আদালতে গিয়ে ভোটে জেতা যায় না, বোঝা উচিৎ বিরোধীদের

শাসকদলের বশংবদ হয়ে থেকে পদের অপমান করেছেন অমরেন্দ্র কুমার সিং

 |  2-minute read |   11-04-2018
  • Total Shares

জনতার রায়ের উপরে ভরসা করে বসে থাকবে, এ রাজ্য কখনও এমন আহাম্মক শাসক দেখেনি। আর বিরোধীরাও জনতার রায়ে নির্বাচন জয়ের চেয়ে এ বার যেন অনেক বেশি ভরসা করছেন আদালতে নৈতিক জয়ের উপরে। মনোনয়ন পেশের সময়সীমা গভীর রাতে একদিন বাড়িয়ে বারো ঘণ্টার মধ্যে তা কমিশন তা প্রত্যাহার করে নিল। আাদালত যে অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিল, তাতে লাভ কিছু হল না, কারণ বেলা তিনটে বেজে যাওয়ায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হয়ে গিয়েছে।

যদি নির্বাচন কমিশন তার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করত তা হলেই বা কী করতে পারত বিরোধীরা? তারা কী সব আসনে প্রার্থী দিতে পারত? গ্রামপঞ্চায়েত আসনের কথা না হয় ছেড়েই দেওয়া হল, পঞ্চায়েত সমিতির সব আসনেও তো বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারেনি।

body1_041118072632.jpgগণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে সরব বিরোধীরা (পিটিআই)

নির্বাচনের দিনক্ষণ আচমকা ঘোষণা করার পর থেকেই বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছিলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্র কুমার সিং। তাঁর ‘নিরপেক্ষ’ সিদ্ধান্তে প্রথম থেকেই খুশি ছিল রাজ্যের শাসকদল। প্রথম থেকে রাজ্যের পুলিশের উপরে ভরসা করে থাকলেও, আচমকাই তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনী তলব করলেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীও ফ্ল্যাগমার্চ শুরু করে দিল, ব্যাপারটা এমন, যেন মুহূর্তে রাজ্যে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরে এল। প্রশ্ন হল, কেন্দ্রী নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীকে যদি তলব করতেই হয়, তা হলে প্রথম থেকেই তিনি তা করলেন না কেন? আসলে তিনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। একবার মনে ভাবছেন পদ-মর্যাদা অনুয়ায়ী কাজ করবেন। তার পরেই গত নির্বাচনের পরে আইপিএসদের অবস্থার কথা বিবেচনা করে আর হয়ত সাহস ধরে রাখতে পারছেন না।

খবরে প্রকাশ, শাসকদলের নেতামন্ত্রীদের চাপেই আগের রাতের বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করেছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। তার পরেই তাঁর বিরুদ্ধে শাসকদলের অনুগত হয়ে কাজ করার অভিযোগ চরমে উঠেছে। কমিশন পদের মর্যাদা নষ্ট করেছন অমরেন্দ্র কুমার সিং। এ না হয় গেল কমিশনের কথা। কিন্তু রাজ্যের পুলিশ কী করছে? গত নির্বাচনের অভিজ্ঞতার কথা মনে রেখে তাঁরাও এখন শাসকদলের আনুগত্য খোয়াতে চাইছেন না।

বিরোধীরা এখন আদালতের উপরে ভরসা করছেন। একদিন সিপিএম নেতা বিমান বসু তৎকালীন বিচারপতির উদ্দেশে বলেছিলেন, “অমিতাভ লালা, বাংলা ছেড়ে পালা,” এখন তাঁর দলও আদালতের দ্বারস্থ। কিন্তু বিরোধীরা কী বুঝেছেন, মনোনয়নপত্র জমা দিতে এক মাস সময় দেওয়া হলেও, তাঁরা সব আসনে প্রার্থী দিতে পারতেন না? দুই পঞ্চায়েত ভোটের মধ্যে কিন্তু পাঁচ বছর থাকে, ভোট ঘোষণা যদি এক মাস পরেও হত, তা হলেও কী বিরোধীরা সব আসনে প্রার্থী দিতে পারেতন?

body2_041118072733.jpgনির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের বাইরে কংগ্রেস (পিটিআই)

আদালতের কাজ বিচার করা, রায় দেওয়া। গণতন্ত্র রক্ষার দায় আদালতের উপরে চাপিয়ে দিয়ে বিরোধীরা যদি মনে করেন, তাঁদের নৈতিক জয় হচ্ছে, তা হলে জনগণের প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতা পালন করা হবে কি? বুথস্তরে সংগঠনের যে কথা প্রায়ই বিভিন্ন দলের মুখে শোনা যায়, কিন্তু ভোট এলেই সেই বুথস্তরের কর্মী দূরে থাক, প্রার্থী করার মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না ব্লক স্তরেও। তাই গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচন কমিশন, আদালত ও সর্বোপরি শাসকদলের বোধোদয়ের উপরে ভরসা না করে বিরোদীদের উচিৎ গণতন্ত্রের স্বার্থেই নিজের পায়ে দাঁড়ানো।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUMITRO BANDYOPADHYAY
Comment