অনুপ্রবেশকারী ও শরণার্থীর মধ্যে ফারাক বিস্তর, সেই ফারাকটাই বুঝতে চাইছেন না মমতা
কেন্দ্রীয় সরকার চায় অনুপ্রবেশকারীদের হটাতে, এর সঙ্গে কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই
- Total Shares
যে কোনও রাজনীতি-সচেতন মানুষ অসমের এনআরসি ইতিহাস সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। তাও একবার ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখা যাক।
অসমের সাংসদ রতন চৌধুরী ১৯৫১ সালে লেকসভায় প্রথম এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন যে অসমের ৮০ লক্ষের মতো জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৩ লক্ষ বাংলদেশী অনুপ্রবেশকারী রয়েছেন। এরপর ১৯৭৯ সালে আসু সমগ্র অসম রাজ্য থেকে অনুপ্রবেশকারীদের হঠানোর জন্য আন্দোলন শুরু করে। পরবর্তীকালে এই বিষয় নিয়ে আন্দোলন শুরু করে অসম গণপরিষদ। আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ে।
অবশেষে ১৯৮৫ সালের ১৪ই আগস্ট গভীর রাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর উদ্যোগে সই হয় অসম অ্যাকর্ড। আর এর সঙ্গে সঙ্গেই ছেদ পরে রক্তক্ষয়ী অসম আন্দোলনের। এই সমঝতাপত্র সইয়ের পর কোনও এক অজানা কারণে এই অ্যাকর্ডের যে অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্তকরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।
এনআরসি খসড়া বিজেপির নির্দেশে তৈরি হয়নি
অবশেষে ২০০৫ সালে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থে মামলা আর সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশের এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া তৈরি হল। আর, এই খসড়াকে কেন্দ্র করেই বিতর্ক সৃষ্টি।
একটু ভুল বলা হল। খসড়াকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সৃষ্টি করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সরাসরি বিজেপিকে আক্রমণ করে বসলেন। কিন্তু কেন করলেন তাও ঠিক বোধগম্য হল না। অসম অ্যাকর্ড সই হয়েছিল রাজীব গান্ধীর জমানায়। আর তা সম্পন্ন না হওয়ায় একটি জনস্বার্থ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এই খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজেপি কোথা থেকে এল?
এত গেল বিতর্কের একটা দিক। এই বিতর্কের অন্য একটি দিকও রয়েছে।
অনুপ্রবেশকারী আর শরণার্থীর মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। আর এই ফারাকটাই খুব সম্ভবত ভুলে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাষ্ট্রপুঞ্জের চার্টারে কারা করা শরণার্থী তা নিয়ে পরিষ্কার ভাবে বলা আছে। কোনও দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যদি ধর্মীয় কারণে, এমনকি সামাজিক কারণে, প্রাণ বাঁচাতে নিজের দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয় তাহলে তাঁদের শরণার্থী হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে। কিন্তু কেউ যদি জোর করে অন্য দেশে প্রবেশ করেন তাহলে তাঁরা অনুপ্রবেশকারী। এর সঙ্গে কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই।
অনুপ্রবেশকারী ও শরণার্থীর মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে
কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু বাঙালি বা মুসলমান আবেগকে হাতিয়ার করে এনআরসি নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করছেন। আমি আগেই বলেছি যে এনআরসি তালিকা তৈরির পিছনে বিজেপি সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। আর অন্য যে কোনও শরণার্থী বা অনুপ্রবেশকারী বিষয়তেও বিজেপির মুসলমান বিরোধী কোনও নীতি নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিটা খুব পরিষ্কার। ২০১৬ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের খসড়া দেখলেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে, যেখানে পরিষ্কার করে বলা আছে, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আগত সকল হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, চাকমা, খ্রিস্টান পারসিদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এঁরা ওই সব দেশগুলিতে সংখ্য়ালঘু।
অনুপ্রবেশকারী হটাও আর শরণার্থীদের আশ্রয় দাও। এর সঙ্গে কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের কোনও সম্পর্কে নেই। জানি না অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কী লাভ হচ্ছে। কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার, এই বিতর্ক সৃষ্টি করে বাংলার মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারবেন না তিনি।
তাই আমি পরামর্শ দেব, সাংবিধানিক পদে রয়েছেন এমন একজন যেন এই ধরণের স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে অহেতুক পরিস্থিতি জটিল না করেন।