অমিতাভ বচ্চনের আশীর্বাদ নিয়েই কি রাজনীতিতে এলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী?
অমিতাভ বচ্চনের আশীর্বাদ নিয়েই কি রাজনীতিতে এলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী?
- Total Shares
হয়তো অনেক আগে থেকে, অন্য কেউ জানার অনেক আগেই কথাটা ‘মামুন’ জানতেন।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার একটা পার্শ্ব-কাহিনি আছে যার সঙ্গে মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চনের যোগ রয়েছে, যাঁকে একেবারে ছোটবেলা থেকে তিনি মামুন (মামা) বলে ডেকে আসছেন।
মনে হয় বচ্চন পরিবার ও গান্ধী পরিবার আবার কাছাকাছি আসতে শুরু করেছে।
জাতীয় কংগ্রেসে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে যোগ দিয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী পূর্ব উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক দিন আগে নতুন দিল্লিতে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে একান্তে বেশকিছু কথা বলেন।
শোনা যাচ্ছে সেই বিখ্যাত অভিনেতা প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে আশীর্বাদ করেন।
তা হলে কে কার সঙ্গে দেখা করে কাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন? (ছবি: ইউটিউব/রয়টার্স)
দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর দূরে থাকার পরে গান্ধী ও বচ্চন পরিবার আবার মিলিত হচ্ছে – তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, তাঁরা নতুন করে কাছাকাছি আসতে শুরু করলেন যখন ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচন দোরগোড়ায় প্রায় এসে গেছে।
দেশের সবচেয়ে বিখ্যাত দু’টি পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক যে ভেঙে যাচ্ছে সেই খবরটা প্রকাশিত হয়েছিল ২০০০ সালে। ব্যক্তিগত ব্যর্থতা ও ব্যক্তিগত বিচ্ছেদের চেয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছিল কোনও ব্যক্তিবিশেষের ব্যর্থতা – ব্যক্তিত্বের মধ্যে সংঘাত ও একজন ব্যক্তির ক্রমাগত প্রভাববিস্তার।
তার পর থেকে সেই সেতুর নীচ দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে – তবে যদি গান্ধীরা সেই সেতু অতিক্রম করে এসে আবার অমিতাভ বচ্চনের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়ান তা হলে রাহুল, সনিয়া ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর হাত অনেক বেশি করে শক্ত করতে পারবেন বিগ বি, তাঁর স্ত্রী জয়া, পুত্র অভিষেক এবং পুত্রবধূ ঐশ্বর্যা।
একটি বিশেষ সূত্রে জানা যাচ্ছে যে চলচ্চিত্র জগতে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বরিষ্ঠ রাজনীতিকে ভূমিকা পালন করবেন অমিতাভ বচ্চন। সংখ্যালঘুদের হয়রানির কথা উহ্য রেখেই বলা যায়, যখন বাক স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে, চলচ্চিত্র সেন্সর করা হচ্ছে, সাংবাদিকদের হয়রান করা হচ্ছে – সে সময় অন্ধের মতো আচরণ করছেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে লেহন করার অভিযোগ তুলে অনেকেই তাঁর সমালোচনা করেন।
গান্ধীপরিবার ও বচ্চনপরিবারের কলহ হার মানিয়ে দেয় বলিউডের নাটককেও (ছবি: ইন্ডিয়া টুডে লেখ্যাগার)
বছর ৪৩ মতো আগে ১৯ মাস ধরে দেশে জরুরি অবস্থা চলার পরে সঞ্জয় গান্ধীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছিল অমিতাভ বচ্চনকে – জরুরি অবস্থার সময়েও বাকস্বাধীনতা, উদ্ভাবন ও আইনি শাসন খর্ব করা হয়েছিল। জরুরি অবস্থা চলাকালীন পুরো সময় ধরেই চুপ ছিলেন অমিতাভ বচ্চন এমনকি যখন আকাশবাণী (অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো) ও দূরদর্শন কিশোর কুমারের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল এবং সরকারের দুই সমালোচক প্রাণ ও দেব আনন্দকে কার্যত একঘরে করে দিয়েছিল, তখনও। পরিবর্তে সেই সময় তরুণ অমিতাভ ও জিনাত আমনকে নিয়ে মুচমুচে কানাঘুষো কথা ছাপতে দেওয়া হয়নি সাংবাদিকদেরও।
সঞ্জয়ের মৃত্যুর পরে যখন রাজীবের আগমন ঘটল, তখন ১৯৮২ সালে দিল্লির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে এশিয়ান গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অমিতাভ বচ্চনের সেই বিখ্যাত কণ্ঠস্বর শোনা গেল। এশিয়ান গেমসের মুখ্য আয়োজক ছিলেন রাজীব গান্ধী এবং সেখানে অমিতাভ বচ্চনকে প্রথম সারিতে বসতে ও অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করতে দেখা গেল।
বফর্স নিয়ে হইচই শুরু হতে মোহভঙ্গ হল অমিতাভ বচ্চনের এবং রাজনীতি ত্যাগ করলেন এলাহাবাদের সাংসদ অমিতাভ বচ্চন। এই সুপারস্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, দালালের কাজটি তিনিই করেছেন। নিজের সম্মান ফেরাতে আইনি লড়াই শুরু করেন অমিতাভ বচ্চন এবং দীর্ঘদিন ধরে মামলা লড়ে শেষ পর্যন্ত তিনি জয়ী হন, তবে কোনও দিনই তিনি তাঁর রাজনৈতিক মহলে যোগাযোগ ছিন্ন করেননি।
গান্ধী পরিবারের থেকে অমিতাভের দূরে সরে যাওয়ার রাজীব গান্ধীর পতনের অন্যতম কারণ ছিল।
যে সময় লোকসভায় ৫৪২টি আসনের মধ্যে ৪১৩টিই ছিল কংগ্রেসের দখলে, তখন ১৯৮৭ সালে এলাহাবাদ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ বিরোধীরা বুঝতে পেরেছিল যে তারা একজোট হলে কংগ্রেসের মতো বৃহৎ শক্তিকেও হারিয়ে দেওয়া সম্ভব।
গান্ধীদের ছায়াপথে নতুন তারকা সংযোগ করতে পারেন বচ্চনরা। (ছবি:ইন্ডিয়া টুডে)
২০১৪ সাল থেকে কূটনৈতিক কারণে অমিতাভ বচ্চন চুপচাপ রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠছে – বিশেষ করে যখন চিন্তক হিসাবে বিনোদন জগতে আমির খানের মতো তাঁর নিকট প্রতিদ্বন্দ্বীও সরব হয়েছেন। তাঁর নীরবতা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া প্রচুর লেখালিখি হয়েছে। যাঁরা অমিতাভ বচ্চন সম্বন্ধে জানেন, তাঁরা মানবেন যে জনসমক্ষে সমালোচিত হওয়ার ব্যাপারে অমিতাভ বচ্চন খুবই স্পর্শকাতর।
বচ্চন পরিবার ও গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সূত্রে জানা গেছে, এক বছরের বেশি সময় ধরে এই দুই পরিবার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছে।
টুইটারে রাহুল গান্ধী, মনীশ তিওয়ারি প্রমুখ কংগ্রেস নেতাকে ফলো করতে শুরু করেন অমিতাভ বচ্চন, উল্টোদিকে তাঁরাও অমিতাভকে পাল্টা ফলো করতে শুরু করেন।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অমিতাভ বচ্চনের নিজের শহর এলাহাবাদে একটি পোস্টার সাঁটা হয় যেখানে ট্যাগলাইলে লেখা ছিল, ‘আ অব লট চলেঁ’, অর্থাৎ রুপোলি পর্দার তারকা অমিতাভ বচ্চনকে আবার কংগ্রেসে ফেরার কথা বলা হচ্ছে। পোস্টারের ছবিতে রাহুল গান্ধী এবং অমিতাভ বচ্চনের ছবি ছিল এবং ১৯৮০-র দশকে অমিতাভ অভিনীত দোস্তানা ছবির ছবির একটি গানের কলি লেখা ছিল, “বনে চলে দুশমন জমানা হামারা, সালামত রহে দোস্তানা হামারা।”
একটি পোস্টার হাজার শব্দ বলে দিচ্ছে। (ছবি: টুইটার)
বিষয়টি সম্বন্ধে জানেন এমন এক ব্যক্তি বলেন যে নিজের রাজ্য উত্তরপ্রদেশের ক্ষেত্রে তাঁর অবস্থান কী হবে, সে ব্যাপারে অমিতাভ খুবই সচেতন। এ কারণেই তিনি অন্তত এক হাজার কৃষকের ঋণ পরিশোধ করে দিয়েছেন।
তাই গান্ধী ও বচ্চন পরিবারের এই কাছাকাছি আসাও রাজনীতির অঙ্গ। যাঁরা এই ধরনের ভাবনার শরিক তাঁদের মতে, নতুন করে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে অমিতাভ অত্যন্ত দক্ষ এবং তাঁর আচরণ একেবারে হাওয়ামোরগের মতো।
কোন দিকে বাতাস বইবে? গুজরাট পর্যটনের বিজ্ঞাপনে দেখা গিয়েছিল অমিতাভ বচ্চনকে। (ছবি: ইউটিউব)
এখন যা রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাতে মোদীর থেকে অমিতাভ দূরত্ব বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত অধীর হয়ে উঠেছেন (যদিও এই অমিতাভই এর আগে গুজরাট পর্যটনের প্রসারেও কেন্দ্রীয় সরকারের আয়কর দফতরের বিজ্ঞাপনে দেখা গিয়েছে অমিতাভ বচ্চনকে।
সুবিধাবাদীদের স্বভাব হল, জনমানসে যে সব ব্যক্তির মেরুকরণ হয়েছে তাঁদের এড়িয়ে চলা, বিশেষ করে যখন এনডিএ-বিজেপির হাওয়া পড়তির দিকে।
কিন্তু ১০ জনপথে কী ঘটছে বা প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর ব্যাপারটা কী? সময়ই সেই উত্তর দেবে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে