বন্যা মোকাবিলায় কাজ শুরু রাজ্যের, রিয়েলটাইম মনিটরিং, চালু হয়েছে অ্যাপ
বর্ষা আসার অপেক্ষা না করে ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে কন্ট্রোলরুম
- Total Shares
বর্ষা যবেই আসুক না কেন, আমরা ২৮ মে পুরো পশ্চিমবঙ্গের সব জেলাকে নিয়ে প্রাকবর্ষা বৈঠক করেছি। প্রথম সিদ্ধান্ত হয়েছে, ১ জুন, অর্থাৎ গতকাল থেকেই সমস্ত কন্ট্রোলরুম চালু হয়ে গেছে দিনরাতের জন্য। এই কন্ট্রোলরুমগুলি থেকে ২৪X৭ পর্যবেক্ষণ ও নজরদারিও শুরু হয়ে গিয়েছে। এখানে টোলফ্রি নম্বর থাকবে (জলসম্পদ ভবন কন্ট্রোলরুম 18003450117, জলপাইগুড়ি কন্ট্রোল রুম 18003453255), অ্যাপস চালু হয়ে গেছে, জনগণ এই অ্যাপের মাধ্যমে খবর দিতে এবং খবর সংগ্রহ করতে পারবেন। আমাদের ওয়েবসাইট থেকেও পারবেন।
উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহ মিলিয়ে মালদহ পূর্ব মেদিনীপুর; পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম মিলিয়ে মেদিনীপুর; উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও কলকাতা মিলিয়ে কলকাতা; দুই বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম ও পুরুলিয়া মিলিয়ে বর্ধমান; কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং নিয়ে জলপাইগুড়ি-- এই ভাবে জেলাগুলিকে ভাগ করে প্রত্যেকটি ডিভিশন অফিসে একটি করে আলাদা কন্ট্রোলরুম করা হয়েছে।
বাঁধ উপচে জল ঢুকছে গ্রামে (ফাইল চিত্র)
যে সব জায়গা বন্যাপ্রবণ, সেখানে বাঁধের উপরে নজরদারির জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় আমাদের যে সেকশন অফিস রয়েছে বা বিভাগীয় অফিস রয়েছে তাদের ইঞ্জিনিয়ারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই সব অফিসে কোন ইঞ্জিনিয়ার কোন দায়িত্ব কখন কী দায়িত্ব পালন করবেন তা নির্ধারিত করে ২৪X৭ হিসাবে রোস্টার ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। কবে বর্ষা আসবে সে জন্য অপেক্ষা না করে ১ জুন থেকেই এই রস্টার কার্যকর করা শুরু হয়ে গেছে।
কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি – মূলত এই জেলাগুলিতে অনেক খাল-বিল রয়েছে। আমরা নির্দেশ দিয়েছি, কোথাও যদি কোনও আবর্জনা থেকে থাকে বা কচুরিপানার মতো কিছু থেকে থাকে সেগুলো পুরো পরিষ্কার করে জলের স্রোত স্বাভাবিক রাখতে।
ঝাড়খণ্ডের তেনুঘাট জলাধার থেকে প্রতি বছরই জল ছাড়ে, যার ফল এ রাজ্যকে ভুগতে হয়। গত বছর আমরা অনুরোধ করেছিলাম জলস্তর (লেভেল) কমাতে, কিন্তু ওরা শোনেনি। এ বারেও আবার আমরা চিঠি দিয়েছি জলস্তর (লেভেল) কমানোর জন্য, কারণ আমাদের এখানে বর্ষা আসন্ন। ঝাড়খণ্ডে যদি ভারী বর্ষা হয় তা হলে আমাদের আরও সমস্যা বাড়বে। ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ এমনই একটা রাজ্য যাকে সবচেয়ে বেশি প্রতিবেশী রাজ্য ও রাষ্ট্রের জল বহন করতে হয়। আমাদের সমস্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের জলও আমাকে নিতে হবে, আবার বাংলাদেশ-ভুটানের জলও আমায় নিতে হবে, বৃষ্টির জলও নিতে হবে আবার জলাধারের জলও নিতে হবে। সুতরাং সকলে যদি সহযোগিতা না করে তা হলে পরিস্থিতি কী ভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব?
প্রতি বছরই ভিনরাজ্যের জলে ভাসে পশ্চিমবঙ্গ। এই পরিস্থিতি বদলাতে চায়. রাজ্য (ফাইল চিত্র)
ঝাড়খণ্ডকে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি আমরা চাইছি তেনুঘাট জলাধারকে ইউনিফায়েড নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে। গতবারেও আমাদের এই দাবি ছিল। এ বারেও যখন কেন্দ্রীয় জলসম্পদমন্ত্রী এসেছিলেন, তাঁকেও আমরা আমাদের দাবির কথা জানিয়েছি। এখনও কোনও বিজ্ঞপ্তি বেরয়নি। জলসম্পদ মন্ত্রককেও জানিয়েছি তেনুঘাট যেন ডিবিআরএস-এর রেগুলেশন কমিটির মধ্যে থাকে।
এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় আমরা নিজেরা তো প্রচার চালাচ্ছিই যাতে মানুষ এই সময় খালবিল পরিষ্কার রাখে, আবর্জনা না ফেলে। কোনও কোনও সমস্যা দেখলে যেন নজরে নিয়ে আসে। এ ছাড়াও আমরা নিয়মিত ভাবে কেন্দ্রীয় জস কমিশন (সিডব্লিউসি) এবং আবহাওয়া দপ্তরের (আইএমডি) সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। এ জন্য আগামী ৬ বা ৭ জুন উত্তরবঙ্গে এবং ১১ জুন কলকাতায় আমি একটি বৈঠক করছি।
রিয়েল টাইম ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মধ্যে আমাদের সমস্ত জায়গার ইঞ্জিনিয়ারদের এসএমএস আপডেট হয়। এর মধ্যে থাকে কোথায় কত বৃষ্টি হয়েছে, কোথায় জলস্তর কত বেড়েছে প্রভৃতি এবং কী করা উচিৎ। জেবা প্রশাসনের সঙ্গে নিবিড় ভাবে সংযোগ রেখেই এই কাজ করা হয়।