শিবরাজ সিং চৌহানের নাম ভুলবেন না: তাঁর প্রত্যাবর্তনের লড়াই শুরু হয়ে গেছে
চৌহান-ঘনিষ্ঠরা মনে করেন তিনি অটলবিহারী বাজপেয়ীর ছাঁচে গড়া
- Total Shares
তিনি হয়তো মুখ্যমন্ত্রীর আসন হারিয়েছেন। তাঁর দল হয়তো ১৫ বছর পর মধ্যপ্রদেশ শাসন করার ক্ষমতা হারিয়েছে। কিন্তু তাই বলে শিবরাজ সিং চৌহানের নাম মুছে ফেলার সময় এখনও আসেনি।
তাঁর হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ের প্রস্তুতির উপর এবার আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে।
এই মুহূর্তে প্রচার আলোর পুরোটাই রয়েছে মধ্যপ্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথের উপর। এদিকে, পর্দার আড়ালে থেকে, ৫৯ বছর বয়ষ্ক চৌহান এখন নিজের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো ঠিক করে ফেলেছেন।
পর্দার আড়ালে থেকে শিবরাজ সিং চৌহান প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা করছেন [সৌজন্যে: টুইটার]
১১-১২ ডিসেম্বরের মধ্যরাতে চৌহান ভোট অঙ্ক নিজের অনুকূলে এনে সরকার গঠনের কোনও চেষ্টাই করেননি। যদিও, গোটা দিন ধরেই সরকার গঠনের জন্যে প্রয়োজনীয় অঙ্কের লড়াইয়ে বিজেপি ও কংগ্রেস সেয়ানে সেয়ানে লড়ে গেছে।
খবরের প্রকাশ, একটা সময়ে দলের এক মন্ত্রী খানিকটা অধৈর্য্য হয়ে পড়ে চৌহানকে রাজভবনে গিয়ে কংগ্রেসের সরকার গড়ার প্রচেষ্টা আটকাবার পরমার্শ দেন। চৌহান তাঁকে সম্মতি দিলেও রাজভবনে গিয়ে তিনি রাজ্যপালের কাছে কাকুতি-মিনতি না করে সরাসরি পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে দেন।
চৌহানের এই পদক্ষেপ সেই মন্ত্রীকে যারপরনাই অবাক করে দেয়। বিজেপিকে একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল গোয়াতে। কিন্তু সেখানে কংগ্রেসের আস্তাবল ভাঙিয়ে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যা ছিনিয়ে নিয়েছিল বিজেপি।
মণিপুরেও একই ভাবে সংখ্যার লড়াইয়ে কংগ্রেসকে পরাস্ত করেছিল বিজেপি। রাজ্যসভা ভোটেও, যেখানে সকলেই দুই দলের প্রাপ্ত সংখ্যা সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন, নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ শেষ মুহূর্তে নিজেদের অনুকূলে প্রয়োজনীয় সংখ্যা নিশ্চিত করে বিরোধীদের পরাস্ত করেছিলেন।
রাজ্যপাল আনন্দিবেন প্যাটেলের সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগ জমা দিয়েছিলেন শিবরাজ [ছবি: পিটিআই]
চৌহান ঘনিষ্ঠদের মতে, তিনি অনেকটা অটলবিহারী বাজপেয়ীর ছাঁচে তৈরি। তিনি সর্বদাই সংবিধান, গণতন্ত্র ও সংসদীয় প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন।
কমল নাথের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও তিনি রাজ্যের মহাগটবন্ধনের সম্ভাব্য নেতাদের সঙ্গে একই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বুধনির বিধায়ক যা করলেন তা সত্যিই অকল্পনীয়। কমল নাথ ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার মাঝখানে দাঁড়িয়ে, তাঁদের দু'জনের হাত তুলে ধরে তিনি চিত্রগ্রাহকদের ছবি তুলতে সুযোগ করে দিলেন।
কোথাও কোনও হতাশার চিহ্ন নেই।
এই ছবিটির সঙ্গে কোথাও যেন সংসদ ভবনের একটা ছবির মিল (ফারাক) খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ও কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী ঢিল ছোড়া দূরত্বে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু তিনজনের মধ্যে কোনও সৌজন্য বিনিময় হয়নি।
ঘনিষ্ঠরা মনে করেন অটল বিহারীর ছাচে গড়া শিবরাজ [সৌজন্যে: ইন্ডিয়া টুডে]
হারের পরেও, চৌহান একটা কথা পরিষ্কার করে দিয়েছেন - তিনি মধ্যপ্রদেশ ছেড়ে অন্যত্র কোথাও যাবেন না।
এই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পাঁচবারের লোকসভা সাংসদ জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী হবেন না। যদিও তিনি যে লোকসভা আসনটি থেকে জিততেন সেই আসনের জন্য নতুন প্রার্থী খুঁজতে হবে বিজেপিকে। কারণ আসনটির বর্তমান সাংসদ সুষমা স্বরাজ আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না।
চৌহান জানিয়েছেন তার চেয়ে তিনি মধ্যপ্রদেশের বিরোধী দলনেতার ভূমিকা পালন করতে বেশি আগ্রহী। এর ফলে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশ বেশ চিন্তায় পড়েছে।
জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ও কমল নাথের সঙ্গে চিবি তুলতে কুন্ঠিত বোধ করেননি শিবরাজ [সৌজন্যে: টুইটার]
তাঁদের মতে, পরাজিত হওয়ার পরে একজন তিন বারের মুখ্যমন্ত্রীর আর রাজ্য বিধানসভায় না থাকাটাই শ্রেয়। খুব কমই উদাহরণ রয়েছে (যেমন হিমাচল প্রদেশের প্রেম কুমার ধুমল) যেখানে একজন পরাজিত মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী দলনেতার ভূমিকা পালন করেছেন।
কিন্তু চৌহানকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়।
মধ্যপ্রদেশের বিজেপি মহল মনে করেছেন যে চৌহানের এই স্বাধীনচেতা সিদ্ধান্তে একটি জিনিস পরিষ্কার - অটল বিহারী বাজপেয়ীর মতো তিনিও সংসদীয় রাজনীতির প্রক্রিয়াগুলোতে বিশ্বাসী। তিনি গণতন্ত্রের পূজারী এবং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে পারেন।
আডবাণী বলেছিলেন শিবরাজ সিং চৌহান নরেন্দ্র মোদীর সমকক্ষ [ছবি: পিটিআই]
এই প্রসঙ্গে ২০১৩ সালের একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল। সে বছরের মাঝামাঝি সময়ে গোয়ালিয়রে একটি জনসভায় লালকৃষ্ণ আডবাণী বলেছিলেন তিনি চৌহানকে মোদীর সমকক্ষ মনে করেন। সেই সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মোদী।
আডবাণী জানিয়েছিলেন, মধ্যপ্রদেশের মতো একটি পিছিয়ে পড়ার রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের জন্যই চৌহানের কৃতিত্বটা অনেক বেশি। আডবাণীর এই বক্তব্যে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। কারণ ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মোদীর নাম ঘোষণা মাত্র কয়েক মাস আগেই তিনি এই কথাগুলো বলেছিলেন।
চৌহান নিজে বলে থাকেন কোনও একটিমাত্র নির্দিষ্ট ভূমিকায় তাঁকে ঠিক মানায় না। কিন্তু তাঁর সমর্থকরা আশাবাদী - মধ্যপ্রদেশ রাজনীতিতে আবার রাজকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটবে শিবরাজ সিং চৌহানের।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে