পূর্ব উত্তরপ্রদেশে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আগমন কি শেষ অবধি বিজেপিকেই সাহায্য করবে?
প্রাক-নির্বাচনী জোটে স্থান না পেয়ে, হিন্দি বলয়ে চাপ সৃষ্টি করতে এবার মরিয়া হয়ে উঠেছে কংগ্রেস
- Total Shares
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে নিজেদের ভিত শক্ত করতে মরিয়া ছিল সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ও বহুজন সমাজবাদী পার্টি (বিএসপি)। কিন্তু, তা করতে গিয়ে, এই দুটি দল বিজেপিকে সুবিধা করে দিয়েছে।
প্রাক-নির্বাচনী জোটে কংগ্রেসকে বাইরে রেখে, বা কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও রকম সমঝোতা না করে, বিএসপি প্রধান মায়াবতী ও এসপি নেতা অখিলেশ যাদব শুধুমাত্র কংগ্রেসকে এমন একটা জায়গায় ঠেলে দিয়েছেন যা শুধু তাঁদেরকেই সমস্যায় ফেলবে না, বিজেপিকেও সাহায্য করবে।
সম্প্রতি, পূর্ব উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস সংগঠনের দায়িত্ব নিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তিনি বেশ কিছু হিসেবনিকেশ উল্টে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। এর পাশাপাশি, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব দিয়ে কংগ্রেস বুঝিয়ে দিয়েছে যে তারাও আসরে নেমে পড়েছে।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আগমন উত্তরপ্রদেশের প্রচুর রাজনৈতিক অঙ্ক ওলোটপালোট করে দিতে পারে [ছবি:এপি]
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন 'যুক্ত ভারত' জনসভায় সর্ববৃহৎ বিরোধী জোটের আয়োজন করেছিলেন সেদিন থেকেই বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন যে এই জোট ফলপ্রসূ হলে কংগ্রেস ও বিজেপি দুটি দলকেই ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেবে।
একটা কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় - হিন্দি বলয়ে কংগ্রেস বিরোধীদের উপর চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। এই অঞ্চলের ১৪৫টি লোকসভা আসনে - উত্তরপ্রদেশের ৮০টি ও রাজস্থান, ছত্তিসগড় ও মধ্যপ্রদেশ মিলিয়ে ৬৫টি আসনে সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে শাসক দল বিজেপিকে পরাস্ত করেছে কংগ্রেস।
এই নির্বাচনগুলোতে কংগ্রেসের কর্মসূচি বেশ পরিষ্কার ছিল। সমাজতান্ত্রিক ম্যানিফেস্টোতে বিশ্বাস করে কংগ্রেস 'কৃষক-বন্ধু' হয়ে উঠতে চেয়েছিল। এর ফলে, ২০১৪ লোকসভায় গোটা দেশ জুড়ে যত আসন তারা পেয়েছিল এবার, শুধুমাত্র এই অঞ্চল থেকে, তার চাইতে বেশি আসন তারা পেয়েছে।
কলকাতায় এক জোট বিরোধী শিবির [ছবি: পিটিআই]
বক্তা হিসেবে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী অসাধারণ। তিনি তাঁর দাদা রাহুলের থেকে অনেক বেশি স্বাভাবিক, স্বচ্ছন্দ। দলীয় সমর্থকরা তাঁর মধ্যে ইন্দিরা গান্ধীর ছায়া দেখতে পায়। তিনি কি মোদীর 'ঘরের মাঠে' মোদীর বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন? যদি শেষ পর্যন্ত এই লড়াইটা দেখতে পাওয়া যায় তাহলেও প্রিয়াঙ্কা কিংবা কংগ্রেসের হারাবার কিছু থাকবে না।
যে ভাবে অ-বিজেপি অ-কংগ্রেস জোটের দাবি উঠে আসছে তাতে একমাত্র ইউপিএ শরিকদের ছাড়া কংগ্রেস খুব বেশি কাউকে পাশে পাবে না।
প্রিয়াঙ্কা হয়ত শুরুতেই দর্শকদের কাছে মোদীর মতো জনপ্রিয় হয়ে উঠবেন না। কিন্তু তিনি যদি সত্যি সত্যিই শেষ পর্যন্ত পূর্ব উত্তরপ্রদেশের কোনও আসন থেকে প্রার্থী হন তাহলে প্রধানমন্ত্রী মোদী কিংবা মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ কিন্তু তাঁকে উপেক্ষা করতে পারবেন না।
এ ক্ষেত্রে, স্বাভাবিক ভাবে তিনিই প্রধান বিরোধীমুখ হয়ে যাবেন। আশা করা যায়, এসপি ও বিএসপি নেতৃত্ব এতোক্ষনের এই সত্যটা বুঝে গিয়েছে।
প্রিয়াঙ্কা প্রার্থী হলে যোগী আদিত্যনাথ ও নরেন্দ্র মোদী তাঁকে উপেক্ষা করতে পারবেন না [ছবি: পিটিআই]
এটা ঘটনা যে তিনি জনসমক্ষে চলে আসার মানে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের সুর আবার চড়তে দেখা যাবে। ইতিমধ্যেই, তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ও কংগ্রেসের 'পরিবারতন্ত্র' নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে।
প্রিয়াঙ্কা কতটা কার্যকর হবে তা শুধুমাত্র কংগ্রেসের এই নতুন সাধারণ সচিবের উপর নির্ভর করবে না। কংগ্রেসের প্রার্থী নির্বাচন ও জাত রাজনীতির অঙ্কের উপরও অনেকটা নির্ভর করবে।
ত্রিমুখী নির্বাচনে নাকি উচ্চশ্রেণীর ভোট কংগ্রেসের পক্ষেই যাবে - এই তত্ত্বটা কিন্তু একেবারেই সঠিক নয়।
শেষ হাসিটা কে হাসবেন তা কিন্তু ফল প্রকাশের পরই জানা সম্ভব।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে