তৃণমূল ভাবছে, সবাই ভোটে যোগ দিলে তাদের রাজনৈতিক বিপর্যয় হবে
সংরক্ষিত ৫০ শতাংশ আসনে দাঁড়ানো মহিলা প্রার্থীদের মনোনয়ন তুলতে হুমকি পুলিশের
- Total Shares
আমরা যারা এ রাজ্যে বিপক্ষ রাজনৈতিক দলের লোক, বিচার চাওয়ার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। কিসের বিচার আমরা চাইছি? নির্বাচনে যেন অংশগ্রহণ করতে পারি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য সরকারের। রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য সরকারের কাছে বারে বারে আবেদন-নিবেদন করার পর যখন সবকিছু বিফল হয় তখনই আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়।
অতএব, বিপক্ষ দলের পক্ষ থেকে আদালতে যাওয়া মানে, আমি মনে করি তা রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার বড় পরিচয়। কারণ এই পঞ্চায়েত ভোট খুব ভালো ভাবেই রাজ্য সরকার করাতে পারত। আমার অবাক লাগছে এ কথা ভেবে যে, যে রাজ্যে এই মুহূর্তে সবক’টা জেলা পরিষদ তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে, সরকার তৃণমূলের, এবং কোনও দিনই সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধ রাজনৈতিক দলের অধীনে থাকা সবক’টি জেলা পরিষদ দখল হয়ে গিয়েছে, এমন ইতিহাস নেই। সেখানে দাঁড়িয়ে তারা এ রকম নৃশংসতা, নিষ্ঠুরতার আশ্রয় নিয়ে কেন মানুষকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দিচ্ছে না বা দিল না, সেটা আমার কাছে বড় জিজ্ঞাস্য।
হয়তো তৃণমূল কংগ্রেস দল নিজেরা মনে করছে যে, সবাইকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ার সুযোগ দিলে হয়তো তৃণমূল দলেরই কোনও রাজনৈতিক বিপর্যয় হতে পারে। এই ভাবনা থেকে তারা হয়ত নির্বাচনে বিপক্ষ দলগুলোকে অংশগ্রহণ করতে না দিয়ে নির্বাচনকে একটা প্রহসনে পরিণত করতে চাইছে।
অধীরকে আটকাচ্ছে শাসক দল
সরকার যখন বলে আমার ১০০ শতাংশ আসন চাই, সরকারি দলের মন্ত্রীরা যখন বলেন যে যারা বিরোধীমুক্ত পঞ্চায়েত উপহার দিতে পারবে তাদের পাঁচ কোটি টাকা করে পুরষ্কার দেওয়া হবে, তখন স্বাভাবিক ভাবেই এই সরকারের নির্বাচনের প্রশ্নে আন্তরিকতা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন আছে। কারণ এই সরকার নিজেরা পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে দিচ্ছে না এবং দেবেও না। আর এখানকার নির্বাচন কমিশনার: কাগজে-কলমে তাঁদের স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধীনতা বা অটোনমি আছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাদের এমন কোনও ক্ষমতা নেই যে ক্ষমতার দ্বারা নির্বাচনের সময় তারা প্রশাসনকে নিজেদের মতো করে চালাতে বাধ্য করতে পারে, যেটা কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের আছে। ফলে রাজ্যের নির্বাচন কমিশনকে তার অধিকার আদায় করতে গেলে তাকেও আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে। যেমন ভাবে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল মীরা পাণ্ডেকে।
এর আগের নির্বাচনেও আমরা দেখেছি, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য নির্বাচন কমিশনার আদালতের দ্বারস্থ হন, নির্বাচন চলাকালীন নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করেন। স্বাভাবিক ভাবেই পশ্চিমবঙ্গে এর আগে, তৃণমূল আমলের হওয়া অন্য নির্বাচনগুলো প্রহসনে রূপান্তরিত হওয়ার মতোই এই নির্বাচনও আর একটা প্রহসনে রূপান্তরিত হয়ে আত্মপ্রকাশ করছে।
শান্তিপূর্ণ পঞ্চায়েত ভোটে দাবি
কলকাতা হাইকোর্ট সমস্ত বিষয়টাকে অনুধাবন করে যে রায় দিয়েছে, সেই রায় জনগণকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ সুনিশ্চত করার রায়। কিন্তু রাজ্য সরকার যদি নানা রকম বাহানা করে হাইকোর্টের রায়কে অবজ্ঞা করার চেষ্টা করে, তা হলে স্বাভাবিক ভাবেই সাধারণ মানুষের পঞ্চায়েত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এখনও পর্যন্ত তৃণমূল এবং পুলিশ যে ভাবে নির্বাচন পরিচালনা করছে, তা শুনলে অবাক হয়ে যাবেন। নির্বাচনে কংগ্রেস দলের প্রার্থীদেরকে পুলিশ সরাসরি হুমকি দিয়ে বলছে প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নিতে।
এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৫০ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। সেই মহিলাদের কী ক্ষমতা আছে পুলিশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে পঞ্চায়েত ভোটে অংশগ্রহণ করার? করলেও তাদের সংখ্যা কম।
অর্থাৎ, সরকার এখানে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছে যে তারা কোনও ভাবেই এই পঞ্চায়েত নির্বাচনকে অবাধ করে দেব না। এবং এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে একশো শতাংশ আসন দখল করার মধ্য দিয়ে আগামী লোকসভা নির্বাচনের বুনিয়াদকে শক্ত করব। তাই এই নির্বাচন প্রহসনে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।