লোকসভা ২০১৯: প্রিয়াঙ্কা গান্ধী কি কংগ্রেসের ব্রহ্মাস্ত্র হয়ে উঠতে পারবেন?
অভিষেকেই ভাষণেই মন জয় করেছেন তিনি, কিন্তু রাজীব কন্যার সামনে এখন 'বড়' চ্যালেঞ্জ
- Total Shares
গত মঙ্গলবার, কংগ্রেসকে ভারতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার জন্য, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী তাঁর প্রথম পদক্ষেপটি নিলেন। গান্ধীনগরের জনসভা থেকেই যে তিনি তাঁর প্রথম ভাষণটি দেবেন সে ব্যাপারে, এই জনসভার একদিন আগেও, তিনি নিশ্চিত ছিলেন না। এটা হয়ত সরকারিভাবে তাঁর প্রথম ভাষণ। কিন্তু এই সাত মিনিটের ছোট ভাষণেই তিনি বুঝিয়ে দিতে পেরেছেন যে রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে তিনি কতটা প্রখর বুদ্ধি ধরেন।
তিনি খুব দ্রুত এমন কিছু ইস্যুর ওপর মনোনিবেশ করলেন যা সাধারণ ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে সরাসরিভাবে জড়িত। কর্মসংস্থান বা কর্মসংস্থানের অভাব, কৃষক সমস্যা, মোদীর গরিবদের ১৫ লক্ষ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করতে পারে, মহিলাদের নিরাপত্তা এবং একতা ও এক সঙ্গে থাকার প্রয়োজনীয়তা। বালাকোট এয়ার স্ট্রাইকের প্রেক্ষাপটে এই ইস্যুগুলো অনেকটাই পিছনের সারিতে চলে গিয়েছিল।
জাতীয় নিরাপত্তার সংজ্ঞা বদলে ফেলার জন্য প্রিয়াঙ্কা বিজেপিকে আক্রমণ করেন - তিনি জনগণকে মনে করেই দেন যে দেশাত্মবোধের সঠিক মানে হচ্ছে সঠিক প্রশ্ন করে সঠিক উত্তরের দাবি করা।
মনে রাখতে হবে এটাই প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর প্রথম ভাষণ ছিল। সে দিক থেকে প্রথম ভাষণে তিনি সফল। হিন্দি বলতে তিনি তাঁর মা এবং দাদার থেকে অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ্য। আশা করা যায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বক্তৃতা আরও ধারালো হবে।
কিন্তু প্রিয়াঙ্কার সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে - উত্তরপ্রদেশ ও জাতীয় স্তরে দলের ভাগ্য পরিবর্তন করা। পূর্ব উত্তরপ্রদেশে তিনি একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে চলেছেন।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী কি সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিতে পারবেন? [ছবি: রয়টার্স]
২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে পূর্ব উত্তরপ্রদেশে বিজেপি ৪২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এই অঞ্চলের ২৯টির মধ্যে ২৭টি আসনে জয়লাভ করেছিল বিজেপি।
২০১৭ বিধানসভা নির্বাচনে ১৪২টি বিধানসভা আসনে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের হার মাত্র পাঁচ শতাংশ ছিল। মাত্র একটি আসনেই জয়লাভ করতে পেরেছিল কংগ্রেস। ২০১৮ লোকসভা নির্বাচনে, জাতীয় স্তরে, কংগ্রেস মাত্র ৪৪টি আসনে জয়লাভ করেছিল এবং ২৪০টি আসনে দ্বিতীয় স্থানে শেষ করেছিল।
কিন্তু এই পরিসংখ্যান থেকে সান্ত্বনা খুঁজতে যাওয়া বৃথা। কারণ, হাতেগোনা কয়েকটি আসন বাদ দিলে হারের ব্যবধান ১০ শতাংশেরও বেশি ছিল।
চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে নামার আগে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী পর্যাপ্ত সময় নিয়েছিলেন। তিনি যখন প্রথমবার আমেঠি কেন্দ্রে তাঁর মাকে নির্বাচনী প্রচারে সাহায্য করেছিল তখন থেকেই সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁর উপর দল থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু সেই চাপের সামনে মাথা নত করতে রাজনী হননি প্রিয়াঙ্কা।
১৯৯৯ সালে ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া একটি সাখ্যাৎকারে আমি তাঁকে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদানের ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি জানিয়েছিলেন, "আমি এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। খুব কাছে থেকে আমি রাজনীতির ভালো ও খারাপ দিকগুলো দেখেছি। তাই আমার উপর দলে যোগ দেওয়ার যে চাপ রয়েছে তা আমি এড়িয়ে যাচ্ছি।"
সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে প্রায় ২০ বছর সময় নিলেন তিনি। কিন্তু এখন তিনি যখন সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করে ফেলেছেন তখন আর পিছনে ফিরে তাকাবার কোনও মানে হয় না।
যদিও পূর্ব উত্তরপ্রদেশ তাঁর অগ্রাধিকার থাকবে, উত্তরপ্রদেশের বাইরে তিনি জনসভায় যোগ দেবেন। উত্তরপ্রদেশে শুধু বিজেপি নয়, তাঁকে এসপি-বিএসপি জোটের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে। এই দুই আঞ্চলিক দল এক হওয়ার পর অনেকেই মনে করছে যে ২০১৪ লোকসভার মতো বিজেপি আর এইবার এই রাজ্য থেকে সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাবে না।
উত্তরপ্রদেশে প্রিয়য়ানকে গান্ধী ও কংগ্রেস খুবই খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছে।
কংগ্রেসের সামনে এখন উভয়-সঙ্কট দেখা দিয়েছে - তারা কি বিজেপির অগ্রাসন রুখবে নাকি নিজেদের পুনরুত্থানের চেষ্টা করবে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, কংগ্রেস গোটা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে যেভাবে প্রচার চালাচ্ছে তাতে বিজেপির ভোটে ভাগ হতে পারে। একই ভাবে তারা নিজেরা যদি ভালো ফল করতে না পরে তাহলে এই নির্বাচনের পর উত্তরপ্রদেশে গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে কংগ্রেস।
অনেক দিক থেকেই উত্তরপ্রদেশ কিন্তু প্রিয়াঙ্কার অগ্নিপরীক্ষা।
দু'মাস অবশ্যই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য উপযুক্ত সময় নয়। অনেকেই মনে করছেন যে ২০২২ উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে দেখা যাবে।
সেই সময় পার্টি বুঝতে পারবে যে সত্যিই প্রিয়াঙ্কা গান্ধী কংগ্রেসের ব্রহ্মাস্ত্র কিনা।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে