আরাবুলকে জেলে পুরে আসলে বিরোধীদের মুখ বন্ধ করলেন মুখ্যমন্ত্রী
ভোটে হিংসার জেরে বিরোধীরা জেলে গেলে মমতা বলবেন, তিনি আগে জেলে পুরেছেন আরাবুলকে
- Total Shares
রাজ্যে পঞ্চায়েত স্তরে ভোটগ্রহণের দিন হিংসা হলে তার দায়িত্ব ব্যক্তিবিশেষের উপরে আরোপ করেছে আদালত। ভোটের প্রচার শেষ হওয়ার আগে অবশ্য কলকাতার উপকণ্ঠে ভাঙড়ে হিংসার বলি হয়েছেন এক নির্দল প্রার্থীর সমর্থক। পাওয়ারগ্রিড আন্দোলন নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই সরব ভাঙড়ের একাংশ। অবরুদ্ধ করে রাখা, গুলিতে প্রাণ হারানো, দেশদ্রোহিতার অভিযোগ— এ বার দাবি আদায়ে নির্দল হিসাবে ভোটে লড়ছেন বেশ কয়েকজন। তাদের মিছিলেই এবার তৃণমূলের গুলি, মূল অভিযুক্ত হলেন ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের ভাই আজিজুর ইসলাম ওরফে খুদে।রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আরাবুল ইসলাম গ্রেপ্তার হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ না দিলে কী হত বলা মুশকিল। সে ক্ষেত্রে এটি গ্রাম্য বিবাদের জেরও হতে পারত। খবরে প্রকাশ, এ ব্যাপারে ফোন করে রাজ্যপুলিশের ডিজির কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিং। পুলিশ তৎপর, খুদে পলাতক! প্রায়ই দেখা যায় বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্তরা পলাতক।
বীরভূমে শেখ দিলদার নামে একজন রাজনৈতিক কর্মীর নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রথমে তাঁর পরিবারের লোকজন দাবি করেছিলেন তিনি বিজেপি কর্মী, পরে তৃণমূল দাবি করে ওই ব্যক্তি তৃণমূল কর্মী, দিলদারের পরিবার তাতেও সম্মতি দেন। এ ক্ষেত্রে অবশ্য দেহ নিয়ে টানাটানি হয়নি। টানাটানির আশঙ্কাও সম্ভবত ছিল না।
নিহত ব্যক্তি যাঁর সমর্থনে মিছিল করছিলেন, তিনি স্থানীয় জমি জীবিকা ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষা কমিটির সমর্থনে নির্দল প্রার্থী হিসাবে পঞ্চায়েত ভোটে লড়ছেন। এই কমিটির আন্দোলনের জেরেই ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিডের কাজ বন্ধ।
নির্বাচনে সন্ত্রাস এই রাজ্যে নতুন নয়, কিন্তু এ বার যাঁর মৃত্যু হয়েছে তিনি কোনও প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের সদস্য নন, স্থানীয় একটা কমিটির সদস্য যে কমিটি সাকুল্যে আটটি গ্রামপঞ্চায়েত আসনে ও একটি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তাদেরও বরদাস্ত করতে চাইছে না স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। শিয়রে ভোট, এই অবস্থায় তাই “আরাবুল বাড়াবাড়ি করছে” বলে তাঁকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নির্বাচন নিয়ে সন্ত্রাসে কয়েকদিনে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে, সংখ্যাটি অসমর্থিত সূত্রে ১৫। কিন্তু আরাবুলের ক্ষেত্রেই কেন ব্যবস্থা নেওয়া হল?
প্রথমত মুখ্যমন্ত্রীর কথায় রাজনৈতিক হিংসা দমন তিনি ঘর থেকেই শুরু করলেন। তাই ভোটের দিন গোলমালের অভিযোগে বিপুল সংখ্যক বিরোধীকে জেলে পোরা হলেও, মুখ্যমন্ত্রী বলতে পারবেন, তিনি আগে নিজের দলের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে জেলে পুরেছেন। দ্বিতীয় কারণটি হল, অভিযুক্তের নাম আেরাবুল ইসলাম। মুখ্যমন্ত্রীর এই রাজনৈতিক চালে বিরোধীরা যে মাত হচ্ছেই, তা এখনই বলা চলে। ইতিমধ্যে অবশ্য হাফিজুল মোল্লার (২৪) মৃত্যুতে সরব হয়েছে বিরোধীরা।
TMC goons murder candidates, campaigners and not even allow nominations to ensure that their stranglehold continues. We will ensure that they do not succeed. #TMCViolence #Resist https://t.co/VXuASG0cpa
— Sitaram Yechury (@SitaramYechury) May 12, 2018
বিরোধীরা নিহতের দেহ নিয়ে রাতে মিছিলও করেছে। কিন্তু এ সব করে ভোটের পালে হাওয়া কতটা টানতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। যদিও আরাবুল জেলে ও তাঁর ভাই পলাতক হওয়ায় তৃণমূলের মধ্যে যারা আরাবুলের বিরোধী, তারা এই পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে।