতে পারেন, যে ব্যক্তির বাড়িতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছে যেতে পারেন, যে ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টায় সারা ভারত আন্দোলিত হয়ে উঠতে পারে, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ৪০ সংখ্যাটি বোধহয় নেহাতই নগণ্য।

sh1_7897_020519040727.jpgধর্নামঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (ছবি: সুবীর হালদার)

মাননীয় পাঠকদের মনে রাখা প্রয়োজন যে কোথাও গ্রেফতার নামক বিষয়টির প্রসঙ্গ এক বারের জন্যও আসেনি এবং আসা সম্ভবও নয়। সে জন্য এ নিয়ে যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে সেটা স্পষ্ট হওয়া উচিত, এই একই বিষয়ে এর আগে যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে সেই গ্রেফতারি ঘটেছে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরে।

এই বিষয়টি মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই, কোনও মানুষ ক্ষেপানো নেই, এটা নিছক ও নেহাত আইনি, কোনও নৈতিক জয়-পরাজয়ের প্রশ্ন নেই। এই রকম একটা অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি পৌঁছেছিল সুপ্রিম কোর্টের চার দেওয়ালের মধ্যে।

গ্রেফতার, গ্রেফতার, গ্রেফতার – এই শব্দটাকে ব্যবহার করে মানুষ খেপানোর কাজটা রবিবার থেকে চলে এসেছে, ঠিক শব্দটিকেই হাতিয়ার করে নৈতিক জয়ের স্লোগান তোলা হয়েছে। কিন্তু ঘটনাক্রম নেহাতই আইনি, তাই আইনেই ব্যাখ্যাটি স্পষ্ট হওয়া অত্যন্ত জরুরি। তদন্তকারী সংস্থা জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিল, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং তার সঙ্গে যুক্ত প্রভাবশালীরা সেই পদ্ধতি এড়াতে চেয়েছিলেন। এখন তদন্তকারী সংস্থা জিজ্ঞাসাবাদের অধিকার পেয়েছে।

এটা ঠিক যে সেই সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট দিন রাখা হয়েছে যে দিন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা যাবে না। এটাই একটি অত্যন্ত স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়া, কারণ জিজ্ঞাসাবাদ শুরুই হয়নি, সে ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসাবাদে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কী ভূমিকা পলন করবেন, জিজ্ঞাসাবাদে তদন্তকারী সংস্থা সন্তুষ্ট হল কি হল না – এই বিষয়গুলি স্পষ্ট না হলে গ্রেফতারের কোনও প্রশ্নই আসে না।

পরবর্তী শুনানির দিন রাখা হয়েছে ২০ জানুয়ারি। অতএব সে দিন পর্যন্ত গ্রেফতার না হওয়াটাই স্বাভাবিক। জিজ্ঞাসাবাদের গতিপ্রকৃতি নিয়ে তদন্তকারী সংস্থা সেদিন সর্বোচ্চ আদালতের সামনে কী বক্তব্য রাখবে তার উপরে পরবর্তী ক্রিয়াকলাপ নির্ভর করবে। অতএব এখানে জয় বা পরাজয়ের কোনও প্রশ্ন নেই।

sc1_pti_020519041036.jpgসু্প্রিম কোর্ট (ছবি: পিটিআই)

দ্বিতীয় বিষয় আদালত অবমাননা। তদন্তকারী সংস্থার এই অভিযোগকে প্রাথমিক ভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এবং সেই কারণেই তিনজন সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে নোটিস পাঠানো হচ্ছে এটাই আদালতের স্বাভাবিক নিয়ম এবং আগামী দিনে তার বিচার প্রক্রিয়া চলবে।

কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে জয়পরাজয়ের দাবি নিয়ে মানুষ ক্ষেপানোর একটা প্রক্রিয়া চালু রয়েছে সেখনে জয়ের আনন্দে আন্দোলিত হওয়ার আগে আরও একটা বিষয় মাথায় রাখা উচিত যে তদন্তরকারী সংস্থাটি একটি সর্বভারতীয় সংস্থা, তাঁদের কাছে কলকাতাও যা, ভুবনেশ্বর তাই এবং শিলং হলেও তাঁদের কিছু যায় আসে না। অতএব আইনের লড়াইয়ে আইনের উপরে ভরসা রাখাটাই বাঞ্ছনীয়।

রাজনৈতিক কাদা মেখে নির্বাচনী ভোট বাক্সে কী প্রতিফলন ঘটবে তা ভবিষ্যৎ বলবে। যে লক্ষ-কোটি মানুষের প্রতারণার পরিপ্রেক্ষিতে এই মামলা, তাঁরা যে তিমিরে ছিলেন এখনও সেই তিমিরেই রয়ে গেলেন।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

PRASENJIT BAKSI PRASENJIT BAKSI @baksister

The writer is a veteran journalist.

Comment