স্বামী রবার্ট ওয়াদরার উপর নয়, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর উচিত পবিত্র বেনারসের উপর মনোনিবেশ করা
পরিবারের সদস্যরা কখন কী ভাবে আক্রান্ত হয়েছে এই 'গল্পগুলোর' বাইরে তাঁকে অন্য বিষয়েও কথা বলতে হবে
- Total Shares
আসন্ন সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত রামমন্দির আন্দোলনকে স্থগিত রাখার যে সিদ্ধান্ত বিজেপি-ভিএইচপি-আরএসএস নিয়েছে তা নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাইনা। এই ইস্যু থেকে তাঁরা পিছিয়ে এসেছেন কারণ এই ইস্যুটি যে আর মানুষকে নাড়া দিতে পারছে না তা তাঁরা বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছেন।
সত্যি কথা বলতে, উত্তরপ্রদেশ জুড়ে রামমন্দির প্রসঙ্গ অনেকটাই বাসি হয়ে গিয়েছে - এই ইস্যুটি কেমন জানি একঘেয়ে হয়ে পড়েছে।
সাফল্য পেতে হলে ভাবাদর্শকে বেশ চিন্তাভাবনা করে শান দিতে হয়।
এর আগে আমি একটি প্রতিবেদনে লিখেছিলাম যে রামমন্দির ইস্যু নিয়ে বিজেপি পথভ্রষ্ট হয়েছে। কারণ, অযোধ্যাতে রামমন্দির তৈরি করতে হবে এই বিষয়ে একটি অর্ডিন্যান্স আনতে চাইছে বিজেপি। কিন্তু অযোধ্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলার শুনানি পর্ব এখনও আদালতে বাকি রয়েছে। এই পরিস্থিতি এই বিষয়ে অর্ডিন্যান্স জারি করা আইনত সম্ভব নয়। শীর্ষ আদালতে এই মামলগুলির বর্তমান পরিস্থিতি যা তাতে এই এই ইস্যু নিয়ে বিজেপি আসন্ন নির্বাচনে কোনও সুবিধাই করতে পারবে না।
বরঞ্চ, রামমন্দির নিয়ে বেশি মাতামাতি করলে ফল উল্টো হতে পারে - রামমন্দির নির্মাণে বিজেপির ব্যর্থতা প্রকট হতে পারে। প্রায় বছর পঁচিশ আগে বাবরি মন্দির ধ্বংস নিয়ে যে পরিমাণ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছিল এবার কিন্তু এই ইস্যু নিয়ে মানুষ ততটা উৎসাহী নয়।
কংগ্রেসের কাছে যা পরিবারতন্ত্র, বিজেপির কাছে তাই রামমন্দির [ডেইলি ও]
বিজেপি যে রকম মানুষের পরিচয় সংক্রান্ত ইস্যুগুলোকে হাতিয়ার করে, কংগ্রেস তেমনি একটি পরিবারকে কেন্দ্র করে সহানুভূতি জোগাড় করার চেষ্টা করে।
সরকারি ভাবে কংগ্রেস দলে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর প্রবেশ কিন্তু বেশ উৎসাহের সৃষ্টি করতে পারে কারণ এর সঙ্গে নেহেরু-গান্ধী পরিবারের যোগাযোগ রয়েছে।
কিন্তু এই ইস্যুটিকেও বেশ মেপে শান দিতে হবে।
এই পর্যন্ত আমরা প্রিয়াঙ্কাকে শুধুই তাঁর পরিবার নিয়ে কথা বলতে শুনেছি।
পারিবারিক ঐতহ্য থাকতে পারে, কিন্তু সর্বত্র তা কাজে আসে না [ছবি: রয়টার্স]
কিন্তু তিনি যদি শুধুমাত্র তাঁর ঐতিহ্য, পরিবার ও স্বামীর উপর মনোনিবেশ করে থাকেন তাহলে দর্শক (সঙ্গে সংবাদমাধ্যমও) হয়ত আসবে কিন্তু তারা কোনও ভাবেই তাঁর প্রচারে কথা বলবে না। সফল রাজনীতিবিদরা সর্বদাই অতীত নয় ভবিষ্যত নিয়ে কথা বলে থাকেন। সক্রিয় রাজনীতিতে প্রিয়াঙ্কার আগমন যেন শুধুমাত্র তাঁর স্বামীর রক্ষার্থে না হয়ে থাকে (ইডির দপ্তরে গিয়ে তিনি এমনটাই জানিয়েছিলেন) বা শুধুমাত্র তাঁর ভাইয়ের (যিনি এখন কিছুটা হলেও নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছেন) জন্যে না হয়ে তাকে কিংবা শুধুমাত্র ইন্দিরা গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী ও রাজীব গান্ধীর স্মৃতিরোমন্থনের জন্য না হয়ে থাকে।
আর, যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে সক্রিয় রাজনীতিতে প্রিয়াঙ্কার অবদান শুধুমাত্র সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই হবে না।
তাঁর পরিবারের সদস্যদের কখন কী ভাবে আক্রমণ করা হয়েছে এই 'গল্পগুলোর' বাইরে বেরিয়ে তাঁকে অন্য বিষয়েও কথা বলতে হবে। তিনি পূর্ব উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে রয়েছেন যেখানে দুই আঞ্চলিক দল এসপি ও বিএসপি একত্রে বিজেপির বিরোধিতা করবে। একত্রে এই দুটি দল কিন্তু বেশ শক্তিশালী বিরোধী হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে।
নিজেকে ফের নতুন করে গঠন করতে হবে [ছবি: রয়টার্স]
এসপি ও বিএসপি মূলত জাত ও মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলে। সেখানে কংগ্রেস এখনও পুরোনো পন্থায় বিশ্বাসী যে পন্থাকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে গাঙ্গেয় উপকূলের মন্ডলরা ও মন্দিরগুলো। আমেঠি ও রায় বেরেলির বাইরে কংগ্রেসের তারকা প্রচারক হয়ে উঠতে পারেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তাই তাঁকে শুধুমাত্র বিখ্যাত পরিবারের সদস্যের তকমা ছেড়ে দ্রুত বেরিয়ে আসতে হবে। স্ত্রী হিসেবে তিনি তাঁর স্বামীকে রক্ষা করতেই পারেন। কিন্তু বুঝতে হবে যে তাঁর স্বামী কখনই তাঁর রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে উঠবে না - একমাত্র যদি না এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হয় যে শুধুমাত্র প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর স্বামী বলেই রবার্ট ওয়াদরা বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে।
একটা জিনিস কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে। আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে দিনক্ষণ হিসেবে করে তদন্তকারী সংস্থাগুলো বিরোধী নেতা নেত্রীদের নোটিস পাঠিয়ে চলেছে। গত সপ্তাহে এই বিষয়টিকে বেশ নাটকীয়ভাবে জনসমক্ষে নিয়ে এসেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু ওয়াদরার বিরুদ্ধে মামলাটি তো বিজেপি সরকার দখলের আগেই শুরু হয়েছিল। আইএসি এই মামলাটির সূত্রপাত করে এবং ইউপিএ দুইয়ের আমলেই সংবাদমাধ্যমে এই মামলা সংক্রান্ত প্রতিবেদন বেশ ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছিল।
শুধু দাদার পাশে দাঁড়ালে চলবে না, রাহুল তো এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছেন [ছবি: রয়টার্স]
সুতারং, এই বিষয়ে শুধু একটি প্রশ্নই বর্তমানে করা যেতে পারে - এত বছরের পুরোনো মামলায় নতুন করে এমন কী তথ্য উঠে এল যে সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগেই ওয়াদরাকে ফের ম্যারাথন জেরার সম্মুখীন হতে হল?
তবে বিজিপি ও সরকারের অধীনে থাকা সংস্থাগুলোর কর্মকান্ডে প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে প্রিয়াঙ্কার উচিত এমন কিছু করা যাতে বিজেপি উল্টে প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হয়। বেনারসে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর বিরোধিতা করতে পারলে এ ক্ষেত্রে মন্দ হয় না। এই যুদ্ধে হেরে গেলেও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে লোকে মনে রাখবেন কারণ তিনি পরিবারের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছেড়ে অন্যত্র লড়াই করার সাহস দেখিয়েছেন।
পূর্ব উত্তরপ্রদেশে হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি আসন রয়েছে যেখানে কংগ্রেসের জয়ের সুযোগ রয়েছে। তাই শুধুমাত্র পবিত্র বেনারসে তিনি লড়াইয়ে নামলে তাঁর পক্ষে ভালো হবে। গোটা পূর্ব উত্তরপ্রদেশ জুড়ে ঘুরে বেরিয়ে শেষমেশ শুধুমাত্র রায় বেরিলি ও আমেঠি আসন দু'টি দখল করার চাইতে প্রিয়াঙ্কার উচিত বেনারসে মনোনিবেশ করা।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে