পবিত্র নির্বাচন উৎসবে কারও পৌষ মাস তো কারও সর্বনাশ
পাড়ার ছোকরা ব্যস্ত ভোট জোগাড়ে, বাড়ির গিন্নি ব্যস্ত ভৃত্যে ভোটের ছুটি নিয়েছে বলে
- Total Shares
সোমবার ছিল পবিত্র পঞ্চায়ত ভোট উৎসব। আর এই দিনে ধরা পড়ল দুই জায়গার দুই চিত্র। প্রথমটা নদিয়াতে, কৃষ্ণ পাল নামে এক ব্যাক্তি, বয়স ৪২, নদিয়ার কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা। ইনি কোনও একটা রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী, বাড়ি ভর্তি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবি, প্রচণ্ড ধার্মিক মানুষ (১০টা জগদ্ধাত্রী পুজোর সেক্রেটারি)। গত কাল ছিল এঁর জীবনে কিছু করে দেখানোর দিন, তাই গত পরশু রাতে অল্প মাত্রায় ‘টনিক’ খেয়েও ভালো ঘুম হয়নি। ভোটের দিন বেশ ভোরে উঠে স্নান সেরে বিশেষ দিনের জন্য তুলে রাখা সবুজ পাঞ্জাবি, সাদা পাজামা আর পায়ে বিদেশি ব্র্যান্ডের স্নিকার্স পরে বেরিয়ে পড়লেন জনগণকে শান্ত রাখতে, মানে জনগণের কল্যাণ করতে। বুকের ভেতর পাহাড় সমান সাহস (পড়বেন ‘ঔদ্ধত্য’) আর বাংলা মাতার (অনেকটা ‘ভারত মাতার’ মতো) প্রতি অগাধ ভক্তি নিয়ে সকাল সাতটায় নেমে পড়লেন রাস্তায়। সারাদিন ধরে অনেক কিছু করলেন, কখনও খেললেন হোলি, আবার কখনও মানালেন পেটো দিয়ে দীপাবলি। আসলে ভোট যে একটা উৎসব সেটাই বোধহয় বোঝানোর চেষ্টা করেছেন ইনি।
নির্বাচনে মহিলারা শুধু লাইনে দাঁড়ান না, হেঁশেলও ব্যস্ত থাকেন
অন্যদিকে আর এক জেলায় ভোট উৎসবের আর এক চিত্র ধরা পড়ল। বীরভূমে তারামায়ের চরণতলে থাকেন ওই একই রাজনৈতিক দলের আরও এক প্রভাবশালী কর্মী হরি দাস। এঁর দিনটাও কেটেছে বেশ আরামে, যদিও দিনটা তেমন মধুর হয়নি। ‘ভদ্রলোক’ সোমবার সকাল থেকেই নিজের বাড়ি লাগোয়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে ছিলেন বেশ খোশ মেজাজে, কারণ এলাকায় তাঁর দল বিরোধী শূন্য (পড়ুন অন্য দলদের ঢুকতেই দেয়নি)। আর তাই ভোটের আগের দিন তিনি মন খুলে বাজার করেছেন, নির্দ্বিধায় মাংসও কিনেছেন। ভোটের দিন সকালে পুকুর থেকে মাছ তুলিয়েছেন, এমন কী বাগানের গাছ থেকে আমও পাড়িয়েছন। আগের দিন রাতে বউকে সব দিয়ে বলেছিলেন “বেশ ভালো করে রান্না কর, কাল দুপুরে অনেক লোক খাবে।” ভোটের দিন ঘুম থেকে উঠে বিছানার পাশে চায়ের কাপটা রাখার শব্দেই বুঝেছিলেন রাজনৈতিক ভাবে দিনটা হয়ত দারুণ কাটবে, কিন্তু আজ তাঁর কপালে এক অন্য দুঃখ নাচছে। সকালে অফিস থেকে যত বার ঘরের দিকে গেছেন, শুনেছেন জোরে জোরে বাসনের আওয়াজ। সাহস করে একবার রান্নাঘরের দিকে গেলেনও, দেখলেন গিন্নি বেশ উচ্চস্বরে গজ গজ করছেন। যার সারমর্ম ‘হরি বাবুর আজ হরিবল।’ কাজের মেয়ে ছুটি নিয়ে গেরামে গেছে ভোট দিতে। ব্যাস, আর যায় কোথায়?
এঁর ভোট উৎসবকে ঠিক বিরোধী শূন্য বলা যায় কি?
(এই লেখাটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক এবং এর সঙ্গে বাস্তবে কোনও জায়গা বা ব্যাক্তির বা কোনও রাজনৈতিক দলের যোগ নেই। এই লেখার সঙ্গে কোনও ঘটনার যদি মিল পাওয়া যায় সেটা পুরটাই কাকতালীয় এবং অনিচ্ছাকৃত।)