বিরোধীরা ব্যস্ত কমিশনে, প্রচারে তৃণমূল
পতাকা বদল হলেও সরকার ও বিরোধীদলের চরিত্র বদলায়নি
- Total Shares
পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরেই একটি নির্দিষ্ট ধারা বজায় রয়েছে। শাসকের আসনে কে রইল, বা বিরোধীদের আসনেই বা কে রইল, তার কোনও প্রভাব এই ধারার উপরে পড়ে না। এর সর্বশেষ উদাহরণ হল রাজ্যের স্পর্শকাতর বুথ।
বিরোধীরা দাবি করছে রাজ্যের সবক’টি আসনকেই স্পর্শকাতর ঘোষণা করতে হবে। শাসকদল তার বিরোধিতা করেছে। কারণ রাজ্যের সবক’টি বুথ স্পর্শকাতর হওয়া মানে রাজ্যে যে আইনশৃঙ্খলা একেবারেই নেই, সে কথা মেনে নেওয়া। রাজ্যপুলিশ এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে, তাদের রিপোর্ট অবশ্য বিরোধীদের দাবিকে মান্যতা দিচ্ছে না।
বাস্তব হল, রাজ্যের কেন সারা ভারতের পুলিশ-প্রশাসন জানে, নির্বাচনের মাসখানেক বিপ্লব ঘটিয়ে কোনও লাভ নেই, কারণ বাকি সময়টি তাদের সরকারের মন জুগিয়েই চলতে হবে। তা ছাড়া এ রাজ্যে পুলিশ-কর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে আইনকে আইনের পথে চলতে দেওয়ার প্রশাসনিক বুলি আওড়ানোর মতো ধৈর্য না দেখিয়ে অভিযুক্ত পুলিশকর্তাকে বাঁচাতে পথে ধর্নায় বসে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী।
ধর্নায় মুখ্যমন্ত্রী, বিরোধীরা বলছে ‘পুলিশকর্তাকে বাঁচাতে’। (নিজস্ব চিত্র)
কলাজগতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা আগে নিজেদের পেশা নিয়ে থাকতেন, তবে নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলি চালানোর প্রতিবাদে সেই যে পথে নেমেছেন, তার পর থেকে তাঁদের যে শুধু সভা-সমিতিতে নয়, দেখা যাচ্ছে আইনসভার ভিতরেও। এবারে রাজ্যের শাসকদল যে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে সেখানেও রুপোলি পর্দার বেশ কয়েকটি চেনা মুখ রযেছে, তাঁরা কেউ প্রাক্তনের দলে, কেউ এখনও সাফল্যের মধ্যে। সরকারের বিরোধিতায় তাঁরা আর নেই। পরিবর্তন যদি হয়ে থাকে তবে তাঁদেরই হয়েছে।
রাজ্যে কেন শিল্প আসে না, রাজ্য কেন চাকরি নেই, শিক্ষাঙ্গনে দুর্নীতি কেন – কোনও সময়ই তাঁদের প্রশ্ন তুলতে দেখা যাচ্ছে না, এখন শুধুমাত্র তাঁরা রাজ্যের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টায় ব্রতী। ভাবখানা এমন, বুথ স্পর্শকাতর হলেই রাজ্যের নাম খারাপ হবে, আর কিছুতে নয়।
প্রশ্ন হল এখন নির্বাচন কমিশন কী করবে। তারা সরকার ও বিরোধী পক্ষের বক্তব্য শুনেছে। বাস্তবতা হল, রাজ্যের ৭৯,০০০ মতো বুথের প্রতিটি যদি স্পর্শকাতর হয়ও, তার প্রতিটিকে স্পর্শকাতর ঘোষণা করা মুশকিল। কারণ অত কেন্দ্রীয় বাহিনী তারা পাবে কী ভাবে! দেশে প্রায় সাড়ে পাঁচশো আসনের মধ্যে এ রাজ্যে মাত্র ৪২টি। আর রাজ্যের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় এখনও মাওবাদী সমস্যার মতো বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে।
কোনও বুথে আগে হিংসার নজির থাকলে বা কোনও একটি দল প্রাপ্ত ভোটের প্রায় পুরোটাই পেলে তাকে স্পর্শকাতর ধরা হয়ে থাকে। এ রাজ্যে বাম শাসনের আমলে যেমন গ্রামাঞ্চলে বিরোধীরা প্রার্থী খুঁজে পেত না, তৃণমূলের আমলেও তেমন ভাবেই বিরোধীরা প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না। প্রার্থীই নেই তো ভোট হবে কোথা থেকে! তখনও অবশ্য দেশজুড়ে হইচই হলেও বুদ্ধিজীবীরা মনে করেননি যে রাজ্যের মুখ পুড়ছে।
কমিশনে সরব হলেও এখনও প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে পারেনি বিরোধীরা। (উপস্থাপনামূলক ছবি: পিটিআই)
রাজ্যে স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা ৩০ শতাংশেরও কম বলে মত পুলিশের, অন্তত কমিশনে জমা দেওয়া রিপোর্ট সেই কথাই বলছে, যা মানছেন না বিরোধীরা।
রাজ্যের বিরোধী দলগুলি যে সময় ব্যয় করে নির্বাচন কমিশন ও আদালতে, তার যদি সেই সময়টি দলীয় কাজে ব্যয় করতে পারত, তাতে আখেরে তাদেরই লাভ হত। স্বচ্ছতা বজায় রাকার জন্য নির্বাচন কমিশন যে অ্যাপ চালু করেছে, সেই অ্যাপে প্রথম থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস এত আবেদন করে রেখেছে যে বিরোধীরা চরম বিপাকে। তারা সভা ও মিছিল করার আবেদনই করতে পারছে না। তা নিয়ে আবার তারা গিয়েছে কমিশনের কাছে।
বিরোধীরা যখন কমিশনে যাচ্ছে, প্রার্থী বাছাই করতে হিমসিম খাচ্ছে, তখন পুরোমাত্রায় প্রচার শুরু করে দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। তাই ভোট ঘোষণার পরে প্রচারের ব্যাপারে এখন বিরোধীদের চেয়ে অনেক গুণ এগিয়ে রাজ্যের শাসকদল।