শোভন ইস্তফার নেপথ্যে কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক

ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই জেলা সভাপতি শোভনের সঙ্গে ঝামেলার সূত্রপাত

 |  2-minute read |   21-11-2018
  • Total Shares

মন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে খোয়ালেন কলকাতা পুরসভার মেয়রের পদটিও। এখন প্রশ্ন হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ এক সৈনিকের এই ভাবে পদত্যাগের কারণটি কী? বস্তুত পক্ষে, তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে শেষ কয়েক মাস একেবারে কোনঠাসা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু কেন? শোভনের এই কোণঠাসার হওয়ার নেপথ্যে মুখ্য ভূমিকা কার ছিল?

তৃণমূলের অন্দরমহলে কান পাতলেই একটি নামই শোনা যাচ্ছে - মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৪ সালে ডায়মন্ড হারবার থেকে নির্বাচন জিতে লোকসভার সাংসদ হন অভিষেক। সেই সময়ে শোভন চট্টোপাধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সভাপতি। আর, তখন থেকেই দু'জনের মধ্যে ঝামেলার সূত্রপাত।

২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে নারদা কাণ্ডে বিদ্ধ হয়েছিল তৃণমূল। নারদার স্ট্রিং অপরেশনে মুকুল রয়ের (তখনও তিনি তৃণমূলে ছিলেন) ঘনিষ্ঠ একজন আইপিএস অফিসার সহ বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতাকে ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। প্রত্যেকে টোপ গিললেও, মেয়র সহ আর দু'জন সাংসদের নিজে হাতে টাকা নেওয়ার ছবি সেই ভিডিও ফুটেজে ফুটে উঠেছিল। ফুটেজে ধরা পড়েছিল সিগারেট হাতে পুরসভা ভবনে বসে টাকা গুনছেন মেয়র।

আর, এর পরেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রস্তাব দেন যেন শোভন বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট না পান। মমতা কথাকর্নপাত করেননি। টিকিট পেয়েছিলেন মেয়র। বিধায়ক হয়ে মন্ত্রিত্বও পেয়েছিলেন।

এর মধ্যেই এক অধ্যাপিকার সঙ্গে সম্পর্ককে কেন্দ্র করে শোভনের ব্যক্তিগত জীবনেও সমস্যা দানা বাঁধে। বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় রুজু করেন শোভন। কিন্তু মেয়রের স্ত্রী রত্না বিচ্ছেদ দিতে নারাজ। উল্টে রাজনৈতিক টানাপোড়েনে অভিষেক গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন রত্না। সেই গোষ্ঠীতে যোগ দেন আর এক শোভন-বিরোধী ফিরহাদ হাকিমও। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল মেয়রের। কিন্তু অভিষেকের অলিখিত মেন্টর হওয়ার জন্য পার্থও অভিষেকের দলে। অর্থাৎ, মেয়র-বিরোধী। আর, এই রাজনৈতিক সমীকরণের বেড়াজালে পড়ে দলের মধ্যে একঘরে হয়ে পড়লেন শোভন।

body_112118061018.jpg তৃণমূলে একঘরে হয়ে পড়েছিলেন মেয়র [ছবি: পিটিআই]

এ বছরের মে মাসে মহেশতলা বিধানসভা নির্বাচনের উপনির্বাচন ছিল। সেই নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন মহেশতলার পুর চেয়ারম্যান দুলাল দাস। সম্পর্কে তিনি আবার মেয়রের শ্বশুর। সেই নির্বাচনের প্রচারে মেয়রকে দেখা যায়নি। বরং, বলা ভালো দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে কোনও রকম ভূমিকা পালন করতে দেওয়া হয়নি। ববি (ফিরহাদ) ও রত্নাকে সঙ্গে নিয়ে সেই নির্বাচনে প্রচারের দায়িত্বে ছিলেন স্বয়ং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দুলাল দাসের জয় নিশ্চিতও করেছিলেন।

পরের মাসেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সভাপতির পদ খোয়ান শোভন। সেই মাসেই তাঁকে পরিবেশ মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও, শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছেতেই রাজ্যের দমকল, বিপর্যয় মোকাবিলা ও আবাসন মন্ত্রী হিসেবে রয়ে যান শোভন। সঙ্গে শহরের মেয়রও ছিলেন তিনি। শোনা যায় এর মধ্যে একাধিকবার পদত্যাগের ইচ্ছে প্রকাশ করলেও মূলত মমতার উদ্যোগেই পদত্যাগ করেননি তিনি।

অবশেষে পদত্যাগ করলেন মেয়র। তবে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে না জানিয়ে সরাসরি গৌতম সান্যালের কাছে। আর, এই খবর পেয়েই যারপরনাই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে তৃণমূল নেত্রী। তাঁর আদেশেই মেয়র পদটি থেকেও 'অপসারণ' করা হয় শোভনকে।

এই মুহূর্তে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পরিস্থিতি বেশ জটিল। তিনি তৃণমূলে থেকেও নেই। খবরের প্রকাশ, বিজেপিতে যোগাযোগ করেও খুব একটা লাভ হয়নি। নারদা মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছেন তিনি। যে কোনও দিন গ্রেপ্তার হতে পারেন। অনেকেই মনে করছেন সেই সম্ভাবনা রয়েছে বলেই শোভনকে একঘরে করতে চাইছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ।

তাহলে কি শোভন চট্টোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবনে শেষ? দেখা যাক, একমাত্র সময়ই তার জবাব দেবে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ROMITA DATTA ROMITA DATTA

The writer is Associate Editor, India Today.

Comment