মনোনয়ন জমা করতে না দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে নতুন ইতিহাস রচনা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে একমাত্র তৃণমূলের আমলেই বিজেপির ভোট তিন শতাংশ থেকে ২১ শতাংশ হতে চলেছে
- Total Shares
গণতন্ত্রের পূজারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশ মন্ত্রী হিসেবে তাঁর কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছেন সুকৌশলে। তিনি একদিকে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জিগির তুলে বিজেপির বিরুদ্ধে নাটুকে লড়াই করছেন, আর একদিকে নিজেই মেরুকরণের রাজনীতি করে চলেছেন। নির্লজ্জ্বভাবে সাম্প্রদায়িক তোষণ করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করার ছক উনি করেছিলেন তা এখন বুমেরাং হয়ে ওনার দরজায় কড়া নাড়ছে বলেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন জমা নিয়ে এই অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্বাস করতেন যে তিনি বিজেপি বিরোধী আন্দোলন করলে সিপিএম ও অন্যান্য দলের বেশিরভাগ সমর্থক ও নেতা তাঁকেই সমর্থন করবেন। এর ফলে সব জায়গাতেই বিরোধী শূন্যভাবে তৃণমূল বিরাজ করবে। অন্যদিকে, দিল্লিতে বিজেপি মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠ হওয়া চেষ্টা করে চলেছেন তিনি।
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কৌশল ফলপ্রসূ হলো না। বিভিন্ন সম্প্রদায়কে বিভিন্ন রকম উপকরণ দিয়ে খুশি করতে চেয়েছিলেন তিনি। তাও ফলপ্রসূ হলো না। মানুষ ওনার ছল চাতুরী বুঝতে পেরে দুটো দলে ভাগ হয়ে বিজেপিকে তৃণমলের একমাত্র বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করে দিল। সেই কারণে, পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে একমাত্র তৃণমূলের আমলেই বিজেপির ভোট তিন শতাংশ থেকে ২১ শতাংশ হতে চলেছে। তাঁর সঙ্গে রাজ্যে ফুলেফেঁপে উঠল আরএসএস।
কয়েকদিন আগেই ত্রিপুরা নির্বাচন শেষ হয়েছে। বিজেপির ত্রিপুরা দখল পদ্ধতি দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এই পরিস্থিতেই তিনি হটাৎ করেই পঞ্চায়েত ভোটের দামামা বাজালেন তড়িঘড়ি। কিন্তু, কেন?
বিজেপির ত্রিপুরা দখল পদ্ধতি দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী
এর পিছনে অনেকগুলো অঙ্ক কাজ করছিল। প্রথমত, সময় কম থাকার জন্য বিরোধী একজোট হওয়া সম্ভবপর হবে না। দ্বিতীয়ত, কম সময় পেলে বিরোধীদের প্রার্থী নির্বাচন করতে বেগ পেতে হবে। তৃতীয়ত, উপযুক্ত প্রচারের সময় পাবে না বিরোধীরা। চতুর্থ, সময় কম থাকার ফলে সাংগঠনিক ভাবে বিরোধীদের সরকারি দলের সঙ্গে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। সব মিলিয়ে, গোটা রাজ্যেই তৃণমূল প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় জয়লাভ করবেন।
জেলা থেকে ব্লক স্তরে দিদির ভাইরা দিদিকে জানালেন যে গণতন্ত্র প্রক্রিয়ায় যদি বিরোধীদের নির্বাচনে সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে নির্বাচনের ফলের দ্বায়িত্ব তাঁরা নেবেন না। ভাইদের এই অনাস্থায় দিদিও টলে গেলেন। যাঁরা ভোট করে আমাকে ও আমার দলকে জেতান, যাঁদের জন্য আমি আজ মুখ্যমন্ত্রী, যাঁরা জনগণের টাকা লুঠ করে তৃণমূলের নির্বাচনের কোষাগার ভর্তি করেন তাঁরাই যদি অনাস্থা পেশ করেন তাহলে আমার কী হবে - মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিন্তিত হয়ে পড়লেন।
পুলিশ মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাই পুলিশ কে সঙ্গী করে বিরোধী মনোনয়ন পেশ করতে দিলেন না। ভাইরাও কলকাতার নেতাদের সিলমোহর যুক্ত ব্লু-প্রিন্ট হাতে নিয়ে জেলায় জেলায় ব্লকে ব্লকে দাপিয়ে বেড়ালেন। প্রশাসনকে ঠুঁটো জগন্নাথ করে রেখে বিরোধীদের নির্বাচনে দাঁড়াতেই দিলেন না।
এর ফলেই আমরা দেখলাম খুলেআম রক্তক্ষরণ, নারী লাঞ্ছনা, নারী নির্যাতন ও বিরোধীদের বাড়ি ঘর পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া। আমরা দেখলাম কী ভাবে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হলো।
আমরা দেখলাম খুলেআম রক্তক্ষরণ, নারী লাঞ্ছনা, নারী নির্যাতন ও বিরোধীদের বাড়ি ঘর পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া
পশ্চিমবঙ্গ এই ধরণের ঘটনার আগে কোনওদিনও দেখেনি। নির্বাচনের দিন সন্ত্রাস এখন আমাদের গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো মনোনয়ন জমা করতে না দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে নতুন ইতিহাস রচনা করলেন। ইতিহাসের পরের অধ্যায় গুলোতে আরও কি নৃশংসতা লেখা হবে তা কিন্তু আমরা এখনও জানিনা।
দালাল, তাবেদার, মুনাফাখোরদের হাতের পুতুল বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী। জনগণ ও বিরোধী সমস্ত দল মিলে যদি একযোগে এর প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারে তাহলে প্রত্যেকের গণতান্ত্রিক অধিকার লুন্ঠিত হবে। জনগণ নানাভাবে অত্যাচারিত হবে। এ রাজ্য 'জোর যার মুলুক তার' রাজ্যে পরিণত হবে। মেয়েদের সুরক্ষা প্রহসনে পরিণত হবে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে নৈরাজ্য কায়েম হবে, সর্বোপরি দুষ্কৃতীরা রাজ করবে।
আপনাদের ও কী এটাই কাম্য? যদি না হয়, আজি ভয়কে জয় করে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলুন।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে এই ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর ধারাবাহিকতা প্রতিটি নির্বাচনেই এবার থেকে প্রতিফলিত হবে আর মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার লুন্ঠিত হতে থাকবে। আপনি যদি ধর্ষিত হতে না চান তাহলে উদ্যত কণ্ঠে বলুন - গণতন্ত্র ধ্বংসকারী মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ সহ যথাযথ শাস্তি চাই। আর প্রতিফলন ঘটাতে রাস্তায় ভয়ভীতি প্রলোভনকে জয় করে মুক্তির আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ুন, অন্যদেরও সামিল করুন। তবেই এই আসুরিক শক্তিকে পরাস্ত করা সম্ভব।