আঞ্চলিক দল বনাম সর্বভারতীয় দুই দল: ২০১৯ ভোটের আগের সমীকরণ উপভোগ্য
কংগ্রেসমুক্ত ভারত নাকি মোদীমুক্ত ভারত, উত্তর পাওয়া সম্ভব লোকসভা ভোটেই
- Total Shares
চারিদিকে উৎসবের মেজাজ। আর মাত্র একটা বছর। তারপরেই মুক্তির আনন্দে উদ্বেলিত হবে ভারত, মোদী-মুক্ত ভারত। তিনি ডাক দিয়েছিলেন কংগ্রেস-মুক্ত ভারতের। পাশা এ বার উল্টে গেছে। মঞ্চ বৃহৎ থেকে বৃহত্তর হয়েছে। আর সবার অগোচরে মুচকি হাসছে নাগপুর। ১৯২৫ সালে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, প্রায় শতবর্ষের মুখে এসে ভারতের রাজনীতির দিশা নির্দেশ তাদের অঙ্গুলিহেলনে। দীর্ঘ ৭০ বছরের শাসন-ঐতিহ্যের অচলায়তন যেন মাত্র ৪ বছরেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে। অভ্যাস বনাম ছটফটানির লড়াই।
বিরোধীরা যখন এক মঞ্চে
আরএসএস স্থাপনের প্রায় তিন দশক পরে একটা নির্দিষ্ট দর্শনকে সামনে রেখে জনসঙ্ঘ নামক রাজনৈতিক সংগঠনের আবির্ভাব ঘটেছিল। তার প্রায় ছয় দশক বাদে নিরঙ্কুশ ভাবে ক্ষমতা দখল করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। এই ছয় দশকের যাত্রাপথে একটা নির্দিষ্ট দর্শনের সঙ্ঘাত ঘটে গেছে প্রতিটি মুহূর্তে। প্রকাশ্যে আসেনি, নিঃশব্দে এবং অন্তরালে।
১৯৭৭ সালের লোকসভা, নির্বাচন অচলায়তনে ধাক্কা দেওয়ার প্রথম স্ফূরণ। সাম্প্রদায়িকতা না ধর্মনিরপেক্ষতা অথবা ইনক্লুসিভ না এক্সক্লুসিভ – এগুলো কয়েকটা শব্দ মাত্র। বাস্তবে বিষয়টা দুটি দর্শনের লড়াই। কংগ্রেসমুক্ত ভারতের স্লোগান আজকের নয়, জনসঙ্ঘ স্থাপনার দ্বিমুখী দর্শনের গোড়াতেই ছিল কংগ্রেসমুক্ত ভারতের দর্শন। দ্বিমুখী দর্শনের একদিকে ছিল রাজনৈতিক ভাবে কংগ্রেসমুক্ত ভারত এবং আদর্শগত দিক দিয়ে বামপন্থীমুক্ত ভারত। দর্শেনর এই সঙ্ঘাত আজ শিখরে পৌঁছেছে। একদিকে বেঙ্গালুরুর মঞ্চ এবং অন্যদিকে ৬, দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গ, দিল্লি বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে, কেশবকুঞ্জ, নাগপুর।
কিন্তু দর্শনকে পাশে রেখে যদি রাজনীতির কঠিন বাস্তবের দিকে চোখ রাখা যায়, তা হলে একটা অন্য চিত্র ভেসে ওঠে। বেঙ্গালুরুর মাটিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আঞ্চলিক দলগুলির সমন্বয়ের কথা বলেছেন। দেশের বড় রাজ্যগুলির মধ্যে এই মুহূর্তে মোট ১১টি রাজ্যে শক্তিশালী আঞ্চলিক দল আছে। এই সবকটি রাজ্য মিলিয়ে লোকসভার আসনসংখ্যা ৩৫৩। ৫৪৩ আসনবিশিষ্ট লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে দরকার ২৭২টি আসন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে গেলে আঞ্চলিক দলগুলিকে ৭৮ শতাংশ আসনে জিততে হবে।
ভোটের রাজনীতিতে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। কিন্তু ৭৮ শতাংশের সংখ্যায় পৌঁছাতে গেলে সবার আগে প্রয়োজন একের বিরুদ্ধে একের লড়াই। তাই যদি হয়, তা হলে এই ১১টি রাজ্যে কংগ্রেসের কী ভূমিকা হবে? কংগ্রেস কি অবশিষ্ট ১৯০টি আসন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে? এটা ঠিক যে বেঙ্গালুরুর মঞ্চ একটা প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। কিন্তু এটাও ঠিক যে বিরোধী মঞ্চের একজন ব্যক্তিত্বও জয়প্রকাশ নারায়ণ নন। যে দর্শনের লড়াই সে দিন জয়প্রকাশ নারায়ণ খাড়া করতে পেরেছিলেন, তার কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে অন্তত দেখা যাচ্ছে না।
বক্তব্যরত জয়প্রকাশ নারায়ণ
আসন সংখ্যার চুলচেরা বিশ্লেষণের পাশাপাশি প্রয়োজন আছে দেশবাসীর মানসিকতার পর্যবেক্ষণ। কংগ্রেস এবং বিজেপি – ভারতের এই মুহূর্তে এই দুটিই প্রকৃত অর্থে সর্বভারতীয় রাজনৈতিক সংগঠন। ভারত বেশ কয়েকবার আঞ্চলিক দলগুলির জোট রাজনীতির অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষ করেছে। ২০১৪ সালেও আঞ্চলিক দলগুলি জোরদার প্রচারের আলোয় ছিল। মানুষ একদলীয় শাসনব্যবস্থার পক্ষে রায় দিয়েছে। কংগ্রেস এই সেদিন পর্যন্ত জোট রাজনীতি নিয়ে প্রকাশ্যে আড়ষ্ঠতা প্রকাশ করেছে। এখন তারা নিরুপায়। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৌশলের কারণে তারাও আপাতত সাবধানী। একদিকে দর্শন এবং আরেক দিকে সংখ্যাতত্ত্ব এবং সর্বোপরি দেশবাসীর মনস্তত্ত্ব। আগামী একটা বছর তাই বেশ রোমাঞ্চকর।