বাংলাদেশে বড় ব্যবধানে জয় হাসিনার, অতঃপর...

জয় প্রকৃতই তা প্রমাণে ব্যস্ত না হয়ে সমস্যার মোকাবলিয়া করতে হবে

 |  3-minute read |   03-01-2019
  • Total Shares

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে বাংলদেশের ভোটাররা দেশের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে পুনরায় ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়েছেন। দেশের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন হাসিনা। নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী ডক্টর কামাল হাসান বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি)-কে সঙ্গে নিয়ে ও জামাত-এ-ইসলামির সঙ্গে পরোক্ষ ভাবে জোট বেঁধে হাসিনা সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। তাই এই নির্বাচনের ফলে দেশের উদারপন্থী ও ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। গোটা দেশ এখন আনন্দে মেতেছে।

নির্বাচনে জনাদেশ আদেশ এখন জলের মতো পরিষ্কার - ধর্মনিরেপেক্ষতা ও উদারপন্থী বিরোধী মৌলবাদী ও দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীলদের নির্মূল করে দেওয়া হোক।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ -- বিএনপি ও তার শরিকরা যে ভাবে পর্যদুস্ত হয়েছে তাতে পরিষ্কার যে বাংলাদেশী গোয়েন্দারা সফল ভাবে পাকিস্তানের আইএসআই-এর গোয়েন্দাদের পরাস্ত করতে পেরেছেন।

হাসিনার জয়ের ফলে আইএসআই সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কোনও বিষয়ে আর নাক গলাতে পারবে না এবং দেশের শাসকদল আওয়ামী লিগের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্কের আর কোনও ব্যাঘাত ঘটাতে পারবে না।

তাই বলে কর্তৃপক্ষ কোনও ভাবেই যেন আত্মতুষ্টিতে না ভোগে। আইএসআই এখন বাংলাদেশ জুড়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি করতে সব রকম ভাবে চেষ্টা করবে।

body_010319041022.jpgআবার বাংলদেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন শেখ হাসিনা [ছবি: রয়টার্স]

এখানে একটা কথা মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন আছে। নির্বাচনের ঠিক আগে একটি ফোন কল ট্যাপ করা হয়েছিল যেখানে এক উচ্চ পর্যায়ের বিএনপি নেতাকে এক আইএসআইয়ের চরের কাছে বিভিন্ন ধরণের সাহায্য প্রার্থনা এবং চিনের সমর্থনের জন্য আবেদন করতে শোনা গেছে।

তার মানে বোঝাই যাচ্ছে যে ভারতের সঙ্গে হাসিনার সুসম্পর্ক রোধ করতে এ ধরণের ক্ষতিকারক শক্তিগুলো কতটা মরিয়া হয়ে উঠতে পারে।

তাই ভারত ও বাংলাদেশ -- দুই দেশকেই সব সময় সজাগ থাকতে হবে।

এই জয়ের পরে হাসিনাকে আবার মানুষের আস্থা অর্জন করতে নতুন করে প্রকল্প রূপায়ণ করতে হবে এবং সর্বপ্রথম উন্নয়নের উপর নজর দেওয়ার পাশাপাশি শাসন ব্যবস্থাকে দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে।

রাজনীতি সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশী জনগণ বেশ স্পর্শকাতর। এই জয়ের আনন্দে তাঁরা যদি মাতোয়ারা হয়ে উঠতে পারেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে তাঁরা আবার উল্টো ভাবে ক্ষিপ্তও হয়ে উঠতে পারেন। তাই যে কোনও প্রকারে হাসিনাকে 'পারফর্ম' করতেই হবে।

body1_010319041156.jpgভারত বাংলাদেশ সম্পর্কে এবার দৃষ্টিভঙ্গি বদল করতে হবে হাসিনাকে [ছবি: রয়টার্স]

এখানে উল্লেখযোগ্য, সর্বদাই ক্ষমতার লোভে রাজনৈতিক আঙিনায় ঘুরে বেড়াতে থাকা ডক্টর কামাল হোসেন দেশে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। বেশ কয়েকটি পশ্চিমি দেশের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে। আর সেই সুযোগ নিয়েই চাপ বাড়াবার লক্ষ্যে হোসেন এখন এই ধরণের দাবি জানাতে উদ্যোগী হয়েছেন।

এত কিছুর পরেও নিজের ব্যক্তিত্ব স্বাতন্ত্র্যের জেরেই হয়তো ভেসে থাকবেন শেখ হাসিনা। এর আগেও পশ্চিমি দেশগুলোর এবং আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে অগ্রাহ্য করে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিতও করা হয়েছিল।

পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর হাসিনা হয়তো ভারত-বাংলাদেশ স্পম্পর্ক নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেখাতে চাইবেন। দু'দেশের জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান হয়েই চলেছে। এ ছাড়া পরমাণু, বিজ্ঞান ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত আদানপ্রদান হয়ত আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তবে সন্ত্রাস দমনের লক্ষ্যে দু'দেশের গোয়েন্দা বিভাগ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও মজবুত করে তুলতে হবে।

একই সঙ্গে, বাংলদেশের শান্তি বিঘ্নিত করার যে সমস্ত প্রচেষ্টা পাকিস্তানের তরফ থেকে করা হবে তা খুব দ্রুত নস্যাৎ করতে হবে। রোহিঙ্গাদের বা সমাজে জেহাদে বিশ্বাসী মানুষজনকে দলে টানার বা মৌলবাদে উস্কানি দেওয়ার প্রচেষ্টাকেও রোধ করতে হবে।

তিনশোর সামান্য কম আসন পেয়েছেন হাসিনা। সুতরাং বলা যেতেই পারে তিনি খুব নিরাপদেই রয়েছেন। কিন্তু তাঁর এই জয় যে যথোপযুক্ত তা প্রমাণ করতে হলে কোনও রকম ভুলভ্রান্তি না করে এবার এই চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলা করতে হবে তাঁকে।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SHANTANU MUKHARJI SHANTANU MUKHARJI @shantanu2818

The author is a retired IPS officer who has held key positions in the Government of India handling sensitive security issues within and outside India

Comment