উত্তর দিনাজপুরের দাঁড়িভিটে ছাত্রদের উপরে গুলি: ক্ষমাহীন অপরাধ পুলিশের
কেন্দ্রের বা রাজ্যের পুলিশের নয়, চাই বিচারবিভাগীয় তদন্ত
- Total Shares
ছাত্রদের উপরে পুলিশের যে আচরণ ছিল তা ক্ষমাহীন অন্যায় আচরণ। রাজ্যে প্রশাসন বলে কিছু নেই। সরকারের দুটি দাঁত – একটি খাওয়ার এবং অন্যটি দেখানোর। একটি দাঁত দিয়ে খাচ্ছে, আর যখন আটকানোর দরকার তখন পুলিশকে ডাকছে, এটি দেখানোর দাঁত।
Police opened fire on protesting students at #Islampur, #WB. One killed & many injured. @salimdotcomrade rushed to Hospital. Students called all out protest & students strike on 22nd. Trigger-happy Police @MamataOfficial. The most nonsense administration. #BengalMeansBullet. pic.twitter.com/c16TVOmdEf
— Dr.Sujan Chakraborty (@Sujan_Speak) September 20, 2018
প্রথমত, পুলিশ গুলি চালিয়েছে কি চালায়নি এটি পুলিশ জানছে ২৪ ঘণ্টা পরে? সেটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জার্মানি থেকে ও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কলকাতা থেকে বলে দেওয়ার পরে? ওখানে উপস্থিত মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (এসডিপিও) বা আইসি বা অন্য কোনও আধিকারিক, যিনি দায়িত্বে ছিলেন তিনি তো বলতে পারতেন যে “আমরা গুলি চালাইনি।”
দ্বিতীয়ত, পোস্ট মর্টেম এবং ব্যালিস্টিক টেস্টে তো বোঝা যায় কোন বুলেট কোন মেসিন থেকে বেরিয়েছে। রাজকুমারের সময় আমরা দেখেছি ওরা দ্বিতীয় পোস্টমর্টেম করতে চায়নি, আদালতে যেতে হয়েছে। আমি দাবি করেছিলাম, ওঁর পরিবার দাবি করেছিল এবং এখনও সেই দাবি আছে যে ফরেন্সিক পোস্টমর্টেম করতে হবে।
তৃতীয়ত, সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশ আছে যে এই ধরনের মৃত্যু হলে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে, এক্সপার্টকে সঙ্গে রেখে, পরিবারের লোককে সঙ্গে রেখে পোস্টমর্টেম করতে হয় এবং সেটির ভিডিয়োগ্রাফি করতে হয়। সেটি কেন করা হচ্ছে না?
মঙ্গলবার বলা হল যে কাজে যোগ দিতে দেবে না, বুধবার কার চাপে তা বদলাল? সাধারণ প্রশাসন (সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) ব্যর্থ হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে আবার বদল হয়েছে। সমস্যা তো কয়েক দিন ধরেই চলছিল: গোয়েন্দা বিভাগ কোথায়, তাদের রিপোর্ট কোথায়? পুলিশ সে দিন যে ভাবে গাড়ি চালাচ্ছিল স্কুলের মাঠে তাতে যে কোনও বাচ্চা চাপা পড়তে পারত। ওটা কি বহিরাগতদের গাড়ি ছিল? ছাত্রদের সঙ্গে কেই ওই ধরনের আচরণ করে? আমাদের কাছে সেই ঘটনার ভিডিয়ো আছে।
পুলিশ তো ঠিক করবে না স্কুলে কে কাজ করবেন, কে করবেন না? ভোট লুঠও পুলিশ করবে, টেন্ডার পাঠানোও পুলিশ ধরবে, তৃণমূলের মিছিলে লোক নিয়ে আসবে পুলিশ, বিরোধীদের মিছিল-সভা-অবরোধ করতে দেবে না পুলিশ, গুলি চালাবে পুলিশ আবার স্কুলের পরিচালনাও পুলিশ করবে? এটাই কি রাজ্যের প্রশাসন? এর মানে প্রশাসন পুরোপুরি ব্যর্থ! বহিরাগত যদি এসেও থাকে তা হলে তাদের আটকানোর দায়িত্ব তো পুলিশের!
@salimdotcomrade বলেন: ‘‘মঙ্গলবার থেকে ছাত্র বিক্ষোভ হচ্ছে, জেলা প্রশাসন ও রাজ্য প্রশাসনের উচিত ছিল সেদিন ছাত্র আন্দোলনকে গুরুত্ব দেওয়া। হোস্টেল আন্দোলন থেকে স্কুলের আন্দোলন, পুলিশের গুলি দিয়েই মোকাবিলা করতে চায় তৃণমূল সরকার।’’ @MyAnandaBazar @ANI @ndtv @CNNnews18 @TimesNow pic.twitter.com/h1SB2nOxh4
— AJOY DASGUPTA (@ajoydasgupta) September 20, 2018
অস্ত্র এল কোথা থেকে? যারা তৃণমূলের হয়ে ভোট লুঠ করেছে তা হলে তারাই তো বিজেপির হয়ে গুলি চালিয়েছে!
আমরাও ৩৪ বছর সরকার চালিয়েছি। যখন পরিস্থিতি অশান্ত হচ্ছে তখন অভিভাবকদের নিয়ে কেন স্কুলকমিটি বা পঞ্চায়েত বৈঠক ডাকল না? উঁচু শ্রেণীর ছাত্রদের সঙ্গে কেন আলোচনা করা হল না? মঙ্গলবার সকালে যখন দাড়িভিটে প্রথমবার ছাত্ররা অবরোধ করছে তখন তৃণমূলের লোকেরাই মন্ত্রীদের কাছে খবর দিয়েছে। তখন স্কুল প্রশাসনের লোকজন অর্থাৎ ডিআই, এসআই এবং প্রধানশিক্ষকদের নিয়ে পাবলিক হলে বৈঠক করছিলেন মন্ত্রী রব্বানি ও বিধায়ক কানহাইয়ালাল আগরওয়াল। এটা বলার পরেও তিনি এতে গুরুত্ব দেননি। দায়িত্বশীল সরকার হলে পুলিশের দরকারই হত না, মন্ত্রী বা বিধায়ক যেতে পারতেন। তাঁরা দলের লোকের সঙ্গেও কথা বললে না, কারণ তাঁরা সমাধান করার কেউ নন, তাঁরা শুধু সমস্যা তৈরি করতে পারেন।
দাঁড়িভিট স্কুলের শিক্ষক নিয়ে বৃহস্পতিবার গুলি চালানোর ঘটনাটি ঘটেছে, শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে স্কুলে সমস্যার খবরটা আমি অবশ্য মঙ্গলবারই পেয়েছিলাম। ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদ করে, রাস্তা অবরোধও করে। আমি বুধবার দাঁড়িভিটে যাই, দাঁড়িভিট বাজারে আমরা সভা করি। তখন শুনি সব মিটে গেছে। তা হলে পরে গুলি চলল কেন? ডিআই-কে জিজ্ঞাসা করা হোক কার চাপে সিদ্ধান্ত বদল হয়েছে?
When @MamataOfficial busy in her foreign tour, puppet police of @AITCofficial Govt opened fire on protesting students in Uttar Dinajpur. Rajesh Sarkar succembed to death on the spot. Tapas Barman lost his life today. #BengalBleeds once again. #BengalMeansBullet pic.twitter.com/fzzs2iF3rK
— CPI(M) WEST BENGAL (@CPIM_WESTBENGAL) September 21, 2018
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি এবং স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। প্যানেল থেকে রিকুইজিশন, পোস্টিং – নানা ধাপে তৃণমূলের নানা স্তরের নেতা-মন্ত্রীরা এবং তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত-জেলাপরিষদের নানা ধরনের চাপ থাকায় কোথাও চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষক দেওয়া হচ্ছে না।
রাজ্যে ছ’বছর ধরে এসএসসি-র মাধ্যমে বিদ্যালয়, উচ্চবিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রেখেছে সরকার। তারপরে যদি আদালতে লড়ে নিয়োগ চালু করতে হয়, তা হলে সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক। এর মধ্যে আবার তৃণমূলের পঞ্চায়েত দ্বারা স্কুল দখলও হচ্ছে। ম্যানেজিং কমিটিতে তাদের তাঁবেদার লোকজনকে বসানো হচ্ছে যাদের মূল কাজ হল মিড-ডে মিলের টাকা কী ভাবে চুরি করা হবে তা দেখা। পোস্টিং, ভর্তি ও বদলির ক্ষেত্রে কী ভাবে টাকা-পয়সা নেওয়া হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ্বতা আনা দরকার।
আমরা জানতামই না যে এখানে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে। এই জেলায় একজন হাফমন্ত্রী ও একজন বেনামমন্ত্রী আছেন এবং আরও কয়েকজন আছেন যাদের মধ্যে রেষারেষি রয়েছে, অর্থাৎ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে। এই ইসলামপুরে পঞ্চায়েত দখল করা নিয়ে খুন হয়েছে।
রাজেশ সরকারের পর তাপস বর্মণ। ইসলামপুরে পুলিশের গুলিতে খুন আরও এক শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র। আহত অবস্থায় গতকাল রাতে তাপসকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হলে, সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। #BengalBleeds#BengalMeansBullet pic.twitter.com/J7dwimtTiE
— CPI(M) WEST BENGAL (@CPIM_WESTBENGAL) September 21, 2018
দাঁড়িভিট স্কুলে গুলিতে দুই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল উত্তর দিনাজপুরের পুলিশসুপার রাজনৈতিক বক্তব্য রেখেছেন। পুলিশসুপার বলছেন বহিরাগত ছিল, মুখ্যমন্ত্রী ইউরোপ থেকে বলছেন আরএসএস ছিল – সে কথা পুলিশসুপার জানতেন না? তিনি যে কথা বলছেন তা তো মন্ত্রীদের বলার কথা। তা ছাড়া খাল কেটে কেউ যদি তাদের এ রাজ্যে এনে থাকে সেই দল তো তৃণমূল কংগ্রেস, তারাই তাদের এ রাজ্যে নিয়ে এসেছে!
প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষক দিতে হবে, যেখানে যেমন দরকার, সেই অনুয়ায়ী শিক্ষক দিতে হবে। কিন্তু গোটা রাজ্যে যে অরাজকতা চলছে, শিক্ষাক্ষেত্রেও সেই অরাজকতা রয়েছে। ওই জায়গাতেই বিগত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস হেরেছে কিন্তু তারা তো অন্যপন্থায় প্রাণের বিনিময় পঞ্চায়েতের দখল করেছে! সেই একই ভাবে তারা স্কুল, স্কুলের বিভিন্ন পদ এমনকি শিক্ষকপদও দখল করতে চাইছে। মূল কথাটি হল স্বচ্ছতার অভাব।
এর মধ্যেই কেউ কেউ উর্দু-বাংলা-হিন্দি-ইংরেজি-সংস্কৃত বা হিন্দু-মুসলমান বা ওই মহকুমা-এই মহকুমা নিয়ে কথা বলছেন। এটাই তো বিচ্ছিন্নতা, এর পরে তাঁরা আলাদা জেলা করতে চাইবেন। তাঁরা এখন ঘোলাজলে মাছ ধরতে চাইছেন।
এসআই, ডিআই, স্কুল প্রশাসন, সরকার, পুলিশ, বিধায়ক, মন্ত্রী সকলেই তো জানতেন যে সোমবার থেকে এ নিয়ে বিক্ষোভ চলছে, মঙ্গলবার রাস্তা অবরোধ হয়েছে। মঙ্গলবার স্কুল কমিটি লিখিত ভাবে বলে দিল যে তারা নেবেন না। বুঝবার গোয়ালপুকুরে মন্ত্রীর এলাকায় নিয়োগ করতে দেওয়া হয়নি, সেখানেও ভাষাগত প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিজেপি ও তৃণমূল যে বিভাজনের রাজনীতি করছে প্রশাসন তার মোকাবিলা না করে তার অংশীদার হয়ে গেলে এই ধরনের সমস্যা আরও বাড়বে।
এখানে মন্ত্রী বলছেন কাজে যোগদান করতে দিতে হবে, বিধায়ক বলছেন কাজে যোগ দিতে দেওয়া হবে না। এটা কি রাস্তার ঠিকাদারি নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব? স্কুলও কি সেই ভাবে পরিচালিত হবে?
ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা গিয়েছে বহিরাগত ছিল। তারা তো ভাষা ও ধর্ম নিয়ে বিভেদ সৃষ্টিকারী। পুলিশ এই ঘটনায় কেন সিপিএমের এরিয়া কমিটির নিখিল সিকদারকে আটক করেছে? তাঁকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম পুলিশকে দেখলে ভয় পেতাম। এখন তারা গুণ্ডা-চোরাচালানকারীদের সঙ্গে এক হয়ে গিয়ে সম্মান হারিয়েছে। তাই তাদের দেখে ছাত্ররা সম্মান করছে না।
ছাত্রদের উপরে এই হামলায় আমরা বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি। কেন্দ্রীয় সরকার যে ভাবে সিবিআইকে তোতাপাখি করে রেখেছে, রাজ্যের পুলিশকে একই ভাবে ময়না করে রেখেছে রাজ্য সরকার।