জঙ্গিদের সুবিধা দিতে কী ভাবে নির্বাচনের বিধিভঙ্গ করেছে পাকিস্তান
মুম্বাই হামলার মূল পাণ্ডার রাজনৈতিক দল ২৬৫ জনকে প্রার্থী করেছে
- Total Shares
বুধবার পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন। তার আগে দেশের জনসাধারণের সমর্থন আদায় করতে সমস্ত রাজনৈতিক দলই ব্যাপকভাবে নির্বাচনী প্রচার সংগঠিত করেছিল। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে এত উত্তেজনার মাঝে দলীয় নেতাদের হয়ত একটি জিনিস বোধগম্য হয়ে ওঠেনি - নির্বাচন জিতলে তাঁদের হয়ত বেশ কয়েকজন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন জঙ্গিদের সঙ্গে সংসদে আসন গ্রহণ করতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মিল্লি মুসলিম লিগের (এমএমএল) মতো সংগঠনগুলোও এই নির্বাচনে প্রচুর প্রার্থী দিয়েছে। এমএমএল দলটির প্রতিষ্ঠা হাফিজ সৈয়দ, যাকে ২৬/১১র মুম্বাই হামলার মূল পাণ্ডা হিসেবে গণ্য করা হয়।
নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গোটা পাকিস্তান জুড়েই প্রচার করেছেন হাফিজ সৈয়দ
গোটা পাকিস্তান জুড়েই প্রদেশগুলোর বিধানসভা ও জাতীয় বিধানসভার আসনগুলোতে জন্য কমপক্ষে ২৬৫জনকে প্রার্থী করেছে এমএমএল। এর আগে অবশ্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রকের নিরাপত্তা ছাড়পত্র না পাওয়া পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন কমিশন এমএমএলকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নথিভুক্ত করতে অস্বীকার করেছিল। কারণ এই দলের প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সৈয়দের নাম রাষ্ট্রপুঞ্জের জঙ্গি তালিকায় রয়েছে এবং তাঁর মাথার দাম ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তা সত্ত্বেও এমএমএলের প্রার্থীরা নির্বাচনে লড়াই করছেন কারণ তাঁরা আল্লাহ-ও-আকবর তেহরিক (এএটি) নামের একটি অখ্যাত দলের হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
এখানে উল্লেখযোগ্য, হাফিজ সৈয়দ ও তাঁর দুটি সংগঠন এমএমএল ও জামাত-উদ-দায়ার নাম ওয়াশিংটনের আন্তর্জাতিক জঙ্গি তালিকাতেও রয়েছে। এমনকি পাকিস্তানের তৈরি জঙ্গি তালিকাতেও সৈয়দের নাম রয়েছে। এত নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও হাফিজ সৈয়দ কিন্তু জনসমক্ষে এসে তাঁর দলীয় প্রার্থীদের হয়ে প্রচার করেছেন এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেরিয়ে জনসভায় বক্তৃতাও দিয়েছেন।
নির্বাচন যুদ্ধের বাইরে শরিফ ও তাঁর কন্যা [ছবি: রয়টার্স]
ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সে (এফএটিএফ) পাকিস্তানের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রধান কারণ এই হাফিজ সৈয়দ। এমনকি, সৈয়দের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ কেন তা নিয়ে একাধিকবার এফএটিএফের জেরার সম্মুখীন হতে হয়েছে পাকিস্তান। এত কিছুর পরেও পাকিস্তান সরকার কিন্তু নির্বাচনের আগে সৈয়দকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জনসমক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে দিল।
নির্বাচনী বিশ্লেষকরা অবশ্য মনে করছেন যে ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে পাকিস্তানের জনগণের সৈয়দ সম্পর্কে কোনও মাথা ব্যাথা নেই। এই নির্বাচনে মূলত পিএমেল-এন, পিটিআই ও পিপিপির মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হতে চলেছে।
কিন্তু বর্তমানে শরিফ পরিবার জেলে আর পাকিস্তান পিপলস পার্টিও খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানে রাজনৈতিক মূলস্রোতে প্রবেশ করতে চাইছে এমএমএল। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে এমএমএল প্রার্থীদের একটিও আসন থেকে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ।পাশাপাশি
বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, একটি আসনও দখল করতে পারলে তা হাফিজ সৈয়দের কাছে বড় জয় হবে। কারণ একটি আসনও জেতা মানে হাফিজের কাছে তা মূলস্রোত রাজনীতিতে প্রবেশের প্রথম পদক্ষেপ হবে।