লোকসভা নির্বাচন: পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি বিরোধী জোটের ফর্মুলাটা ঠিক কী
ব্রিগেডে পিনারাই বিজয়নকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মমতা, চাইছেন সোনিয়াকেও
- Total Shares
১৯ জানুয়ারি কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে, লোকসভা নির্বাচনের আগে, বিরোধীদের সর্বপ্রথম সভা হওয়ার কথা। সেই সভায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তেলঙ্গনার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও ও ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ককে আমন্ত্রণ জানাতে নারাজ।
এর পিছনে কারণ একটাই: শত্রুর বন্ধু মানে আমারও শত্রু।
এই মুহূর্তে মমতার প্রধান শত্রু বিজেপি। আর 'শত্রুর বন্ধু আমারও শত্রু' এই যুক্তিতে বামপন্থী নেতারা সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে চাইলে তাঁদেরও আমন্ত্রণ জানাতে পিছপা হবেন না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই, মমতা কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গের বাম নেতাদের ক্ষেত্রে অবশ্য স্বাভাবিক কারণেই মমতার কিছু খুঁতখুঁতুনি রয়েছে। বামপন্থীদের সঙ্গে যদি দূর থেকেও সম্পর্ক রাখা যায় তাহলে বিজেপির হাত শক্ত হবে এবং তৃণমূল কংগ্রেস ভিতর ও বাইরে থেকে দুর্বল হয়ে পড়বে।
রাজনীতি যে কোনও সময় যে কোনও দলের সঙ্গে জোট গঠন করে দিতে পারে। আর এই জোটগুলো সাধারণ ভোটারদের যত বেশি না অবাক করে তার চেয়ে ঢের বেশি আঘাত করে। বামপন্থীদের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে ২০১১ ও ২০১৬ সালে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছিল বাংলার জনগণ। সুতরাং এই মুহূর্তে, বাংলার বামপন্থীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইলে তৃণমূলের পরিস্থিতি বেশ খারাপ হবে। তৃণমূল ও বাম -- দুই শিবিরেই কর্মীদের মধ্যে হতাশা জন্ম নেবে। এর থেকে একমাত্র বিজেপিই লাভবান হবে।
বিজেপি হটাতে বিরোধী জোট চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় [ছবি: পিটিআই]
কিন্তু বিজয়নের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতালে কোনও ক্ষতি নেই। বিজয়ন কট্টর বামপন্থী যিনি কেরলে নিজের সুবিধা মতো কংগ্রেসের সঙ্গে বন্ধুত্ব বা শত্রুতার সম্পর্ক স্থাপন করেন না। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবেও তিনি বেশ ক্ষমতাবান। গেরুয়া শিবিরের বারংবার আক্রমণের সম্মুখীন হয়েও তিনি এখনও টিকে রয়েছেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য তিনি যে শুধুমাত্র জনতার রায়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন সে কথা তিনি মোদী ও অমিত শাহকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।
শেষ পর্যন্ত ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজয়ন উপস্থিত থাকবেন কিনা তা অন্য প্রশ্ন, কিন্তু বাংলার সিপিএম অবশ্য নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়েছে। মমতার সঙ্গে বাংলার সিপিএম কোনও ভাবেই সম্পর্ক স্থাপন করবে না। সম্প্রতি, কয়েকজন হেভিওয়েট কংগ্রেস নেতাদের নিয়ে রাজ্যে দু'টি সমাবেশ আয়োজন করেছিল সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র জানিয়েছেন যে কেন্দ্রে বিজেপির ও রাজ্যে তৃণমূলের মতো ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাস্ত করতে সিপিএম কংগ্রেসের সঙ্গেই থাকবে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র একটা সময় তৃণমূলে যোগ দিলেও মমতাকে খুব একটা পছন্দ করেন না। তিনিও সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। সোমেন মিত্র, যাঁকে আবার সিপিএম সাধারণ সম্পাদন সীতারাম ইয়েচুরির বেশ ঘনিষ্ঠ বলেই শোনা যায়, তিনি বলেছেন যে তিনি সিপিএম শিবিরের বার্তা হাইকম্যান্ড অবধি পৌছে দেবেন।
বিরোধী ঝড় সামলাতে মোদীকেও জোট দলগুলোর উপর নির্ভর করতে হবে [ছবি:পিটিআই]
পশ্চিমবঙ্গের চিত্র্যনাট্যটা মোটামুটি তৈরি। লড়াইটা বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের সঙ্গে। এর ফলে রাজ্যের বিরোধী ভোট ভাগাভাগি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। মমতা দেশ জুড়ে ওয়ান-টু-ওয়ান ফর্মুলায় পক্ষপাতী। অর্থাৎ, রাজ্যের প্রধান রাজনৈতিক দল বাকি দলগুলোর সঙ্গে জোট বেঁধে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করুক। কিন্তু নিজের রাজ্যে মমতার রাজনৈতিক অঙ্কটা একটু অন্যরকম। রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলো যত বেশি নিজেদের মধ্যে বিরোধিতা করবে তারা তত বেশি বিপদে পড়বে। যদিও মমতা রাজ্যের বামপন্থী ও কংগ্রেস নেতাদের আমন্ত্রণ জানাতে নারাজ, তিনি কিন্তু চাইছেন সোনিয়া গান্ধী স্বয়ং ব্রিগেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত থাকুন।
সোনিয়া যদি ব্রিগেডে উপস্থিত থাকেন তা হলে মমতা দু'ভাবে লাভবান হবেন। প্রথমত, রাহুল গান্ধী ও রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের কাছে বার্তা পৌঁছাবে যে তাঁর উপর হাইকম্যান্ডের আশীর্বাদ রয়েছে। দ্বিতীয়ত, আঞ্চলিক দলগুলোর কাছেও তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত বিজেপি বিরোধী জোটের ফর্মুলা প্রাধান্য পাবে।
সোনিয়া নিজে আসুন বা বদলে অন্য কাউকে পাঠান, সেই উপস্থিতিকে কংগ্রেসের তরফের 'পাকা কথা' হিসাবে ধরে নিলে ভুল করা হবে। এর আগে বহুবার দেখা গিয়েছে যে আঞ্চলিক দলগুলোর নেতানেত্রীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করিয়েও প্রধানমন্ত্রীর আসনের কথা ভেবে শেষ মুহূর্তে পিছু হঠেছে কংগ্রেস।
লম্বা দৌড়ে টিকে থাকতে হলে এই ধরণের ইচ্ছা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে - এই সার সত্যটা বুঝেছেন মমতা। তাই তিনি নিজে থেকে কংগ্রেসের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছেন না। এই মুহূর্তে তাঁর প্রধান লক্ষ্য রাজ্য ও কেন্দ্রে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করা। তাই তো তাঁর মতো 'বিজেপি-বিরোধী' পালক বিশিষ্ট পাখিদের একজোট করে রাখার গুরুদায়িত্ব তাঁর নিজের হাতেই রাখতে হবে।
[সৌজন্যে: মেল টুডে]
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে