রোহিঙ্গারা কেন এখনও খবরের শিরোনামে রয়েছে

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছে চরমপন্থীরা রোহিঙ্গারা সহজেই রোহিঙ্গাদের বশ করতে পারে

 |  3-minute read |   13-12-2018
  • Total Shares

রোহিঙ্গা সমস্যা কিছুতেই মিটেছে না। মিয়ানমার সরকারের তাড়া খেয়ে অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোতে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ অনবরত ঘটে চলেছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সরকারের এই কঠোর অবস্থানের প্রায় এক বছর হতে চলল। আর, তখন থেকেই তারা ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বর্তমানে, বাংলাদেশে প্রায় সাত লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। বাকিরা অন্যান্য দেশগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

ঘটনা বা সমস্যার সূত্রপাত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট। সেদিন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের উপর প্রবল আক্রমণ করে তাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করে। সেই ধারা আজও অব্যাহত। যে সব নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা রোহিঙ্গা সমস্যার উপর চোখ রেখে চলেছে তাদের একটি বড় অংশ মনে করে যে চরমপন্থীরা খুব সহজেই এই শরণার্থীদের বশে এনে ফেলতে পারে। এর ফলে তারা যে অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে, সেই অঞ্চলের শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে।

তবে এমন অনেক শান্তির পূজারি রয়েছেন যাঁরা রোহিঙ্গাদের চরমপন্থী হয়ে ওঠার আশঙ্কা মানতে নারাজ। তাঁদের কথাতেও একটা যুক্তি রয়েছে। মানবিকতার দিক থেকে তাদের যুক্তি: রোহিঙ্গারা গৃহহীন ও ক্ষুধার্ত, এই অবস্থায় তাঁরা খুব সহজে কারও মত মেনে নিতে পারবে না।

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের অবশ্য দাবি, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসবাদী করে তোলার জোর চেষ্টা করেছিল পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবা।

body_121318122528.jpgপ্রায় ৭ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলদেশে আশ্রয় নিয়েছে [ছবি: রয়টার্স]

বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, আরাকান রোহিঙ্গা মুক্তি বাহিনী (এআরএসএ) লস্করের সহযোগিতায় ঘর ছাড়া রোহিঙ্গাদের চরমপন্থী করে তোলার চেষ্টা করে চলেছে। এআরএসএ-এর মিলিটারি কমান্ডার হাফিজ তোহারকে রোহিঙ্গাদের দলে টানতে এবং তাদেরকে সেনাবাহিনী প্রশিক্ষণ দিতেও দেখা গিয়েছে। রোহিঙ্গারা যে সহজেই জঙ্গি শিবিরে যোগ দিতে পারে এমন আশঙ্কা বাংলাদেশের আধিকারিকেরাও করেছে।

বিভিন্ন ধরণের প্রতিবাদ সত্ত্বেও ভারতেও বেশ কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে তাদের আশ্রয় দেওয়া মানে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। যদিও অনেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী আবার দেশের উত্তরপূর্ব সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার ফিরে গিয়েছে।

এই পরিস্থিতির মধ্যে এখন একটি নতুন খবর পাওয়া যাচ্ছে। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে যে সম্প্রতি মিয়ানমার একটি নৌকো আটক করেছিল। এই নৌকায় ৯৩ জন রোহিঙ্গা মুসলমান ছিল যারা পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চল থেকে মালয়েশিয়া যাচ্ছিল। প্রচুর সংখ্যক রোহিঙ্গা এখন মালয়েশিয়াতেও আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছে।

body1_121318122616.jpg২০১৬ সালে ১০৬ জন রোহিঙ্গা মালয়েশিয়া পালিয়ে যেতে চেয়েছিল [ছবি: রয়টার্স]

মালেশিয়ায় রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ এখন রোহিঙ্গা সমস্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে উঠতে পারে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মহাথির মহম্মদকে লোকে একজন মধ্যপন্থী মুসলমান হিসেবেই চিনত যিনি কখনোই কোনও মুসলিম মৌলবাদকে সমর্থন করেননি। কিন্তু সম্প্রতি তাঁর মনোভাবের কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ করা গিয়েছিল যখন তিনি মৌলবাদী প্রচারক তথা কট্টর ইসলামপন্থী ডক্টর জাকির নাইককে সৌদি আরব থেকে নিয়ে এসে মালয়েশিয়াতে আশ্রয় দিয়েছেন। ভারতের তরফ থেকে জাকিরকে ভারতের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার বারংবার অনুরোধ নস্যাৎ করে মালয়েশিয়া তাঁকে সে দেশের স্থায়ী বাসিন্দা করে দিয়েছে।

এখন দেখতে হবে রোহিঙ্গারা মালয়েশিয়ার মাটিতে আশ্রয় নিতে চাইলে মহাথিরের ভূমিকা কী হয়। এখানে মনে করিয়ে দেওয়া উচিত ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে ১০৬জন রোহিঙ্গা ইয়াঙ্গনের একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র থেকে মালয়েশিয়া পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল।

উল্টোদিকে, রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়ায় আশ্রয় নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের মনোভাবের উপরও নজর রাখতে হবে। মিয়ানমার চাইছে রোহিঙ্গারা বেশি মাত্রায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিক। কিন্তু রোহিঙ্গারা যদি মালয়েশিয়া বা অন্যত্র আশ্রয় নিতে চায় তাহলে মিয়ানমারের অবস্থান কী হবে?

body2_121318122823.jpgরোহিঙ্গাদের  নিয়ে শেষ পর্যন্ত আং সাং সু চি-র অবস্থান কী হবে? [ছবি: রয়টার্স]

এরই মধ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, বিশেষ করে তাদের ৩৩তম লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন এবার কাচিন নামক অন্য একটি গোষ্ঠীর উপর আক্রমণ শুরু করে দিয়েছে।

এই বিষয়ে সেনাবাহিনীকে খোলাখুলি সমর্থন জানিয়ে মালয়েশিয়ার বিদেশমন্ত্রী আং সাং সু চি বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হয়েছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো অনেক বিশ্ববরেণ্য সংস্থাই তাঁর এই বৌদ্ধ-মুসলমান বিভাজন মেনে নিতে পারেনি।

কিন্তু তিনি তাঁর মতোই কাজ করে চলেছেন। আর এই পরিস্থিতিতে, রোহিঙ্গাদের উপর নিষ্পেশনের আশঙ্কা বেড়ে চলেছে। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতেও আক্রান্ত হতে পারে আবার মিয়ানমারের সাধারণ নাগরিকদের হাতেও আক্রান্ত হতে পারে।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SHANTANU MUKHARJI SHANTANU MUKHARJI @shantanu2818

The author is a retired IPS officer who has held key positions in the Government of India handling sensitive security issues within and outside India

Comment